Friday, December 25, 2015

সকল ঈদের সেরা ঈদ, ঈদ-এ মিলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)

না’হমাদুহু ওয়া নুসল্লি ওয়া নুসাল্লিমু ’আলা রাসূলিহিল কারীম। আম্মা বা’দ, বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম। সবাইকে সেরা ঈদ তথা পবিত্র মীলাদুন্নবীর (’আলাইহিস সলাতু ওয়াস সালাম) মুবারকবাদ। ঈদ মুবারক। এ পবিত্র দিনে রহমাতুল্লিল ’আলামীন সায়্যিদুনা মুহাম্মাদ মুস্তাফা আহমাদ মুজতবা (সল্লাল্লাহুতা’লা ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা শরীফে তাশরীফ আনেন। মীলাদুন্নবী ও ওফাতুন্নবীর তারিখ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তবে, ১২ই রবিউল আউয়ালই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও বহুল প্রচারিত তারিখ। অবশ্য ওফাতুন্নবীর তারিখ নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন, বরং মীলাদুন্নবীর চেয়ে ওফাতুন্নবীর তারিখ নিয়ে বেশি মতবিরোধ রয়েছে; যদিও এ মতভেদ মীলাদুন্নবী উপদযাপনে কোনোই বাধা নয়; যেমনটি লাইলাতুল কদরের ক্ষেত্রেও হয়ে থাকে। কেউ অন্য কোনো তারিখ প্রাধান্য দিয়ে মীলাদুন্নবী উদযাপন করলেও কোনো বাধা নেই। মীলাদুন্নবী উদযাপন করা সুন্নত। নবীজী রোজা রেখে এবং বিভিন্ন সাহাবী নানাভাবে এ অনুষ্ঠান উদযাপন করেছেন। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে মীলাদ ও কিয়াম মাহফিল, জুশনে জুলুস, না’তের আসর, জিয়াফত, দায়-খয়রাত ইত্যাদির মাধ্যমে মীলাদুন্নবী উদযাপিত হয়ে থাকে।

কুরআন মজীদ ও হাদীছ শরীফে ঈদে মীলাদুন্নবী উদযাপনের ব্যাপারে অর্থবহ ইঙ্গিত রয়েছে। যেমন-

বলুন: আল্লাহর ফযল (দয়া) ও রহমতের (মেহেরবানী) ব্যাপারে তাদের আনন্দ-উৎসব করা উচিত। আর এটা তাদের কাছে যা কিছু রয়েছে - তা থেকেও উত্তম (সূরা ইউনূস: ৫৮)।

এ হুকুম আম বা সাধারণ তথা যে কোনো নিয়ামতের বেলায় প্রযোজ্য। অথচ ভণ্ড মৌলভীরা এ হুকুমকে খাস বলে প্রচার করে এ আয়াতে কারীমার অপব্যাখ্যা করে থাকে!

যেহেতু, হুজুরে পুরনূর (সল্লাল্লাহুতা’লা ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহুতা’লার সেরা রহমত, ফযল ও নিয়ামত - সেহেতু, বহু সুন্নী বরেণ্য আলেম যেমন- ইমাম কাস্তাল্লানী শাফিয়ী তাঁর আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়ায়, ইমাম ফাসী মালিকী তাঁর শারহুল কুরতুবিয়ায়, আল্লামা মুহাম্মাদ দুসুকী মালিকী তাঁর হাশিয়াতুদ দারদীরে, আল্লামা আল-খারাশী মালিকী তাঁর শারহুল খারাশীতে, আল্লামা সাওভী মালিকী তাঁর বুলগাতুস সালিক লি আক্বওয়াইল মাসালিকে, আল্লামা মুহাম্মাদ ইবনে আহমাদ মালিকী তাঁর আদ-দুররুল ছামীনে, ইমাম বারজাঞ্জী শাফিয়ী তার মাওলিদু বারজাঞ্জীতে প্রমুখ (’আলাইহিমুর রহমাহ) মীলাদুন্নবীকে “ঈদ” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। সুতরাং মীলাদুন্নবীকে “ঈদ” হিসেবে আখ্যায়িত করাটা ওলামায়ে দ্বীনেরই সিদ্ধান্ত। তদুপরি, মোল্লা আলী আল-ক্বারী হানাফী ইমাম সাখাভী শাফিয়ীর বরাতে উল্লেখ করছেন: “মক্কাবাসীর কাছে নবীজীর জন্মদিনের গুরুত্ব ঈদের চেয়েও বেশি ছিলো।” (আল-মাওরাদুর রাভী ফী মাওলিদিন নবী) বিখ্যাত সূফী ও আরেফবিল্লাহ আলিম শাইখ আব্দুল আজীজ দাব্বাগ (কুদ্দিসা সিররুহুল আঝীজ) বলেছেন: “নেককার ও সূক্ষ্মদর্শী আলেমগণ সকল ধর্মীয় ও জাগতিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের চেয়েও তাতে (মীলাদুন্নবীর প্রতি) বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন (আল দুররুল মাসূন ফী যিকরি মাওলিদুন নবীয়িল মা’মূন)। আল-কুরআন এবং সহীহ, হাসান, জঈফ - যে কোনো সনদের হাদীছে মীলাদুন্নবী উদযাপনে কোনোই নিষেধাজ্ঞা নেই। কাজেই, যারা এতে নিষেধ করে - ওরা দুশমনে রাসূল, আহলে ইবলিশ ও জাহেল। মীলাদুন্নবীকে সেরা ঈদ হিসেবে উদযাপন করাটা যেহেতু কোনো সুন্নতকে আঘাত করে না - সেহেতু, এটি মন্দ বিদয়াত হওয়ারও কোনোই সম্ভবনা নেই।

