Saturday, October 3, 2015

‘তাকভীয়াতুল ঈমান’ কিতাবের কতিপয় বাতিল আক্বিদা এবং তাঁর জবাব

এক নজরে ‘তাকভীয়াতুল ঈমান’ কিতাবের কতিপয় বাতিল আক্বিদা ও তার পাশাপাশি সংক্ষেপে সুন্নী আক্বিদা নিম্নে প্রদত্ত হলো-

বাতিল আক্বিদা- ০১

‘হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বড় ভাই সুতরাং তাঁকে বড় ভাইয়ের ন্যায় সম্মান করতে হবে।’ (নাউজুবিল্লাহ)
(তাকভীয়াতুল ঈমান- ৬০ পৃষ্ঠা)

ইসলামী আক্বিদা- ০১

সৃষ্টির সেরা আশরাফুল মাখলুকাত মানব জাতির মধ্যে আম্বিয়ায়ে কেরামের মর্যাদা সর্বোচ্চ।আর আম্বিয়ায়ে কেরাম ও আল্লাহ তায়ালা সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে আমাদের নবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হচ্ছেন সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী।
উম্মতের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক হলো তিনি স্বীয় উম্মতের দ্বীনি পিতা।এ প্রসঙ্গে শাহ আব্দুল আজিজ মোহাদ্দিসে দেহলভী (আলাইহির রহমত) তদীয় ‘তুহফায়ে ইসনা আশারিয়া’ উর্দূ ৪২৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে-

‘আল্লাহর হাবীবকে বড় ভাইয়ের মত সম্মান করতে হবে,এ ধরনের হীন উক্তি করা কুফুরি।’ (তাফসিরে সাভী, তাফসিরে মাদারিক)

বাতিল আক্বিদা- ০২

‘ইহা ও দৃঢ়ভাবে জেনে লওয়া দরকার যে,প্রত্যেক মাখলুক বা সৃষ্টি বড় হউক বা ছোট হউক আল্লাহর শানের সম্মুখে চামার হতেও নিকৃষ্ট।’ (নাউজুবিল্লাহ) (তাকভীয়াতুল ঈমান- ১৪ পৃষ্ঠা)

উপরোক্ত বক্তব্য দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো- প্রত্যেক মাখলুক বা সৃষ্টি বড় হোক বা ছোট হোক এর মধ্যে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও শামিল রয়েছেন।কারণ তিনিতো আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে সব চাইতে বড় বা আশরাফুল মাখলুকাত।
অপরদিকে চামার হচ্ছে মাখলুক বা সৃষ্টির মধ্যে নিকৃষ্ট।ইসমাইল দেহলভী আল্লাহর হাবীব (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে আল্লাহর শানের সম্মুখে চামার অপেক্ষা (জলিল) বা অপমানিত বলে উল্লেখ করেছে। (নাউজুবিল্লাহ)

ইসলামী আক্বিদা- ০২

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মর্যাদা আল্লাহর কাছে সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে অতুলনীয়,তাঁকে কোন প্রকার নীচক অর্থবোধক শব্দ দিয়ে উপমা দেওয়া কুফুরি। (আকাইদ গ্রন্থ)
আল্লাহর কালাম-ইজ্জত বা সম্মান আল্লাহর জন্যেও তাঁর রাসূলের জন্যে এবং মুমিনের জন্য রয়েছে।যারা মুনাফিক তারা আল্লাহ,রাসূল ও মুমিনগণের ইজ্জত সম্মন্ধে একেবারেই অজ্ঞ।(আল কোরআন)

বাতিল আক্বিদা- ০৩

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মিথ্যা উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন-
‘আমিও একদিন মরে মাটির সাথে মিশে যাবো।’ (নাউজুবিল্লাহ) তাকভীয়াতুল ঈমান- ৬১ পৃষ্ঠা)

মৌলভী ইসমাইল দেহলভীর এ বক্তব্য দ্বারা আল্লাহর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে,হায়াতুন নবী  বা জিন্দা নবী তা সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করা হয়েছে।

