Friday, September 18, 2015

বাংলা ও আসামে ওহাবী মতবাদের আমদানী হলো কিভাবে?

প্রশ্ন: বাংলা ও আসামে ওহাবী মতবাদের আমদানী হলো কিভাবে?
=======================

উত্তর: পাক-ভারত উপমহাদেশে ওহাবী ফিতনার অনুপ্রবেশ ও এর সূত্রপাত যাদের মাধ্যমে সংঘটিত হয়েছিলো তাদের মধ্যে মৌলভী ইসমাইল দেহলভী অন্যতম (নিহত ১৮৩১ইং)। সে আরবের বিতর্কিত ব্যক্তি মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহাব নজদীর লিখিত কিতাবুত তাওহীদ গং এর মর্মানুযায়ী উর্দূ ভাষায় ‘তাকভীয়াতুল ঈমান’ নামক একটি কিতাব রচনা করে উপমহাদেশে বহুল পরিমাণে তা প্রচার করে।ফলে তাকভীয়াতুল ঈমান গ্রন্থটি পাকভারত উপমহাদেশে ওহাবী মতবাদের প্রচারপত্র হিসেবে কাজ করে।

উল্লেখ্য যে,উক্ত ‘তাকভীয়াতুল ঈমান’ নামক বিতর্কিত কিতাবটির বিষয়বস্তু সম্পর্কে জ্ঞাত হয়ে হারামাঈন শরীফাইন তথা মক্কা-মদীনার তদানিন্তন শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে কেরাম ও মুফতিয়ানে এজামগণ এ কিতাবটিকে নজদী-ওহাবী মতবাদ অবলম্বনে লিখিত বলে অভিমত ব্যক্ত করেন এবং উক্ত কিতাবের ভ্রান্ত আক্বিদা থেকে মুসলমানদের সতর্ক থাকার উপদেশ দিয়ে উক্ত কিতাবের বিরুদ্ধে ফতোয়া প্রদান করেন।যা আল্লামা কাজী ফজল আহমদ লুদিয়ানভী তদীয় আনোয়ারে আফতাবে ছাদাকাত’ নামক কিতাবের ১ম খণ্ড ৫৩৩ পৃষ্ঠায় সংকলন করেন।যা নিম্নে হুবহু তুলে ধরা হলো-

لا شك فى بطلان منقول من تقوية الايمان بكونه موافقا للنجدية مأخوذ من كتاب التوحيد لقرن الشيطان وايضاله نسبت تقوية الايمان ومولف ان هذا الدجال والكذاب استحق اللعنة من الله تعالى وملئكة واولى العلم وسائر العالمين الخ ...
অর্থাৎ ‘নি:সন্দেহে (মৌং ইসমাইল দেহলভী কৃত) ‘তাকভীয়াতুল ঈমান’ নামক গ্রন্থটি বাতিল।উহা শয়তানের শিং (মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহাব) নজদীর কিতাবুত তাওহীদ অনুকরণে লেখা হয়েছে।এ কিতাবটির রচয়িতা দাজ্জাল কাজ্জাব যা আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ,বিচক্ষণ উলামায়ে কেরাম এবং সমস্ত সৃষ্টিকুলের পক্ষ থেকে লা’নত বা অভিশাপ পাওয়ার যোগ্য।’

উক্ত ফতওয়ার মধ্যে মক্বাশরীফ ও মদিনাশরীফ এর যে সকল উলামায়ে কেরাম ও মুফতিয়ানে এজাম স্বাক্ষর করেছিলেন তাদের নাম নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