কিছু অজ্ঞ আপত্তি করে: “সাহাবায়ে কেরাম মীলাদুন্নবী উদযাপন করেননি কেন? পরবর্তীকালে যারা তা করেছেন - তাঁরা কি তাঁদের চেয়েও বড় আশেকে রাসূল?” এর দু’টি উত্তর রয়েছে।

প্রথম উত্তর: খোলাফায়ে রাশেদীন (রিদ্বওয়ানুল্লাহিতা’লা ’আলাইহিম) মীলাদুন্নবীর ফযীলত বর্ণনা করে মানুষকে তা উদযাপনে উৎসাহিত করেছেন। যেমন- বিখ্যাত মুহাদ্দিছ ইমাম ইবনে হাজার হাইতামী শাফিয়ী মাক্কী (’আলাইহির রহমাহ) তাঁর আন-নি’মাতুল কুবরা আলাল আ’লাম ফী মাওলিদি সায়্যিদিল উলদি আযম কিতাবে বর্ণনা করেছেন:

১। হযরত আবূ বকর সিদ্দিক (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহু) বলেন: কেউ নবীজীর (সল্লাল্লাহুতা’লা ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মীলাদ শরীফ পড়তে এক দিরহাম খরচ করলে, সে বেহেশতে আমার সাথী হবে!

২। হযরত উমার ফারূক (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহু) বলেন: কেউ নবীজীর (সল্লাল্লাহুতা’লা ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মীলাদ শরীফকে সম্মান করলে, সে যেনো ইসলামকে জিন্দা করলো!

৩। হযরত উছমান যুন্নুরাঈন (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহু) বলেন: কেউ নবীজীর (সল্লাল্লাহুতা’লা ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মীলাদ শরীফ পড়তে এক দিরহাম খরচ করলে, সে যেনো বদর ও হুনাইনের যুদ্ধে শরীক হলো!

৪। হযরত আলী মুর্তজা (কাররামাল্লাহুতা’লা ওয়াজহাহুল কারীম) বলেন: কেউ নবীজীর (সল্লাল্লাহুতা’লা ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মীলাদ শরীফকে সম্মান করলে এবং মীলাদ শরীফ পড়ার ব্যবস্থা করলে,  সে ঈমান না নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় হবে না এবং বিনে হিসাবে বেহেশতে যাবে!

কোনো কোনো সাহাবী মীলাদুন্নবী উদযাপনও করেছেন। যেমন- আল্লামা হাফিয আবূল খাত্তাম উমার ইবনে হাসান ইবনে দাহইয়া আল-কালবী (’আলাইহির রহমাহ) তাঁর আত-তানভীর ফী মাওলিদিল বাশিরিন নাযীরে লিখেছেন:

হযরত ইবনে আব্বাস (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহু) বর্ণনা করেন, একদিন তিনি তাঁর ঘরে নবীজীর (সল্লাল্লাহুতা’লা ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিলাদত শরীফের ঘটনা আলোচনা করছিলেন। তখন নবীজী (’আলাইহিস সলাতু ওয়াস সালাম সেখানে এসে) ফরমালেন: তোমাদের জন্যে আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেলো!