ইসলামী আক্বিদা- ০৩

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বশরীরে ও স্বপ্রাণে জীবিত আছেন।এমনকি সমস্ত নবীগণ ও স্বশরীরে জীবিত আছেন। নবীগণের ওফাতশরীফের পর (দেহ মোবারক হতে রূহ মোবারক পৃথক হওয়ার পর) তাঁদের রূহ মোবারককে দেহ মোবারকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।) পূর্বের ন্যায় নবীগণ স্বশরীরে জিন্দা রয়েছেন।সকল নবীগণকে তাঁদের রওজাশরীফ হতে স্বশরীরে বের হওয়ার অনুমতি প্রদান করা হয়েছে।সকল নবীগণ আসমান ও জমিনের সর্বত্র পরিভ্রমণ করে ‘তছররফ’ বা বিপদগ্রস্থ উম্মতের বিপদে ক্ষমতা প্রয়োগ করে তাদের বিপদ থেকে উদ্ধার করে দেওয়ার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে।
যেহেতু আমাদের চোখে পর্দা দেওয়া হয়েছে,এ কারণে আমরা আল্লাহর হাবীবকে দেখতে পারি না।যার চোখ থেকে আল্লাহ তায়ালা পর্দা উঠিয়ে নিবেন,সে আল্লাহর হাবীবকে দেখতে সক্ষম হবেন।এতে কোন প্রতিবন্ধকতা নেই।(আল হাবী লিল ফাতাওয়া, তাফসিরে রূহুল মায়ানী)

বাতিল আক্বিদা- ০৪

‘হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে স্বীয় উকিল ও সুপারিশকারী বলে আক্বিদা পোষণ করা (অর্থাৎ আল্লাহর হাবীব উম্মতকে শাফায়াত করবেন বলে আক্বিদা রাখা) কুফুরি এবং আল্লাহর রাসূলকে আল্লাহর বান্দা ও তাঁর সৃষ্টি বলে আক্বিদা রেখেও যদি কেহ আল্লাহর হাবীবের কাছে সুপারিশ বা শাফায়াত তলব করে সে আবু জেহেলের মত মুশরিক হবে।’ (নাউজুবিল্লাহ) (তাকভীয়াতুল ঈমান- ৮ পৃষ্ঠা)

ইসলামী আক্বিদা- ০৪

কিয়ামত দিবসে আল্লাহর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোনাহগার উম্মতের জন্য আল্লাহর দরবারে শাফায়াত বা সুুপারিশ করবেন।
শরহে আক্বাইদে নাসাফী নামক কিতাবের ৮২ পৃষ্ঠা (পুরাতন ছাপা ১১৪-১১৫ পৃষ্ঠা নতুন ছাপা) উল্লেখ রয়েছে-

‘রাসূলগণ (আলাইহিমুস সালাম) এবং নেককার বান্দাদের জন্য শাফায়াতের ক্ষমতা (কোরআন সুন্নাহ দ্বারা) প্রমাণিত।তাঁদের শাফায়াত কার্যকর হবে সে সব ঈমানদারের পক্ষেও যারা, কবিরা গুনাহে লিপ্ত হয়েছিল।(এটাই হচ্ছে সর্বজন স্বীকৃত অভিমত) এর বিরোধিতা করে ছিল ভ্রান্ত মু’তাজিলা সম্প্রদায়ের লোকেরা।’

আল্লাহর হাবীবের ফরমান- আমার শাফায়াত হবে,আমার উম্মতের মধ্যে যারা বড় বড় গোনাহগার তাদের জন্য। (মিশকাত শরীফ- ৪৯৪ পৃষ্ঠা, তিরমিজি,আবুদাউদ,ইবনে মাজাহ)

উল্লেখ্য যে,শাফায়াত সংক্রান্ত হাদীসসমূহ অর্থের দিক দিয়ে মুতাওয়াতির পর্যায়ে গণ্য। (শরহে আকাইদে নাসাফী- ৮২ পৃষ্ঠা)।

বাতিল আক্বিদা- ০৫

‘আল্লাহ তায়ালা যখন ইচ্ছা করেন, তখনই গায়েব সম্বন্ধে অবগত হয়ে যান,এটা আল্লাহর ছাহেবরই শান বা পজিশন।’ (নাউজুবিল্লাহ)
(তাকভীয়াতুল ঈমান- ২০ পৃষ্ঠা)

