Friday, September 18, 2015

বালাকোটিদের "সিরাতে মুস্তাকিম" ও "তাকভীয়াতুল ঈমান" কুফরী কিতাবদ্বয়ের কতিপয় সমর্থকগণের তালিকা

বিতর্কিত কুফরী কিতাব 'সিরাতে মুস্তাকিম' ও ‘তাকভীয়াতুল ঈমান’ কিতাবদ্বয়ের গোমরাহীপূর্ণ বক্তব্যকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের অনুসারী উলামায়ে কেরাম ও নবী প্রেমিক সুন্নী মুসলমানগণ কোন ক্রমেই গ্রহণ করতে পারেন নি, এমনকি তারা আজ পর্যন্ত এর জোড় প্রতিবাদ ও খণ্ডন করে আসছেন। কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় যে, জৈনপুরী ও দেওবন্দী সিলসিলাভুক্ত একশ্রেণীর আলেম ঐ কিতাবদ্বয়ের গোমরাহীপূর্ণ বক্তব্যকে সাদরে গ্রহণ করে এর পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছেন।

নিম্নে কতিপয় সমর্থকদের পরিচয় পেশ করা হলো:

(১) মাওলানা কেরামত আলী জৈনপুরী তার লিখিত জখিরায়ে কেরামত নামক কিতাবের ১ম খণ্ড, ২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-

سواس فقیر نے تقویۃ الایمان کو جو خوب بغور دیکھا تو اسکا اصل مطلب سب اھل سنت کے مذھب کے موافق پایا اور عبارت اور الفاظ بھی اسکے بہت اچھے پائے گئے مگر پھر بھی اگر اس کتاب کی کوئ عبارت بے ڈھب پاویں اور جانیں کہ لفظ کے لکھنے میں مصنف (رح) سے خطا ہوئ تو ایک دو الفاظ میں خطا ہونیکے سبب سے اس سچی کتاب کو جو شرک کے رد میں ہے جھوٹی سمجھ کے مشرک نہ بنیں
অর্থাৎ ‘সুতরাং আমি (মাও: কেরামত আলী জৈনপুরী) তাকভীয়াতুল ঈমান কিতাবকে গভীরভাবে দেখেছি (খুব মনোযোগের সহিত আদিঅন্ত পাঠ করেছি) এটার মূল বিষয় সকল আহলে সুন্নাতের মাযহাব সম্মত পেলাম এবং এই কিতাবের এবারত ও শব্দাবলীতে অত্যন্ত উন্নতমানের পেয়েছি।তবুও যদি এই কিতাবের কোন এবারত কোন প্রকার অসামাঞ্জস্য পরিলক্ষিত হয় এবং একথা মনে করে যে শব্দটি লিখতে লিখকের ভুল হয়ে গিয়েছে তবুও দুই এক শব্দ ভুল হওয়ার দরুন শিরকের খণ্ডনে লিখা এ সত্য কিতাবকে মিথ্যা মনে করে কেহ যেন মুশরিক না হয়।’

জৈনপুরী কেরামত আলী সাহেবের উপরোক্ত বক্তব্য দ্বারা দিবালোকের ন্যায় প্রমাণিত হলো তার নিকট ‘তাকভীয়াতু ঈমান’ কিতাবের সম্পূর্ণ বক্তব্য হক বা সঠিক।

আর ‘সিরাতে মুসতাকিম’ কিতাবকে সমর্থন করতে গিয়ে মাও: কেরামত আলী জৈনপুরী সাহেব তার ‘জখিরায়ে কেরামত’ নামক কিতাবের ৩য় খণ্ড ১৩৭-১৩৮ পৃষ্ঠায় লিখেন-