১. আব্দুহু জামান শায়খ ওমর,মক্বা মুয়াজ্জমা।

২. আহমদ দাহলান,মক্বা মুয়াজ্জমা।

৩. আব্দুহু আব্দুর রহমান,মক্বা মুয়াজ্জমা।

৪. মুফতি মোহাম্মদ আল কবী,মক্বা।

৫. সৈয়দ আল ওয়াছউদ আল হানাফী মুফতি,মদিনা মুনাওয়ারা।

৬. মোহাম্মদ বালী,খতিব মদিনা মুনাওয়ারা।

৭. সৈয়দ ইউসুফ আল আরাবী, মদিনা মুনাওয়ারা।

৮. সৈয়দ আবু মোহাম্মদ তাহির ছিদ্দেকী,মদিনা মুনাওয়ারা।

৯. মোহাম্মদ আব্দুছ ছায়াদত,খতিব মদিনা মুনাওয়ারা।

১০. আব্দুল কাদির দিতাবী,মদিনা মুনাওয়ারা।

১১. মৌলভী মোহাম্মদ আশরাফ খুরাসানী,বেলাওতী,মদিনা মুনাওয়ারা।

১২. শামছুদ্দিন বিন আব্দুর রহমান, মদিনা মুনাওয়ারা (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) প্রমুখ।
(আনোয়ারে আফতাবে ছাদাকাত- ১ম খণ্ড ৫৩৪ পৃষ্ঠা)

হারামাইন শরীফাইনের উপরোক্ত ফতওয়াখানা মৌলভী ইসমাইল দেহলভীর যুগে ১৮৩১ ইংরেজী সনের পূর্বে প্রদত্ত হয়েছিল।
অনুরূপ মৌলভী ইসমাইল দেহলভীর লিখিত ‘তাকভীয়াতুল ঈমান’ নামক কিতাবে বাতিল আক্বিদার খণ্ডনে মোজাহিদে মিল্লাত আল্লামা ফজলে হক খায়রাবাদী (আলাইহির রহমত) (ওফাত ১৮৬১ ইং ১২৭৮ হিজরি) তিনি ১২৪০ হিজরি রমজান শরীফের ১৮ তারিখে ‘তাহক্বীকুল ফতওয়া’ নামক একখানা কিতাব প্রণয়ন করে মুসলিম সমাজকে সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছেন।

উক্ত ফতওয়ার মধ্যে তৎকালীন যুগশ্রেষ্ট ১৭ (সতের) জন উলামায়ে কেরাম ও মুফতিয়ানে এজামের স্বাক্ষর রয়েছে।তন্মধ্যে বিশ্ববিখ্যাত মোহাদ্দিস শাহ ওলী উল্লাহ মোহাদ্দিসে দেহলভী (আলাইহির রহমত) এর নাতী মাওলানা মাখছুছ উল্লাহ (আলাইহির রহমত) ও মাওলানা মুছা (আলাইহির রহমত) ছিলেন অন্যতম।

উল্লেখ্য যে, ‘হুস্সামূল হারামাইন’ নামক আরো একখানা ফতওয়া ১৩২৪ হিজরি সনে প্রকাশিত হয়।এ ফতওয়াখানা চতুর্দশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ আলা হযরত ইমামে আহলে সুন্নাত আল্লামা শাহ আহমদ রেজা খাঁন বেরলভী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) কর্তৃক প্রণীত এবং তৎকালীন মক্বাশরীফ ও মদিনাশরীফের প্রখ্যাত উলামায়ে কেরাম ও মুফতিয়ানে এজাম কর্তৃক প্রশংসিত ও স্বাক্ষরিত।
হারামাইন শরীফাইনের তদানিন্তন মুফতিয়ানে কেরামের প্রদত্ত ফতোয়া দ্বারা প্রমাণিত হলো মৌলভী ইসমাইল দেহলভী কৃত তাকভীয়াতুল ঈমানই হচ্ছে উপমহাদেশের ওহাবী মতবাদের উপর লিখিত প্রথম গ্রন্থ এবং ইসমাঈল দেহলভী হল এই মতবাদের অন্যতম নেতা।

তাকভীয়াতুল ঈমান কিতাবের বাতিল আক্বিদাসমূহ

১. হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বড় ভাই সুতরাং তাঁকে বড় ভাইয়ের ন্যায় সম্মান করতে হবে। (নাউজুবিল্লাহ) (তাকভীয়াতুল ঈমান ৬০ পৃষ্ঠা)

২. বড় মাখলুক অর্থাৎ হাবীবে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর শানের সম্মুখে চামার হতেও নিকৃষ্ট। (নাউজুবিল্লাহ) (তাকভীয়াতুল ঈমান- ১৪ পৃষ্ঠা)

৩. আঁ হযরত বলেছেন, আমিও একদিন মরে মাটিতে মিশে যাব।’ (নাউজুবিল্লাহ) তাকভীয়াতুল ঈমান- ৬১)