হযরত আবূ দারদা (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহু) বর্ণনা করেন, একদিন তিনি নবীজীর (সল্লাল্লাহুতা’লা ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে আমির আনসারীর বাড়ীতে গেলেন। তিনি তখন তাঁর সন্তান-সন্তনি ও ঘনিষ্ঠদের নবীজীর (সল্লাল্লাহুতা’লা ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মীলাদ শরীফের ঘটনা শিখাচ্ছিলেন এবং বলছিলেন: আজ সেদিন! আজ সেদিন!! তখন নবীজী (সল্লাল্লাহুতা’লা ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফরমালেন: আল্লাহ তো তোমার জন্যে রহমতের দরজাগুলো খুলে দিয়েছেন, ফেরেশতারা তোমার জন্যে মাগফিরাত কামনা করছে এবং যারা তোমার মতো আমল করবে, তারা তোমার মতোই নাজাত পাবে!

ইবনে দাহইয়া ও ইবনে হাজার হাইতামী উভয়ই বিখ্যাত মুহাদ্দিছ ছিলেন এবং এসব হাদীছ শরীফ বণর্না করে এগুলোর সনদ চ্যালেঞ্জ করেননি। অথচ সনদে কোনো ত্রুটি থাকলে - তা বর্ণনা করাটা মুহাদ্দিছীনে কেরামের নৈতিক দায়িত্ব। তদুপরি, আল্লামা ইউসূফ নাবহানী শাফিয়ীও তাঁর জাওয়াহিরুল বিহারে এসব বর্ণনাগুলো বিনে সমালোচনায় গ্রহণ করেছেন। সর্বোপরি, যেসব আলিম উল্লিখিত হাদীছ শরীফগুলো তাঁদের কিতাবে বিনে প্রতিবাদে গ্রহণ করেছেন - সেগুলো তাঁদের মতে গ্রহণযোগ্য। তাই, আমাদের কাছেও গ্রহণযোগ্য।

দ্বিতীয় উত্তর: হাঁ, কোনো গায়ের সাহাবীর মর্তবার কখনো কোনো সাহাবীর সমান হতে পারবে না বটে। কিন্তু তাঁদের চেয়েও নবীজীকে বেশি ভালোবাসা, তাঁর প্রিয়পাত্র হওয়া, এমন কি কারো কোনো নেক আমল কোনো সাহাবীর নেক আমলের সমান হওয়াও মরফু হাদীছের আলোকে সম্ভব বৈকি। যেমন-

১। হযরত আবূ হুরাইরা (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহু) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসূল (সল্লাল্লাহুতা’লা ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফরমান: আমার উম্মতের মাঝে আমাকে সেসব লোকই বেশি ভালোবাসবে, যারা আমার (ওফাতের) পরে আসবে! তাঁদের কেউ এমনো আশা করবে যে, যদি সে আমাকে দেখতো, তাহলে আমার জন্যে তার পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদও কুরবানী করে দিতো (মিশকাত: ৬০২৪ ও সহীহ মুসলিম শরীফাঈন)।

২। হযরত আমর ইবনে শুয়াইব (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহু) তাঁর বাবা থেকে এবং তিনি তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন, একদিন আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহুতা’লা ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম (সাহাবীদের) জিজ্ঞেস করলেন: ঈমানের দিক থেকে কোন সৃষ্টি তোমাদের কাছে বিস্ময়কর? তাঁরা বললেন: ফেরেশতারা। তিনি ফরমালেন: তারা কি আর ঈমান না এনে পারে? তারা যে তাদের প্রভুর কাছেই রয়েছে? তাঁরা বললেন: তাহলে, নবীগণ। তিনি ফরমালেন: তাঁরা কি আর ঈমান না এনে পারেন? তাঁদের প্রতি যে ওহী নাযিল হয়? তাঁরা বললেন: তাহলে, আমরা। তিনি ফরমালেন: আমি যেহেতু তোমাদের মাঝে প্রকাশিত রয়েছি - সেহেতু, তোমরাও কি আর ঈমান না এনে পারো? বর্ণনাকারী বলেন, এরপরে আল্লাহর রাসূল (সল্লাল্লাহুতা’লা ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফরমালেন: আমার কাছে ঈমানের দিক দিয়ে ঐ সৃষ্টি বেশি বিস্ময়কর - যে জাতি আমার (ইন্তেকালের) পরে আসবে এবং তারা আসমানী কিতাব (আল-কুরআন) পেয়ে - তাতে বর্ণিত বিধিবিধানের প্রতি ঈমান আনবে (মিশকাত: ৬০২৮ ও ইমাম বায়হাকীর দালায়িলুন নবুয়ত)।