بعد اسکے فقیر کھتا ہے کہ حضرت مرشد برحق سید احمد قدس سرہ العزیز سے اس فقیر نے بیعت ارادت کی کیا اور ان کی ھدایت سے اللہ تعالی کی معرفت سے اپنی جھل اور نادانی ثابت ہوگئ اور مشاھدہ سے نجات پاکے معرفت سے حیرت کی طرف پہنچا اور شرک اور بدعت سے پاک ہوا اور بموجب مضمون خلاقت نامه کے اور انکی کتاب صراط المستقیم کے مضمون کے موافق یہاں سے بنگالے تک شرک و بدعت کو مٹایا
অনুবাদ: অতঃপর ফকীর (আমি কেরামত আলী জৈনপুরী) বলতেছি যে,হযরত মুর্শিদে বরহক সৈয়দ আহমদ কুদ্দিছা ছিরহুর নিকট পীর মুরিদীর বাইয়াত গ্রহণ করি, এবং তার হেদায়েত দ্বারা আল্লাহ তায়ালার মা’রিফাত হাসিলের মাধ্যমে স্বীয় অজ্ঞতা নাদানী প্রকাশ হলো এবং মোশাহাদার মাধ্যমে ঐ অজ্ঞতা থেকে নিষ্কৃতি করে শিরিক ও বিদআত হতে মুক্তি পেলাম।হুজুরের (সৈয়দ আহমদ বেরলভীর) দেওয়া খেলাফত নামা ও তার কিতাব ‘সিরাতে মুস্তাকিম’ এর বিষয় বস্তুর মর্মানুযায়ী এখান থেকে (জৈনপুর থেকে) বাংলা পর্যন্ত শিরিক ও বিদআতকে উৎখাত করি।’

জৈনপুরী সাহেবের উপরোক্ত বক্তব্যের দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো-

(ক) জৈনপুরী সাহেবের পীর ও মুর্শিদ সৈয়দ আহমদ বেরলভী।

(খ) সৈয়দ আহমদ বেরলভী সাহেবের নিকট বায়আত হওয়ার পূর্বে জৈনপুরী কেরামত আলী সাহেব মুশরিক ও  বিদআতী ছিলেন।

(গ) জৈনপুরী সাহেব সৈয়দ আহমদ সাহেবের নিকট বায়আত করার পর শিরিক ও বিদআত থেকে তিনি পাক হয়ে ঈমানদার হয়েছেন।(পূর্বে ঈমানদার ছিলেন না)।

(ঘ) তিনি ‘সিরাতে মুস্তাকিম’ কিতাবের বিষয় বস্তুর মর্মানুযায়ী জৈনপুর থেকে বাংলা পর্যন্ত শিরিক ও বিদআতকে উৎখাত করেছেন।

জ্ঞাতব্য বিষয় এই যে, ‘সিরাতে মুস্তাকিম’ কিতাবের কতিপয় বাতিল ও কুফুরি আক্বিদা ইতোপূর্বে বর্ণনা করা হয়েছে।জৈনপুরী সাহেব সেই বাতিল আক্বিদা ইসলামের সঠিক আকিদা সাব্যস্ত করে জৈনপুর থেকে বাংলা পর্যন্ত বাতিল আক্বিদা প্রচার করে তার ভ্রান্ত ও বাতিল আক্বিদাকে ঈমানী আক্বিদা বলে প্রকাশ করে সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছেন। (নাউজুবিল্লাহ)

(২) মাওলানা আব্দুল বাতেন জৈনপুরী (ইবনে মাওলানা আব্দুল আউয়াল ইবনে মাওলানা কেরামত আলী জৈনপুরী সাহেব) প্রণীত ‘মাওলানা কেরামত আলী জৈনপুরী সাহেবের জীবনী’ নামক গ্রন্থের ১৩১ পৃষ্ঠায় লিখা আছে-

‘কাজেই এই নগণ্য খাদেম ‘তাকভীয়াতুল ঈমান’ কিতাবখানা খুব ভাল করিয়া দেখিলাম।ইহাতে দেখিতে পাইলাম যে,উক্ত কিতাবের মূল উদ্দেশ্য সুন্নাতুল জামাতের মাযহাব অনুযায়ী। উক্ত কিতাবের শব্দ ও বাক্যবলী বেশ সুন্দর দেখিতে পাইলাম।’