ইসলামী আক্বিদা- ০৫

একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই আলেমূল গায়েব।অর্থাৎ স্বত্ত্বাগতভাবে আল্লাহ তায়ালা অসীম ইলমে গায়েবের অধিকারী।তাঁর ইলমে লাজিমও জরুরি,ইখতিয়ারি নয় অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা যখন ইচ্ছা করেন তখনই গায়েব সম্পর্কে অবগত হয়ে যান, আর যখন ইচ্ছা তখন জাহেল থাকেন। (নাউজুবিল্লাহ) এটা আল্লাহ তায়ালার শান-বিরোধী।আল্লাহ তায়ালার ইলিম এক মূহূর্তের জন্যও তাঁর থেকে পৃথক হয় না।

সুতরাং যারা এ আক্বিদা রাখে আল্লাহ তায়ালা যখন ইচ্ছা করেন তখনই গায়েব সম্পর্কে অবহিত হয়ে যান, আর যখন ইচ্ছা জাহেল থাকেন (নাউজুবিল্লাহ) এটা ঈমান বিধ্বংসী কুফুরি আক্বিদা।

মোদ্দাকথা হলো- যদি কেহ আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে তাঁর প্রকৃত শান বিরোধী কথা বলে অথবা আল্লাহ তায়ালাকে জাহিল অথবা অপারগ অথবা আল্লাহ তায়ালার শানে ত্র“টিপূর্ণ কোন শব্দ প্রয়োগ করে সে কাফের হবে। (আলমগীরি, ২/২৫৮ পৃষ্ঠা, বাহরুর রায়েক - ৫/১২৯ পৃষ্ঠা)।

বাতিল আক্বিদা- ০৬

‘রোজী রোজগারে ফরাগত বা সংকীর্ণ করা,শরীর সুস্থ বা অসুস্থ করা, অগ্রগামী বা পশ্চাৎগামী করা, অভাবমুক্ত করা,বিপদ দুরিভূত করা, কষ্ট লাঘব করা,ইত্যাদি সব আল্লাহর মতাধীন।কোন নবী,ওলীর এ ক্ষমতা নেই।যদি কেউ আল্লাহ ভিন্ন অন্য কাউকে এ ধরণের ক্ষমতার অধিকারী মনে করে এবং ওর থেকে উদ্দ্যেশাদি পূরণের প্রার্থনা করে এবং কোন বিপদ মূহূর্তে ওকে ডাকে,তাহলে সে মুশরিক হয়ে যাবে।
সে ওকে ঐ সব কাজের স্বয়ং ক্ষমতাবান মনে করুক অথবা খোদাপ্রদত্ত মতার অধিকারী মনে করুক,উভয় অবস্থায় এটা শিরিক।’ (নাউজুবিল্লাহ)
(তাকভীয়াতুল ঈমান-১০ পৃষ্ঠা)

ইসলামী আক্বিদা- ০৬

মোহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব নজদীর দোসর জালিম ইসমাইল দেহলভী যদি এভাবে বলতো আল্লাহ ছাড়া কাউকে নিজস্ব ক্ষমতায় ক্ষমতাবান বলে আক্বিদা রাখা এবং নিজস্ব ক্ষমতায় বিপদগ্রস্থ,অসুস্থদের বিপদ দুরিকরণের ক্ষমতা আছে বলে আক্বিদা পোষণ করা কুফুরি ও শিরিক তাহলে ইসলামের দৃষ্টিতে তার বক্তব্য সঠিক হতো।
এরূপ বদ আক্বিদা কোন মুসলমানদের নেই।মুসলমানদের আক্বিদা হলো আল্লাহ তায়ালা নিজস্ব ক্ষমতায় ক্ষমতাবান এবং নবীগণ ও আউলিয়ায়ে কেরামগণ খোদাপ্রদত্ত ক্ষমতায় ক্ষমতাবান,তাদের নিজস্ব কোন ক্ষমতা নেই।