৩। হযরত আব্দুর রহমান ইবনে ’আলা হাদ্বরামী (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহু) বলেন, কেউ আমায় জানিয়েছেন, তিনি নবীজীকে (সল্লাল্লাহুতা’লা ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতে শুনেছেন: এ উম্মতের শেষ পর্যায়ে এমন এক গোষ্ঠী আসবে, যাদের নেক-আমলের সওয়াব তাদের প্রথম যুগের লোকদের (সাহাবায়ে কেরামের) সমান হবে, তারা মানুষজনকে ভালো কাজের আদেশ ও মন্দ কাজ করতে নিষেধ করবে এবং ফেতনাবাজদের সাথে লড়াই করবে (মিশকাত: ৬০২৯ ও ঐ দালায়িলুন নবুয়ত)।

৪। হযরত আবূ উমামা (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহু) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসূল (সল্লাল্লাহুতা’লা ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফরমান: যারা আমায় দেখেছে - তাদের জন্যে (একবার) সুখবর। আর যারা আমায় না দেখে আমার প্রতি ঈমান এনেছে - তাদের জন্যে সাতটি সুখবর (মিশকাত: ৬০৩০ ও মুসনাদে আহমাদ)!

৫। হযরত ইবনে মুহাইরিঝ (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহু) বলেন, একদিন আমি অন্যতম সাহাবী আবূ জুমুয়াকে (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহু) বললাম: আপনি আল্লাহর রাসূলের (সল্লাল্লাহুতা’লা ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছ থেকে শুনেছেন - এমন একটি হাদীছ শরীফ আমায় বলুন? তিনি বললেন: হাঁ; আমি তোমায় চমৎকার একটি হাদীছ বলবো! একদিন আমি আল্লাহর রাসূলের (সল্লাল্লাহুতা’লা ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে খাওয়া-দাওয়া করছিলাম। আবূ উবাইদা ইবনুল জাররাহও (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহু) আমাদের সাথে ছিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন: ওগো আল্লাহর রাসূল! আমাদের চেয়েও উত্তম কেউ আছে কি? কেননা, আমরা আপনার প্রতি ঈমান এনেছি এবং আপনার সাথে থেকে জিহাদ করেছি। তিনি ফরমালেন: হাঁ; তোমাদের পরে এমনি এক গোষ্ঠী আসবে - যারা আমার প্রতি ঈমান আনবে; অথচ তারা আমাকে দেখিনি (মিশকাত: ৬০৩১, মুসনাদে আহমাদ ও সুনানে দারিমী)!

যাহোক, বিধর্মীদের কাছে ইসলাম প্রচার করা মানে হচ্ছে, মূলত তওহীদ ও রিসালাতেরই প্রচার করা তথা ঈমানের দাওয়াত দেওয়া। সুতরাং যখনি আপনি রিসালাত প্রচার করতে যাবেন - তখনি আপনাকে মহানবীর (’আলাইহিস সলাতু ওয়াস সালাম) পারিবারিক বা বংশগত পরিচিতি অবশ্যই তুলে ধরতে হবে কিংবা যদি কোনো বিধর্মী আপনার কাছে তাঁর সম্পর্কে জানতে চায় - তখন কি আপনি তাঁর মীলাদ শরীফ তথা পবিত্র জন্মবৃত্তান্ত বা তাঁর জান্নাতি মা-বাবা-দাদা-পরদাদা (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহুম) বা পবিত্র নসবনামা পেশ না করে পারবেন? তাঁর জন্মস্থান ও জন্মতারিখ কি এড়িয়ে যেতে পারবেন? মোটেও না। আর এ দৃষ্টিকোণ থেকেই মীলাদ শরীফ বর্ণনা বা পালন করাটা ওয়াজিব - যা ওয়াহাবী বা সালাফীরাও অনায়াসে করে থাকে।