৪. আল্লাহর রাসূলকে আল্লাহর বান্দা ও তাঁর সৃষ্টি বলে আক্বিদা রেখে যদি কেহ আল্লাহর হাবীবের কাছে সুপারিশ বা শায়ায়াত তলব করে সে আবু জেহেলের মতো মুশরিক হবে। (নাউজুবিল্লাহ) (তাকভীয়াতুল ঈমান- ৮)

৫. আল্লাহ তায়ালা যখন ইচ্ছা করেন, তখনই গায়েব সম্মন্ধে অবগত হয়ে যান,এটা আল্লাহ ছাহেবের শান বা পজিশন। (নাউজুবিল্লাহ) (তাকভীয়াতুল ঈমান-২০ পৃষ্ঠা)

৬. খোদাপ্রদত্ত ক্ষমতা বলে নবীগণ, আউলিয়ায়ে কেরামগণ মানুষের বিপদ মুক্তি করতে পারেন,বিপদ মুক্তি করে থাকেন ইহা কুফুরি। (নাউজুবিল্লাহ) (তাকভীয়াতুল ঈমান- ১০ পৃষ্ঠা)

৭. হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন গায়েবই জানেন না। (নাউজুবিল্লাহ) তাকভীয়াতুল ঈমান- ৫৮ পৃষ্ঠা)

৮. গ্রামের জমিদার ও প্রত্যেক সম্প্রদায়ের চৌধুরীর যেই রূপ মর্যাদা রয়েছে,ঠিক সেই অর্থেই প্রত্যেক পয়গাম্বর নিজ নিজ জাতির নিকট মর্যাদাবান (এর বেশি নয়) নাউজুবিল্লাহ ( তাকভীয়াতুল ঈমান ৬৪ পৃষ্ঠা)

৯. দুনিয়াতে যত পয়গাম্বর এসেছেন, তারা আল্লাহর পক্ষ হতে এ হুকুমই নিয়ে এসেছিলেন যে,আল্লাহকে মানো (মান্য কর) আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে মানবে না।(মান্য করবে না) (তাকভীয়াতুল ঈমান ১৫ পৃষ্ঠা)

সুতরাং মৌলভী ইসমাঈল দেহলভী এবং তার লিখিত তাকভীয়াতুল ঈমানকে যারা সঠিক বলে সমর্থন করে তারাই এ উপমহাদেশে ওহাবী নামে পরিচিত।

প্রকাশ থাকে যে, মাও: কেরামত আলী জৈনপুরী সাহেব সেই বিতর্কিত বিভ্রান্ত কিতাবটির পূর্ণ সমর্থক।তার লিখিত জখিরায়ে কেরামত ১ম খণ্ড ২০ পৃষ্ঠায় তাকভীয়াতুল ঈমান কিতাব সম্পর্কে বলেন-

سواس فقیر نے تقویۃ الایمان کو جو خوب بغور دیکھا تو اسکا اصل مطلب سب اھل سنت کے مذھب کے موافق پایا اور عبارت اور الفاظ بھی اسکے بہت اچھے پائے گئے مگر پھر بھی اگر اس کتاب کی کوئ عبارت بے ڈھب پاویں اور جانیں کہ لفظ کے لکھنے میں مصنف (رح) سے خطا ہوئ تو ایک دو الفاظ میں خطا ہونیکے سبب سے اس سچی کتاب کو جو شرک کے رد میں ہے جھوٹی سمجھ کے مشرک نہ بنیں-
অর্থাৎ ‘সুতরাং আমি তাকভীয়াতুল ঈমান কিতাবকে খুব মনযোগের সহিত আদিঅন্ত পাঠ করেছি,তার মূল উদ্দেশ্য আহলে সুন্নতের মাজহাব অনুযায়ী পেয়েছি।উক্ত কিতাবের শব্দ এবং বাক্যবলীও বেশ সুন্দর পেয়েছি। তারপরও যদি উক্ত কিতাবের কোন কোন এবারত বেডং বা অসুন্দর পাওয়া যায় এবং বুঝতে পারেন শব্দ লিখতে লেখকের ভুল হয়েছে এ ধরনের দু একটি ভুলের জন্য এই সত্য কিতাব যা শিরকের খণ্ডনে লিখিত ইহাকে মিথ্যা মনে করে কেহ যেন মুশরিক না হয়।’ (নাউজুবিল্লাহ)