এর মধ্যে আপত্তিকর কথা হলো খোদাপ্রদত্ত ক্ষমতাবলে নবীগণ, আউলিয়ায়ে কেরামগণ মানুষের বিপদমুক্তি করতে পারেন,বিপদমুক্তি করে থাকেন এবং এ আক্বিদাকে শিরিক বলে ফতওয়া প্রদান করা তার চরম গোমরাহী ও কুফুরি।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তায়ালা কালামে পাকে নিজেই এরশাদ করেন-  اغنهم الله ورسوله من فضله  আল্লাহ ও তাঁর রাসূল নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে ধনাঢ্য করেছেন।

এখানে আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর নিজস্ব ক্ষমতাবলে তাদেরকে ধনাঢ্য করলেন এবং তাঁর রাসূল খোদাপ্রদত্ত ক্ষমতাবলে তাদেরকে ধনবান করলেন।আল্লাহ ছাড়া নবী ও ওলীগণ খোদাপ্রদত্ত ক্ষমতাবলে মানুষের বিপদমুক্তি করতে পারেন।

বাতিল আক্বিদা- ০৭

‘কেউ যদি জিজ্ঞাসা করে,অমুক বৃক্ষের কত পাতা বা আসমানে কত তারা? এর উত্তরে যে এ রকম বলা না হয় যে আল্লাহ ও রাসূল তা জানেন। কেননা গাইবের কথা একমাত্র আল্লাহই জানেন,রাসূল কি-ই-বা জানেন?।’(নাউজুবিল্লাহ)
(তাকভীয়াতুল ঈমান- ৫৮ পৃষ্ঠা)

ইসলামী আক্বিদা- ০৭

আল্লাহ আলিমূল গায়েব বা সমূহ অসীম অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী তিনি তাঁর মনোনীত রাসূল ব্যাতিত অন্য কারো কাছে তাঁর নিজস্ব গায়েব প্রকাশ করেন না। (আল কোরআন)

সুতরাং ‘আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তায়ালা তাঁর হাবীবকে যতোটুকু ইলমে গায়েব দান করেছেন, নিশ্চয়ই হাবীবে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ততটুকু গায়েবের জ্ঞান সম্পর্কে অবহিত আছেন।’ (মিরকাত- ৩/৪২০ পৃষ্ঠা)

‘আল্লাহর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কতেক গায়েবের জ্ঞান রাখেন। গায়েবের জ্ঞান সম্বন্ধে অবহিত থাকা নবীর মু’জিযা।’ (তাফসিরাতে আহমদীয়া- ৩৩৭ পৃষ্ঠা)

‘আল্লাহর হাবীব নিজেই এরশাদ করেন- আমি মা কানা ওমা ইয়াকুনু অর্থাৎ যা কিছু হয়েছে এবং ভবিষ্যতে যা কিছু হতে থাকবে সমুদয় বস্তুর জ্ঞান আমি রাখি।কারণ নূরনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমগ্র সৃষ্টি জগতের স্বাক্ষী।’ (তাফসিরে রুহুল বয়ান- ৯/১৮ পৃষ্ঠা)

আল্লাহ আজ্জা ওয়াজাল্লা তাঁর হাবীব নূর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সব কিছুর বয়ান শিক্ষা দিয়েছেন।অর্থাৎ অতীতে যা কিছু হয়েছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু হতে থাকবে আউয়ালীন ও আখেরীন সব কিছুর সম্পর্কে অবহিত করেছেন।(তাফসিরে মুয়ালিমুত তানজিল- ৪/১১৬ পৃষ্ঠা)

আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তায়ালা তাঁর হাবীবকে উলুমে খামসা বা পঞ্চ বিষয়ের কিয়দাংশ জ্ঞান দান করেছেন।
অর্থাৎ (১) কিয়ামত কখন হবে। (২) বৃষ্টি কখন বর্ষণ হবে। (৩) মায়ের গর্ভের বাচ্চা নেককার না বদকার। (৪) আগামী কল্য কে কি অর্জন করবে। (৫) কে কোথায় মৃত্যুবরণ করবে)। কিন্তু তাঁকে (আল্লাহর হাবীবকে সেগুলো গোপন রাখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ (তাফসিরে সাভী- ৩/২৬০ পৃষ্ঠা)