(৩) সৈয়দ আহমদ বেরলভী সাহেবের ছিলসিলা ভুক্ত,কুমিল্লা জেলার সোনাকান্দা নিবাসী মাওলানা মোহাম্মাদ আব্দুর রহমান হানাফী (সোনাকান্দার পীর সাহেব) কর্তৃক লিখিত ১৯৫৯ ইং সনে প্রকাশিত ‘আনিছুত্তালেবীন’ নামক পুস্তকের ৪র্থ খণ্ডের ৫১ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-

‘হযরত মোজাদ্দিদ সৈয়দ আহমদ বেরলভীর মলফুজাত সিরাতে মুস্তাকিম।’

(৪) ইংরেজ ঐতিহাসিক হান্টার তার লিখিত ‘দি ইন্ডিয়ান মুসলমানস’ নামক পুস্তক ৬ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-

‘সিরাতে মুস্তাকিম’ বা সরল পথ এটি সৈয়দ আহমদের বাণীর সংকলন। মওলভী ইসমাইল দেহলভী কর্তৃক লিখিত।’

(৫) ফুলতলী সাহেবের জৈষ্ঠপুত্র মাওলানা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী সাহেব কর্তৃক লিখিত ‘সৈয়দ আহমদ শহীদ বেরলভী (র.) জীবনী। (দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশকাল ১৯৯২ইং) নামক পুস্তকের ৬৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে-

‘বুলগেরিয়ার একজন সুপ্রসিদ্ধ আলিম যিনি ফার্সী ভাষা জানতেন, সৈয়দ সাহেবের নিকট বয়াত করেন। সৈয়দ সাহেব তাকে খিলাফত প্রদান করত: ‘সিরাতে মুস্তাকিম’ কিতাবের একটি অনুলিপি প্রদান করে বুলগেরিয়া বাসীর হেদায়াতের উদ্দেশ্যে প্রেরন করেন।’

উক্ত পুস্তকের ৭২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে-

‘সৈয়দ হামযা নামক এক ব্যক্তি স্বর্ণ ও অন্যান্য জওহরাত নিয়ে কলকাতায় এসেছিলেন।তিনি সৈয়দ সাহেবের হাতে বয়াত করেন।সৈয়দ সাহেব তাকে তালিম ও তলকিন করেন এবং খিলাফতনামা প্রদান করে একখানা ‘সিরাতে মুস্তাকিম’ প্রদান করে বার্মাবাসীর হেদায়তের উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেন।’

উল্লেখ্য যে মাওলানা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী সাহেব তার পুস্তকের দুই জায়গায় স্পষ্ট ভাষায় লিখেছেন, সৈয়দ আহমদ বেরলভী সাহেবের মলফুজাত ‘সিরাতে মুস্তাকিম’ কিতাব হেদায়াতের কিতাব।অথচ কোরআন-সুন্নাহর দৃষ্টিতে ‘সিরাতে মুস্তাকিম’ কিতাবের অনেক উক্তি বাতিল এমনকি কুফুরি পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। ইতোপূর্বে দলিল সহ মুখতছরভাবে আলোচনা করা হয়েছে।

(৬) দেওবন্দীগণের নেতা মৌলভী রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী সাহেব তার লিখিত ‘ ফতোয়ায়ে রশিদীয়া’ নামক কিতাবের ৪২ পৃষ্ঠায় মৌলভী ইসমাঈল দেহলভী ও তার লিখিত ‘তাকভীয়াতুল ঈমান’ নামক কিতাবের প্রশংসায় বলেন-