জৈনপুরী সাহেবের বক্তব্যের দ্বারা প্রমাণিত হয়,তিনি মৌলভী ইসমাইল দেহলভী কর্তৃক লিখিত তাকভীয়াতুল ঈমান গ্রন্থটির পূর্ণ সমর্থক।এজন্য তিনি কুফুরি আক্বিদায় ভরপুর উক্ত কিতাবকে সত্য সঠিক না মানিলে মুসলমান মুশরিক হয়ে যাবে বলে র্মন্তব্য করলেন। (নাউজুবিল্লাহ)
মাওলানা কেরামত আলী জৈনপুরী সাহেব ছিলেন ভারত উপমহাদেশের ওহাবী আন্দোলনের প্রধান মৌলভী ইসমাঈল দেহলভী সাহেবের পীর ভাই এবং সৈয়দ আহমদ বেরলভী সাহেবের অন্যতম খলিফা এবং তিনি ছিলেন তাদেরই যোগ্যতম উত্তরসূরী ও ওহাবী আক্বিদায় বিশ্বাসী। এ ব্যাপারে তার লিখিত ‘জখিরায়ে কেরামত’ নামক কিতাবের ৩য় খণ্ডের ১৩৭-১৩৮ পৃষ্ঠায় নিজেই স্বীকার করে বলেন-

بعد اسکے فقیر کھتا ہے کہ حضرت مرشد برحق سید احمد قدس سرہ العزیز سے اس فقیر نے بیعت ارادت کی کیا اور ان کی ھدایت سے اللہ تعالی کی معرفت سے اپنی جھل اور نادانی ثابت ہوگئ اور مشاھدہ سے نجات پاکے معرفت سے حیرت کی طرف پہنچا اور شرک اور بدعت سے پاک ہوا اور بموجب مضمون خلافت نامہ کے اور انکی کتاب صراط المستقیم کے مضمون کے موافق یہاں سے بنگالے تک شرک و بدعت کو مٹایا-
অর্থাৎ ‘অতঃপর ফকির মাওলানা কেরামত আলী জৈনপুরী বলতেছি যে,হযরত মুর্শিদে বরহক সৈয়দ আহমদ (কু:ছি) এর নিকট পীর মুরিদীর বায়আত গ্রহণ করি এবং তার হেদায়ত দ্বারা আল্লাহ তায়ালার মারিফত হাসিলের মাধ্যমে আমার অজ্ঞতা ও নাদানী প্রমাণিত হলো এবং মুশাহাদার মাধ্যমে ঐ অজ্ঞতা থেকে নিষ্কৃতি লাভ করে শিরক ও বিদআত থেকে মুক্তি পেলাম।
হুজুরের দেওয়া খেলাফতনামা ও তার কিতাব ‘সিরাতে মুস্তাকিম’ এর মাজনুন বা বিষয়বস্তু অনুযায়ী জৈনপুর থেকে বাংলা পর্যন্ত শিরক ও বিদআতকে উৎখাত করলাম।’

জৈনপুরী সাহেবের উপরোক্ত বক্তব্যের দ্বারা এটাই প্রতীয়মান হয় যে,তিনি ‘সিরাতে মুস্তাকিম’ নামক কিতাবের বাতিল আক্বিদায় বিশ্বাসী ছিলেন এবং এই কিতাবের বিষয়বস্তু তথা বাতিল আক্বিদাগুলোকে প্রচার ও প্রসারের নিমিত্তেই জৈনপুর থেকে বাংলা পর্যন্ত সফর করে ছিলেন।

সিরাতে মুস্তাকিম গ্রন্থটির মূল রচয়িতা হলেন সৈয়দ আহমদ বেরলভী এই কথাটির স্বীকৃতি দিতে গিয়ে মাওলানা কেরামত আলী জৈনপুরী তার লিখিত ‘জখিরায়ে কেরামত’ নামক কিতাবের ২০ পৃষ্ঠায় বলেন-