‘মূল্লা আলী ক্বারী রাদিয়াল্লাহু আনহু فعلمت ما فى السموت والارض এ হাদীসের ব্যাপক ব্যাখ্যা দিতে দিয়ে লিখেছেন- অর্থাৎ যেভাবে আল্লাহ তায়ালা হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে সপ্ত আকাশ সপ্ত জমিনের সব কিছু দেখিয়েছেন এবং সব কিছু কাশফ বা খুলে দিয়েছেন ঠিক তেমনি হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য গায়েবের দরজাসমূহ খুলে দিয়েছেন।’ (মিরকাত- ১/৪৬৩ পৃষ্ঠা)

আল্লামা শেখ আব্দুল হক্ব মোহাদ্দিসে দেহলভী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন এ হাদীস শরীফের এবারত দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো সপ্ত আকাশ সপ্ত জমিনের মধ্যে যা কিছু রয়েছে এর জুজী ও কুল্লী জ্ঞান আল্লাহর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাভ করেছেন।অর্থাৎ ছোট থেকে ছোট এবং বড় থেকে বড় সব কিছুর জ্ঞান প্রাপ্ত হয়েছেন এবং ঐ সব কিছু তার এহাতা বা আয়াত্বাধীন রয়েছে। (আশিয়াতুল লোমআত শরহে মিশকাত- ১/৩৩৩ পৃষ্ঠা)

তিনি আরো বলেন- হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল বিষয় সম্পর্কে অবহিত।হাবীবে খোদা আল্লাহর জাত,আল্লাহর বিধি-বিধান তাঁর গুণাবলী,তাঁর নাম,কর্ম ও ক্রিয়াদি এবং আদি অন্ত জাহের বাতেন সমস্ত জ্ঞানের পরিবেষ্টন করে রেখেছেন।’ (মাদারিজুন নবুয়ত-১/৩ পৃষ্ঠা)

বাতিল আক্বিদা- ০৮

(তাকভীয়াতুল ঈমান- ১৫ পৃষ্ঠা)

ف یعنی جتنے پیغمبر آ‌ۓ ہیں سو اللہ کی طرف سے یہی حکم لاۓ ہیں کہ اللہ کو مانے اور اسکے سواے کسی کونہ مانے-
অর্থ: দুনিয়াতে যতো পয়গাম্বর এসেছেন,তারা আল্লাহর পক্ষ হতে এ হুকুমই নিয়ে এসেছিলেন যে, আল্লাহকে মানো (মান্য কর) আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে মানবে না। (মান্য করবে না)

বাতিল আক্বিদা- ০৯

(তাকভীয়াতুল ঈমান- ১৮ পৃষ্ঠা)
اللہ کے سوا کسی کونہ مان
অর্থ: আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে মানিও না। (মান্য করিও না)।

বাতিল আক্বিদা- ১০

(তাকভীয়াতুল ঈমান- ৭ পৃষ্ঠা)
اور ونکو ماننا محض خبط ہے-
অর্থ: আল্লাহ ছাড়া অন্যকে মান্য করা অকেজো।

উল্লেখ্য যে,ইসমাঈল দেহলভীর উপরোক্ত ৮, ৯, ১০ নং বক্তব্য দ্বারা সকল আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম এবং সকল ফেরেশতাগণ আলাইহিমুস সালাম এমন কি কিয়ামত,জান্নাত ও জাহান্নাম সহ সকল ঈমানী বস্তুসমূহ মানিয়ে নিতে স্পষ্টভাবে অস্বীকৃত বা এনকার করা হয়েছে এবং ইহার ইফতেরা বা তহমত আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূলগণের উপরই অর্পণ করা হয়েছে।

এ কুফুর সংক্রান্ত বক্তব্য শতশত কুফুরিকে সমষ্টিগতভাবে বুঝানো হয়েছে।
মুসলমানগণের মাযহাব বা আক্বিদার মধ্যে যেমন আল্লাহ তায়ালাকে মানা বা তাঁর উপর ঈমান আনয়ন করা জরুরি বা ফরয তেমনি উপরে বর্ণিত সকল বস্তুকে,মানা বা সকল বস্তুর উপর ঈমান আনয়ন করা ঈমানেরই অঙ্গ।এ সমস্ত ঈমানী বস্তুসমূহের মধ্যে যে কোন একটি বস্তুকে অমান্য বা একটির উপরও ঈমান আনয়ন না করলে কাফের হবে।