সালাফী, দেওবন্দী ও লা মাযহাবীদের জাতির পিতা তথা ওয়াহাবী জাতির জনক ইবনে তাইমিয়া লিখেছে: কিছু লোক মীলাদুন্নবীকে শ্রদ্ধার চোখে দেখেন এবং এটিকে খুশি ও আনন্দের কাজ বলে মনে করেন। এতে নেক-নিয়ত ও আল্লাহর রাসূলের (সল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি সম্মান দেখানোর কারণে বিরাট প্রতিদান রয়েছে - যেমনটি আমি আগেই বর্ণনা করেছি। (ইক্বতিদাউস সিরাতিল মুস্তাকীম ও মজমুয়ায়ে ফাতাওয়া, ২৩তম খন্ড, পৃষ্ঠা ১৬৩)।

ওয়াহাবী মতবাদের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠাতা মুহম্মদ ইবনে আব্দিল ওয়াহাব নজদীর ছেলে আব্দুল্লাহ লিখেছে: “কট্টর কাফির আবূ লাহাব নবীজীর (সল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বেলাদত শরীফে তার দাসী সুয়াইবাকে আজাদ করে দেওয়ায় যদি প্রতি সোমবার তৃপ্তিদায়ক পানীয় পান করতে পারে - তাহলে, মীলাদুন্নবীতে খুশি যারা উদযাপন করে থাকেন, সেসব  তাওহিদী মুসলিমদের কী হবে? (মুখতাসার সীরাতুর রাসূল: ১৩ পৃষ্ঠা, হাফেয আব্দুল গফুর আহলে হাদীছ, ঝীলাম কর্তৃক প্রকাশিত)

শেষ কথা! অন্যান্য ঈদ শুধুই মুসলিম উম্মাহর জন্যে। অমুসলিমরা ওগুলো উদযাপন করলে, কোনোই ফায়দা পাবে না। কিন্তু ঈদে মীলাদুন্নবীর এমনি মহিমা যে, অমুসলিমরাও এটি উদযাপন করে উপকৃত হতে পারে - যেমনি উপকৃত হয়েছিলো আবূ লাহাব। মহান আল্লাহপাক সবাইকে এ সেরা ঈদের হক যথাযথভাবে আদায় করার তওফিক দান করুক। আমিন।

কার্টেন্সি By- Saiful Islam Rubyat

Monday, November 9, 2015

দরূদ-সালাম পাঠ করাকালীন অবস্থায় এ ঈমান রাখবেন যেন হাবিবে খোদা দেখেন ও শুনেন

এ প্রসঙ্গে আল্লামা শেখ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী আলাইহির রহমত তদীয় ‘মাদারিজুন নবুয়ত’ নামক কিতাবের ২/৭৮৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-

ذکر کن اورا ودرود بفرست بروی صلی اللہ علیہ وسلم وباش درحال ذکرگویا حاضراست پیش تودر حالت حیات ومی بینی تو اورا متادب باجلال وتعظیم وہمت وحیا بدانکہ وے صلی اللہ علیہ وسلم می بیند ومی شنود کلام ترا زیراکہ وی متصف است بصفات اللہ تعالی ایکہ از صفات الھی آنست کہ انا جلیس من ذکرنی-
ভাবার্থ: নূর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে স্মরণ করুন,তাঁর প্রতি দরূদ পেশ করুন।আল্লাহর হাবিবের জিকির বা তাঁর প্রতি দরূদ ও সালাম পেশ করার সময় এমনভাবে অবস্থান করুন,যেন তিনি আপনার সামনে হায়াতে জিন্দেগিতে হাজির আছেন, আর আপনি তাঁকে দেখছেন।
সুতরাং দরূদশরীফ পাঠ করাকালীন আল্লাহর হাবিবকে সৃষ্টির মধ্যে সর্বোচ্চ শানের অধিকারী ঈমান রেখে আদব,মর্যাদা ও শ্রদ্ধা অক্ষুন্ন রেখে ভীত ও লজ্জিত থাকুন এবং এ আক্বিদা রাখুন যে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে দেখছেন,আপনার কথাবার্তা শুনছেন।কেননা তিনি খোদার গুণাবলীতে গুণান্বিত। আল্লাহতা’য়ালার একটি গুণ হচ্ছে- আমি (আল্লাহ) আমার জিকিরকারীদের সঙ্গে সহাবস্থান করি।

মুদ্দাকথা হলো আল্লাহর হাবিবের প্রতি দরূদ ও সালাম পেশ করাকালীন অবস্থায় আদবের সাথে হাবিবে খোদার চেহরায়ে আনোয়ারের দিকে খেয়াল করে আদবের সাথে বসে অথবা দাঁড়িয়ে দরূদ ও সালাম পেশ করবেন।