صراط المستقیم کہ اسکے مصنف حضرت سید صاحب اور اسکا کاتب مولانا محمد اسمعیل محدث دہلوی ہیں ......
অর্থাৎ ‘সিরাতে মুস্তাকিম কিতাবটি মূলত সৈয়দ আহমদ বেরলভীর মলফুজাত বা বাণী এবং এর লেখক মৌলভী ইসমাইল দেহলভী।’

সিরাতে মুস্তাকিম কিতাবের বাতিল আক্বিদাসমূহ:

১)  নামাজের মধ্যে নবীয়ে পাকের খেয়াল করা গরু-গাধার  খেয়ালে ডুবে থাকার চেয়েও খারাপ এবং তাঁকে নামাযের মধ্যে তা‘জিমের সঙ্গে খেয়াল করা শিরক। (নাউজুবিল্লাহ)  (সিরাতে মুস্তাকিম- পৃষ্ঠা-১৬৭)

২)  চোর ও জিনাকারীর ঈমান চুরি ও জিনার সময় পৃথক হয়ে যায়।ঠিক তেমনিভাবে মাজারশরীফে অবস্থান করে দোয়া করার সময় অধিক পরিমাণে ঈমান ধ্বংস হয়ে যায়। অজ্ঞতার ওজর না থাকলে তারা পরিষ্কার কাফের হয়ে যেতো। জিয়ারতকারী ব্যক্তি যদি আলেম হয়, দোয়া  করার  সময়  নি:সন্দেহে  কাফির। (নাউজুবিল্লাহ) (সিরাতে মুস্তাকিম পৃষ্ঠা-১০৫)

৩)  দূর-দূরান্ত থেকে আউলিয়ায়ে কেরামের মাজারশরীফ জিয়ারতের উদ্দ্যেশ্যে সফর করে তথায় পৌছা মাত্রই শিরকের অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে এবং আল্লাহ তায়ালার গজবের কবলে পতিত হবে। (নাউজুবিল্লাহ)  (সিরাতে মুস্তাকিম পৃষ্ঠা -১০২)

৪)  আউলিয়ায়ে কেরাম কবরে অবস্থান করে জীবিতদের ন্যায় উপকার করতে সক্ষম নয়।যদি কবর জিয়ারতে মকছুদ পুরণ হতো,তাহলে দুনিয়ার সকল মানুষ মদিনা শরীফে চলে যেত। (নাউজুবিল্লাহ)  (সিরাতে মুস্তাকিম পৃষ্ঠা -১০৩)

৫)  একদিন স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা স্বীয় শক্তিশালী হাতে সৈয়দ আহমদের ডান হাত ধরে বললেন আজ তোমাকে এই দিলাম,পরে আরও দিবো।এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি তার কাছে বায়আত গ্রহণ করার জন্য বারবার আরজি পেশ করতে থাকলে তিনি বললেন- আয় আল্লাহ আপনার এক বান্দা বায়আত গ্রহণ করার জন্য আমার কাছে আসছে,আর আপনি আমার হাত ধরে আছেন।আল্লাহ তায়ালা উত্তরে বললেন- তোমার হাতে যারা বায়আত গ্রহণ করবে লক্ষ লক্ষ গোনাহ থাকলেও আমি তাকে প্রচুর পরিমাণে মাফ করে দিবো। (নাউজুবিল্লাহ) (সিরাতে মুস্তাকিম পৃষ্ঠা-৩০৮)

৬)  পূর্ণাঙ্গ শরিয়ত ও দ্বীনের যাবতীয় হুকুম আহকামের ব্যাপারে সৈয়দ আহমদ বেরলভীকে নবীগণের ছাত্রও বলা চলে, এবং নবীগণের উস্তাদের সমকক্ষও বলা চলে।(নাউজুবিল্লাহ) (সিরাতে মুস্তাকিম পৃষ্ঠা-৭১)