উল্লেখ্য যে, উর্দু ভাষাবিদগণ অবগত আছেন যে, (ماننا) মান্না (তাছলিম) বা সমর্থন করা। ‘কবুল’ বা গ্রহণ করা এবং ‘এতেকাদ’ বা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করার ব্যাপারে প্রয়োগ হয়ে থাকে। অর্থাৎ ‘মান্না’ শব্দের অর্থ ‘তাছলিম’ ‘কবুল’ ও বিশ্বাস করার নামান্তর।

সুতরাং উর্দু ভাষাবিদগণ ‘ঈমান’ শব্দের অর্থ ‘মান্না’ এবং ‘কুফর’ শব্দের অর্থ  ‘না মান্না’ ব্যবহার করে থাকেন।

মোদ্দাকথা হলো ইসমাইল দেহলভীর বক্তব্য (اللہ کے سوا کسی کو نہ مان) আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে মানিও না অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো উপর ঈমান আনিও না। (নাউজুবিল্লাহ) এতে নবীগণ, ফেরেশতাগণসহ যাদেরকে মানা বা বিশ্বাস করা ঈমানের অঙ্গ।তাদের উপর ঈমান না আনার জন্য নির্দেশ দিয়ে মুসলিম সমাজকে ঈমান হারা করার পায়তারা চালাচ্ছে। আল্লাহপাক যেন এ প্রকার কুফুরি থেকে ঈমানদারগণের ঈমানকে হেফাজত করেন। আমীন।

জ্ঞাতব্য বিষয় এই যে, মৌলভী ইসমাঈল দেহলভী, শাহ ওলী উল্লাহ মোহাদ্দিসে দেহলভী (আলাইহির রহমত) এর পৌত্র এবং শাহ আব্দুল আজিজ মোহাদ্দিসে দেহলভী ও শাহ আব্দুল কাদির মোহাদ্দিসে দেহলভী (আলাইহির রহমত) উভয়ের আপন ভ্রাতুষ্পুত্র। শাহ আব্দুলগণি (আলাইহির রহমত) এর পুত্র।
উল্লেখ্য যে, শাহ আব্দুল কাদির (আলাইহির রহমত) তদীয় ‘মাউজুহুল কোরআনে’ ঈমানের তরজমা করেছেন ‘মান্না’ এবং কুফুরের তরজমা করেছেন ‘না মান্না’।

নিম্নে কয়েকখানা আয়াতে কারীমা ও এর সাথে সাথে ‘মাউজুহুল  কোরআন’ এর তরজমা পেশ করা হলো-

আয়াতে কারীমা-১

(বাকারা ৬ নং আয়াত)
ءانذرتهم ام لم تنذرهم لا يِؤمنون
শাহ আব্দুল কাদির মোহাদ্দিসে দেহলভী (আলাইহির রহমত) তদীয় ‘মাউজুহুল কোরআনে’ উপরোক্ত আয়াতে কারীমার তরজমা করেছেন- وتو ڈراوے یانہ ڈراوے وے نہ ماکیں گے 
অনুবাদ: আপনি তাদেরকে ভীত প্রদর্শন করুন কিংবা ভীতি প্রদর্শন না-ই করুন তারা মানবে না।(ঈমান আনবে না)

আয়াতে কারীমা-২

(ইয়াসিন- আয়াত নং ৭)
لقد حق القول على اكثرهم فهم لا يؤمنون
‘মাউজুহুল কোরআনে’ উপরোক্ত আয়াতে কারীমার তরজমা করা হয়েছে
ثابت ہوچکی ہے بات ان بہتوں پر سووہ نہ مانیں
অনুবাদ: অবধারিত হয়েছে, তাদের অধিকাংশের উপর বাণী, সুতরাং তারা মানবে না। (ঈমান আনবে না)