مولوی محمد اسمعیل صاحب عالم متقی بدعت کے اکھاڑنے والے اور سنت کے جاری کرنے والے اور قران و حدیث پر پورا پورا عمل کرنے والے اور خلق کو ھدایت کرنے والے تھے اور تمام عمر اسی حال میں رھے آخرکار فی سبیل اللہ جھاد میں کفارکے هاتھ سے شھید ہوۓ- پس جسکا ظاھر حال ایساھووے وہ ولی اللہ اور شھید ہے - - - - اور کتاب تقویۃ الایمان نھایت عمدہ کتاب ہے اور وہ رد شرک و بدعت میں لاجواب ھے استدلال اسکے بالکل کتاب اور احادیث سے ھیں اسکا رکھنا اور پڑھنا اور عمل کرنا عین اسلام ھے-
অর্থাৎ ‘মৌলভী মোহাম্মদ ইসমাঈল দেহলভী সাহেব ছিলেন একজন পরহেজগার আলেম বিদআতের উচ্ছেদ ও সুন্নাতের প্রচলনকারী। কোরআন হাদীসের পরিপূর্ণ আমিল ও সৃষ্টির হেদায়তকারী এবং তামাম জিন্দেগী এই রাস্তায় কাটিয়েছেন। সর্বশেষে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের মধ্যে কাফেরদের হাতে শহীদ হয়ে গিয়েছেন।অতএব বাহ্যিক অবস্থা এইরূপ হয়েছে।তিনি আল্লাহর ওলী এবং শহীদ।উহা শিরিক ও বিদআতের খণ্ডনে লা জওয়াব এবং উহার দালাইল সম্পূর্ণ কোরআন হাদীস হইতে গৃহীত।উহাকে প্রত্যেকের নিকট রাখা,পড়া এবং আমল করাই প্রকৃত ইসলাম।’

গাঙ্গুহী সাহেব উক্ত কিতাবের ৪৪ পৃষ্ঠায় বলেন-

بندہ کے نزدیک سب مسائل اسکے صحیح ھیں اگر چہ بعض مسائل میں بظاھر تشدد ھے اور توبہ کرنا ان کا بعض مسائل سے محض افترا اھل بدعت کا ہے-
অর্থাৎ ‘তাকভীয়াতুল ঈমান’ কিতাবের সমস্ত মাসায়েল আমার নিকট সহী শুদ্ধ।যদিও বাহ্যিকভাবে কোন মাসায়েল সীমালঙ্ঘন হয়েছে মনে হয়।আর ইসমাইল সাহেব তার কোন কোন মাসায়েল থেকে তওবা করেছেন এই খবর বিদআতীদের অপবাদ মাত্র।’

(৭) দেওবন্দীগণের মুরুব্বি মৌলভী আশরাফ আলী থানবী সাহেব তার লিখিত ‘এমদাদুল ফতোয়া’ নামক কিতাবের ৪র্থ খণ্ডের ১১৫ পৃষ্ঠায় ‘তাকভীয়াতুল ঈমান’ প্রসঙ্গে বলেন-

تقویۃ الایمان میں بعض الفاظ جو سخط واقع ہوگئے ہیں تو اس زمانہ کی جھالت کا علاج تھا-
অর্থাৎ ‘তাকভীয়াতুল ঈমান’ কিতাবের মধ্যে কোন কোন শব্দ যা শক্ত হয়েছে তা ঐ যুগের জেহালত বা মূর্খতার ঔষধ ছিল।’

উপরোক্ত বক্তব্যের দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে,কারামত আলী জৈনপুরী,মৌলভী রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী,মৌলভী আশরাফ আলী থানবী,আব্দুল লতিফ ফুলতলী সাহেব তারা উভয়ই ‘তাকভীয়াতুল ঈমান’ ও সিরাতে মুস্তাকিম কিতাবের বাতিল আক্বিদায় পূর্ণ বিশ্বাসী ছিলেন।’ (নাউজুবিল্লাহ)

No comments:

Post a Comment