৭)  সৈয়দ আহমদ বেরলভীর নিকট এক প্রকারের ওহী এসে থাকে, যাকে শরিয়তের পরিভাষায় নাফাসা ফির রাও বলা হয়।ইহাকে কোন কোন আহলে কামাল বাতেনী ওহী বলেও আখ্যায়িত করে থাকেন।অতঃপর বলেন তাদের  (সৈয়দ আহমদ বেরলভী ও তার দলের) ইলিম যা হুবহু নবীদের ইলিম কিন্তু প্রকাশ্য ওহী দ্বারা অর্জিত নয় (অর্থাৎ বাতেনী ওহী দ্বারা অর্জিত) নাউজুবিল্লাহ। (সিরাতে মুস্তাকিম পৃষ্ঠা- ৭১-৭২)

৮) এই সকল বুজুর্গ (যে সকল বুজুর্গের নিকট ‘নাফাসা  ফির রাও’ বা বাতেনী ওহী আসে) ও নবীগণ আলাইহিমুস সালামের মধ্যে পার্থক্য শুধু এতটুকু যে,নবীগণ উম্মতগণের প্রতি প্রেরিত হয়ে থাকেন এবং সেই সকল বুজুর্গ তাদের মনে উদিত বিধানকে প্রতিষ্ঠিত করেন।নবীগণের সাথে তাদের সম্পর্ক  শুধু এতটুকু, যতটুকু সম্পর্ক ছোট ভাই ও বড় ভাইয়ের মধ্যে অথবা বড় ছেলে ও বাপের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে। (নাউজুবিল্লাহ)  (সিরাতে মুস্তাকিম পৃষ্ঠা-৭১)

জখিরায়ে কেরামত নামক কিতাবের বাতিল আক্বিদাসমূহ:

১. কেরামত আলী জৈনপুরী সাহেব ‘জখিরায়ে কেরামত’ কিতাবের ১ম খণ্ডের ২৩১ পৃষ্ঠায় বলেন-

ظلمات بعضھا فوق بعض اندہیرے میں ایک پر ایک وسواس میں فرق ہوتا ہے کوئ کم برا ہوتاہے کوئ بہت برا مثلا زنا کے وسواس سے اپنے زوجہ سے مجامعت کا خیال بہتر ہے اور قصد کر کے اپنے پیرکا خیال نماز میں کرنا اور مانند اسکے دوسرے بزرگوں کا خیال کرنا اور اپنے دل کو اسی طرف متوجہ کرنا گاؤخر کی صورت کے خیال میں ‏غرق ہونے سے کہیں زیادہ براہے بلکہ اس مقام میں خود حضرت جناب رسالتمآب کے خیال کا کام نہیں کیونکہ بزرگوں کا خیال تعظیم اور بزرگی کے ساتہ آدمی کے دل میں چبہ جاتا ہے بخلاف گاؤ خرکے خیال کے کہ نہ اسقدر دل میں چبہتاہے اور نہ اسقدر تغظیم ہوتی ہے بلکہ اسکو اپنے خیال میں حقیر اور ذلیل جانتاہے اور یہ تعظیم اور بزرگی اللہ کے سوا دوسرے کی جوہے سو جب نماز میں اس کی طرف دل متوجہ ہورہتا ہے اور اسکو اپنا مقصود سمجہتاہے تب شرک کی طرف لیجاتاہے -
অর্থাৎ ‘কোন অন্ধকার কোন অন্ধকারে ওপরে।(অর্থাৎ অন্ধকারের মধ্যেও যেমন কম বেশি পার্থক্য থাকে) ওয়াসওয়াসাও অল্প খারাপ ও বেশি খারাপের পার্থক্য আছে।যেমন ব্যভিচারের ওয়াসওয়াসা হতে নিজের স্ত্রীর সাথে মিলনের ধ্যান কিছুটা ভাল।ইচ্ছা করে নামাযের মধ্যে নিজের পীরের ধ্যান করা এবং এমনি ধরণের কোন বুজুর্গ ব্যক্তির খেয়াল করা ও নিজের অন্তরকে ঐ দিকে ধাবিত করা গরু-মহিষের ভাবার চেয়েও বেশি খারাপ।এমনকি ঐ স্থানে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ধ্যান ও খেয়াল করাও কাজের কথা নয়।কেননা নিজের অন্তরে সম্মানের সাথে বুজুর্গানদের ধ্যান করা গরু-মহিষের চেয়েও খারাপ।তবে নামাযের মধ্যে আল্লাহ ব্যতীত অন্তরে তাজিমের সাথে যে জিনিসের স্থান হয়েছে সেটিকে নিজের মকসুদ মনে করলে তাই শিরকের দিকে নিয়ে যায়। (নাউজুবিল্লাহ)
অনুরূপ সিরাতে মুস্তাকিম কিতাবের ভাষ্য।