আয়াতে কারীমা-৩

(বাকারা আয়াত নং ৪)
والذين يؤمنون بما انزل اليك
‘মাউজুহুল কোরআনে’ উপরোক্ত আয়াতে কারীমার তরজমা করা হয়েছেمانتے ہیں جو اترا تجھ کو 
অনুবাদ: তারা মানে, যা অবতীর্ণ হয়েছে আপনার প্রতি। (অর্থাৎ ঈমান রাখে)

আয়াতে কারীমা-৪

(আরাফ আয়াত নং ৭২)
وقطعنا دابر الذين كذبوا بايتنا وما كانوا مؤمنين
‘মাউজুহুল কোরআনে’ এ আয়াতে কারীমার তরজমা করা হয়েছে
اور پچھاڑی کاٹی ان کی جو جھٹلاے تھے ہماری آیتین اور نہ تھے ماننے والے
অনুবাদ: ‘যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতো তাদেরকে নির্মুল করেছি, তারা মাননে ওয়ালা ছিল না।’ (অর্থাৎ তারা কাফের ছিল)

আয়াতে কারীমা-৫

(আনআম আয়াত নং ৫৩)
واذا جاءك الذين يؤمنون بايتنا فقل سلام عليكم
‘মাউজুহুল কোরআনে এ আয়াতে কারীমার তরজমা করেছেন-
اور جب آوین تیرے پاس ہماری آیتیں ماننے والے توکھ سلام ہے تم پر
অনুবাদ: আমার আয়াতসমূহকে মান্যকারী যখন আসবে আপনার নিকট, তখন আপনি তাদেরকে বলুন, ছালাম তোমাদের উপর’ মান্নে ওয়ালে (অর্থাৎ ঈমানদার)

আয়াতে কারীমা-৬

(বাকারাহ আয়াত নং ২৮৫)
امن الرسول بما انزل اليه من ربه والمؤمنون كل امن بالله وملئكته وكتبه ورسوله
‘মাউজুহুল কোরআনে’ এ আয়াতে কারীমার তরজমা করেছেন-
مانا رسول نے جو کچھ اترا اسکے رب کی طرف سے اور مسلمانوں نے سب نے مانا اللہ کو اور اسکے فرشتوں کو اور کتابوں کو اور رسولوں کو-
অনুবাদ: রাসূল মেনেছেন, যা তাঁর প্রতিপালকের নিকট থেকে অবতীর্ণ হয়েছে এবং মুসলমানগণও সবাই মেনে নিয়েছেন আল্লাহকে, তাঁর ফেরেশতাগণকে তাঁর কিতাবসমূহকে এবং তাঁর রাসূলগণকে।

আয়াতে কারীমা-৭

(আরাফ, আয়াত নং ৭৬)
قال الذين استكبروا انا بالذى امنتم به كفرون
মাউজুহুল কোরআনে এ আয়াতে কারীমার তরজমা করা হয়েছে-
کھنے لگے بڑائ والے جوتم نے یقین کیا سوہم نہیں مانتے-
অনুবাদ: দাম্ভিকেরা বলল, তোমরা যা একিন করেছ আমরা তা মানি না। (এখানে কুফুরিকে ‘মানি না’ বলা হয়েছে)

মোদ্দাকথা হলো আল্লাহ তায়ালা কালামে পাকে নিজেই এরশাদ করেছেন- ঈমানদারগণ, আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর ফিরেশতাগণ, তাঁর পাঠানো সকল কিতাব, সব রাসূলগণকে মেনেছেন (অর্থাৎ ঈমান এনেছেন)।

অপরদিকে ইসমাইল দেহলভী তার ব্যক্তিমতে বলতেছেন-اللہ کے سوا کسی کو نہ مان (তাকভীয়াতুল ঈমান ১৮ পৃষ্ঠা)

আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে মানিও না অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উপর ঈমান আনিও না। (নাউজুবিল্লাহ) কত বড় গাজাখুরী কথা।তার এ কথা কোরআন-সুন্নাহর সম্পূর্ণ বিরোধী।কারণ ইসমাঈল দেহলভী নজদী চশমা চোখে দিয়ে দিশেহারা হয়ে দুনিয়ার সকল মুসলমানদের উপর কুফর ও শিরিকের ফতওয়া দিয়ে নিজেই ঈমান হারা হয়ে গেছে।

 

No comments:

Post a Comment