একাদশ শতাব্দীর দশম মুজাদ্দিদ আল্লামা মুল্লা আলী ক্বারী আলাইহির রহমত (ওফাত ১০১৪ হিজরি) তদীয়- مرقاة شرح مشكوة ‘মিরকাত শরহে মিশকাত’ নামক কিতাবের পঞ্চম জিলদের ২৪৫ পৃষ্ঠা باب الحشر ‘বাবুল হাশর’ অধ্যায়ে উল্লেখ করেন-

(ويكون الرسول) اى رسولكم ... والمراد محمد صلى الله عليه وسلم (عليكم شهيدا) اى ... وناظرا لافعالكم ومزكيا لاقوالكم-
ভাবার্থ: হাশরের ময়দানে পূর্বেকার নবীগণের বেঈমান উম্মতগণ তাদের নিকট দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছাননি বলে আল্লাহর দরবারে অভিযোগ উত্তাপন করলে,আল্লাহতা’য়ালা নবীগণকে তাদের দাওয়াত পৌঁছানোর দাবির পক্ষে সাক্ষী পেশ করতে আদেশ করলে নবীগণ হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর উম্মতগণকে সাক্ষী হিসেবে পেশ করবেন।উম্মতে মোহাম্মদীগণ সম্মানিত নবীগণের পক্ষে সঠিকভাবে দাওয়াত পৌঁছানোর সাক্ষ্য প্রদান করলে,আপত্তি উত্থাপন হবে, তোমাদেরকে এ বিষয়ে কে শিক্ষা দিয়েছেন? উত্তরে উম্মতে মোহাম্মদীগণ বলবেন- আমাদের নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এ সংবাদ দিয়েছেন এবং আমরা তা একিন বা বিশ্বাস করে সাক্ষ্য প্রদান করলাম যে,পূর্বেকার নবীগণ উম্মতের নিকট দ্বীনের দাওয়াত সঠিকভাবে পৌঁছিয়েছেন।
উম্মতের এ সাক্ষী প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী নয় বরং শোনা একিনী সাক্ষী।এ হল উম্মতে মুহাম্মদীর شهيد ‘শাহীদ’ বা شهداء ‘শুহাদা’ হওয়ার ভাবার্থ।
আল্লাহতা’য়ালার নূরানী ফরমান- ويكون الرسول عليكم شهيدا নূর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের উপরে অর্থাৎ উম্মতে মুহাম্মদীর সাক্ষীর উপর সাক্ষী। সুতরাং নবীর সাক্ষী হল প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী।

মুল্লা আলী ক্বারী- ويكون الرسول عليكم شهيدا এ আয়াতে কারীমার তাফসিরে বলেন-
ناظرا لافعالكم مزكيا لاقوالكم-
হাবিবে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতের আমলসমূহ দেখেন এবং হাশরের ময়দানে উম্মতের সাক্ষীকে সার্টিফাই করবেন, সঠিক বলে সত্যায়ন করবেন। এককথায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খোদা প্রদত্ত ক্ষমতা বলে উম্মতের আমলসমূহকে দেখেন।

এ আকিদার মাসআলাকে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন দশম শতাব্দীর নবম মুজাদ্দিদ ইমাম জালালউদ্দিন সুয়ুতি আলাইহির রহমত (ওফাত ৯১১ হিজরি) তদীয়- الحاوى للفتاوى ‘আল হাভী লিল ফাতাওয়া’ নামক কিতাবের ২/১৮৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন- النظر فى اعمال امته আল্লাহর হাবিব উম্মতের আমলসমূহকে দেখেন।

মুদ্দাকথা হল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতের আমলসমূহ দেখেন এবং উম্মতের কথাবার্তা শুনেন এ ক্ষমতা নবীকে স্বয়ং আল্লাহতা’য়ালা দান করেছেন।

শায়খুল মুহাদ্দিসীন হযরত শেখ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী আলাইহির রহমত তদীয় اخبار الاخيار مع مكتوبات ‘আখবারুল আখইয়ার মা’য়া মাকতুবাত’ নামক কিতাবের ১৫৫ পৃষ্ঠা পাদটীকায় উল্লেখ করেন-

وباچندیں اختلافات وکثرت مذاھب کہ در علماء امت ست یک کس رادریں مسئلہ خلافی نیست کہ آن حضرت صلی اللہ علیہ وسلم بحقیقت حیات بی شائبہ مجاز وتوھم تاویل دایم وباقی ست وبر اعمال امت حاضر و ناظر و مرطالبان حقیقت را ومتوجھان آنحضرت را مفیض ومربی ست-
উম্মতে মুহাম্মদীর উলামাদের মধ্যে অনেক মতপার্থক্য ও মাযহাবের আধিক্য সত্ত্বেও এ মাসআলায় কারো দ্বিমত নেই যে, হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রূপকের অবকাশ ও কুটিল ব্যাখ্যার ধারণা ব্যতিরেকে প্রকৃত জীবনে জীবিত, স্থায়ী ও বিরাজমান এবং উম্মতের আমলসমূহের প্রতি হাজির ও নাজির। হাকিকত অন্বেষণকারী ব্যক্তিবর্গ এবং আল্লাহর হাবিবের দিকে মুতাওয়াজ্জাকারী নবীর প্রেমিকগণ তাঁরা মদিনা ওয়ালার পক্ষ থেকে ফয়েজ ও বরকত লাভ করতে সক্ষম হবেন এবং স্বয়ং আল্লাহর হাবিব তার গার্ডিয়ান হয়ে যাবেন।

ইমাম জালালউদ্দিন সুয়ুতি আলাইহির রহমত তদীয় ‘আল হাবিলিল ফাতাওয়া’ নামক কিতাবের ২/১৮০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-

قال المتكلمون المحققون من اصحابنا ان نبينا صلى الله عليه وسلم فى بعد وفاته وانه يسر بطاعات امته ويحزن بمعاصى العصاة منهم وانه تبلغه صلاة من يصلى عليه من امته-
ভাবার্থ: আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকাইদ শাস্ত্রের পারদর্শী মুহাক্কিক উলামায়ে কেরামগণের অভিমত হলো- আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওফাতশরীফের পরে স্বশরীরে জীবিত রয়েছেন।নিঃসন্দেহে উম্মতের এতায়াত বা নেককাজে তিনি আনন্দে মুখরিত হয়ে পড়েন এবং উম্মত যখন গোনাহের কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে, তখন হাবিবে খোদা দুঃখ অনুভব করেন।নূরনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতের মধ্য থেকে যদি কেউ তাঁর উপর দরূদ ও সালাম পেশ করে,সে দরূদ ও সালাম হাবিবে খোদার নিকট পৌঁছে যায়।অর্থাৎ সরকারে দু’জাহা তাজেদারে মদিনা নিজ কান মোবারক দ্বারা দরূদ ও সালামের আওয়াজ শুনতে পান এ ক্ষমতা আল্লাহ তাঁর হাবিবকে দান করেছেন।’

চতুর্দশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেজা খাঁন আলাইহির রহমত তদীয় الدولة المكية ‘আদ দৌলাতুল মক্বিয়া’ নামক কিতাবের ৩৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-

قال الله تعالى وكذلك نرى ابراهيم ملكوت السموات والارض وللطبرانى فى كبيره ونعيم ابن حماد فى كتاب الفتن وابى نعيم فى الحلية عن عبد الله بن عمر الفاروق رضى الله تعالى عنهما عن النبى صلى الله تعالى عليه وسلم قال ان الله قد رفع لى الدنيا فانا انظر اليها والى ما هو كائن فيها الى يوم القيمة كانما انظر الى كفى هذه جليانا من الله تعالى جلاه لنبيه كما جلاه لنبيين من قبله صلى الله تعالى عليه وسلم وعليهم اجمعين-
ভাবার্থ: আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লার নূরানী ফরমান- এমনিভাবে আমি হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে সপ্তআকাশ ও সপ্তজমিনের মালাকুত বা আশ্চর্য নিদর্শনাবলী ও সুক্ষ্ণতম বস্তুসমূহকে দেখিয়েছি।ইমাম তাবরানী আলাইহির রহমত তাঁর ‘কিতাবুল ফাতান’ এবং আবু নাঈম ‘হিলয়াতুল আউলিয়া’র মধ্যে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে রেওয়ায়েত করেন।
(এছাড়াও সহিহ বুখারিশরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা ইমাম কাসতালানী রাদিয়াল্লাহু আনহু ‘মাওয়াহিবে লাদুনিয়া’ নামক কিতাবের ২য় জিলদের ১৯২ পৃষ্ঠায় তাবরানীশরীফ এর বরাত দিয়ে এ হাদিসখানা রেওয়ায়েত করেছেন।)

দশম শতাব্দীর নবম মুজাদ্দিদ ইমাম আল্লামা জালাল উদ্দিন সুয়ুতি আলাইহির রহমত (ওফাত ৯১১ হিজরি) তদীয় الخصائص الكبراى ‘খাসাইসে কোবরা’ নামক কিতাবের দ্বিতীয় জিলদের ১৮৫ পৃষ্ঠায় তাবরানীশরীফের বরাত দিয়ে এ হাদিসখানা দলিলরূপে রেওয়ায়েত করেছেন।
হাদিসশরীফের ভাবার্থ হলো- ‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আলাইহি আনহু হতে বর্ণিত নূরনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন- নিশ্চয় আল্লাহতা’য়ালা আমার জন্য সারা বিশ্বজগতকে উঠিয়ে রাখছেন, (জাহির করেছেন) সুতরাং আমি সারা বিশ্বজগতকে দেখছি এবং কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু এ জগতে হবে দেখতে থাকব।যেমন হাতের তালুকে দেখছি। এটি আল্লাহতা’য়ালা প্রদত্ত আলো, যেটি তিনি তার হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য প্রজ্জ্বলিত করেছেন,যেভাবে পূর্ববর্তী নবীগণের জন্য প্রজ্জ্বলিত করেছিলেন।’

এ হাদিসশরীফের ব্যাখ্যায় ইমাম আল্লামা মোহাম্মদ ইবনে আব্দুল বাকী জারকানী মালিকী আলাইহির রহমত তদীয় ‘জারকানীশরীফ’ নামক কিতাবের ৭ম জিলদের ২০৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-

اى اظهر وكشف لى الدنيا بحيث بجميع ما فيها فانا انظر اليها (الخ) اشارة على انه نظر حقيقى دفع انه اريد بالنظر العلم ولا يراد انه اخبار عن مشاهدة-
ভাবার্থ: আল্লাহপাক আমার সামনে সারা দুনিয়াকে উঠিয়ে রাখছেন অর্থাৎ সারা দুনিয়াকে আমার জন্য জাহির ও কশ্ফ করে খুলে দিয়েছেন এভাবে যে,আমার আয়াত্ত্বাধীনে সারা দুনিয়ার বস্তুকে করে দিয়েছেন। সুতরাং আমি সারা বিশ্বজগতকে দেখছি এবং কিয়ামত পর্যন্ত দেখতে থাকব।আল্লামা জারকানী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন- রাসূলে মকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খোদা প্রদত্ত মতাবলে নিজ চোখ মোবারক দ্বারা হাকিকী নজরে দেখছেন। এখানে নজরে ইলিমও মুরাদ লওয়া যাবে না এবং তা দেখার সংবাদ ও মুরাদ লওয়া হবে না।’

মুদ্দাকথা হলো কোরআনে কারিমার আয়াতে কারীমা ও হাদিসশরীফ দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো- নূরনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতের আমলসমূহকে দেখেন এবং তাঁকে আল্লাহতা’য়ালা হাজির ও নাজির করে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গেই শারফুদ্দিন আল হুসাইন ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ আততিবী আলাইহির রহমত তদীয় شرح الطيبى على مشكاة المصابيح নামক কিতাবের প্রথম জিলদের ৩৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন- 

كذا الاصوليون مما اوردا من قوله : اذا رويتم عنى حديثا فاعرضوا على كتاب الله فان وافق فاقبلوه وان خالف فردوه-
ভাবার্থ: যেমন উসূলবিদগণ বলেন- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী তোমরা যখন আমার পক্ষ থেকে কোন হাদিস দেখ তখন তা আল্লাহর কিতাবের সাথে মিলিয়ে দেখ,যদি তা আল্লাহর কিতাবের অনুকুলে হয় তা গ্রহণ কর।আর যদি আল্লাহর কিতাবের ব্যতিক্রম পাও তাহলে তা প্রত্যাখ্যান কর।

সুতরাং ان الله قد رفع لى الدنيا এ হাদিসশরীফের ভাবার্থ কোরআন পাকের আয়াতে কারীমা كذالك نرى ابراهيم এ আয়াতে কারীমার ভাবার্থের সাথে পূর্ণ মুয়াফিক বা সামঞ্জস্যশীল থাকায় এ হাদিসখানা গ্রহণযোগ্য।