২. জখিরায়ে কেরামত ১/২৫ পৃষ্ঠায় জৈনপুরী সাহেবের বিভ্রার্ন্তিকর ফতওয়া-

اور اگر اپنی مرشد میں جس سے بیعت کرچکا ہے عقیدے کا فساد نہ پاوے اگر چہ وہ مرشد گناہ کبیرہ میں گرفتار ہو تو اسکے بیعت کے علاقے کو نہ چہوڑے۔
ভাবার্থ: আপনি যে মুর্শিদ বা পীরের নিকট বায়আত গ্রহণ করেছেন (মুরিদ হয়েছেন) তার মধ্যে যদি আক্বিদা সংক্রান্ত মাসআলার মধ্যে কোন ফাসিদ আক্বিদা না থাকে,এ ধরনের পীর ও মুর্শিদ যদিও কবীরা গোনাহে লিপ্ত থাকেন,এমতাবস্থায়ও তার বায়আত এর এলাকা ছাড়বে না অর্থাৎ তাকে মুর্শিদ হিসেবে মানবে। এ কবীরা গোনাহে লিপ্ত থাকার দরুণ এ মুর্শিদকে ত্যাগ করে অন্য কোন মুর্শিদের আশ্রয় নিবে না।’

৩. জখিরায়ে কেরামত ৩/১১২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে- হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রূহ মোবারক মীলাদ শরীফে আসেন এই আক্বিদা রাখা শিরক। (নাউজুবিল্লাহ)

৪. জখিরায়ে কেরামত বাংলা পৃষ্ঠা- ১২২ পৃষ্ঠায় রয়েছে- ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং নিজের ভাইকে (অর্থাৎ তোমাদের নবীকে) সম্মান কর এবং ভালবাস।

৫. জখিরায়ে কেরামত বাংলা পৃষ্ঠা- ৮৭ পৃষ্ঠায় রয়েছে- ‘তিনি আপনার বিভ্রান্ত পেয়ে আপনাকে পথ দেখিয়েছেন’।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে,জখিরায়ে কারামত গ্রন্থের উপরোক্ত বাতিল আক্বিদাগুলি বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও উহার লেখক মাও: কেরামত আলী জৈনপুরীকে আমি সুন্নী আক্বিদাভুক্ত বলে মনে করতাম।কারণ তার অনুসারীরা সুন্নীদের মত মিলাদ কিয়াম ও আচার আচরণে অভ্যস্থ ছিলো।তাছাড়া বাতিল আক্বিদা সম্পর্কে আমার প্রশ্নের জবাবে তারা মূল কিতাব জাল হয়েছে এবং মূল কিতাবে এমন আক্বিদা নেই বলে আমাকে আশ্বস্থ করতো।তা সত্ত্বেও আমি প্রকৃত সত্য উদঘাটনে আমার অনুসন্ধান অব্যাহত রাখি যার ফলে আমার নিকট দিবালোকের ন্যায় পরিস্কার হয় যে,আমাদের এই বাংলা ও আসামে সৈয়দ আহমদ বেরলভী ও মৌলভী ইসমাইল দেহলভী প্রবর্তিত ওহাবী মতবাদের তিনি একজন যোগ্য উত্তরসূরী।আর এজন্যই মাও: কেরামত আলী জৈনপুরী সাহেব সম্পর্কে আমার পূর্ব ধারণার পরিবর্তন হয়।

উল্লেখ্য যে, আমার  লিখিত মাহবুবে খোদাকে ভাই বলিল কাহারা পুস্তকটি যখন ১৯৭৫ইং সনে লেখা হয়,তখন জৈনপুরী সিলসিলার পীর মাওলানা সুফিয়ান সিদ্দীকি সাহেবের নিকট এ ব্যাপারে একখানা পত্র দিয়েছিলাম যে,জখিরায়ে কেরামত নামক কিতাবে উল্লেখিত বাতিল আক্বিদা ও বক্তব্য সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? তিনি উর্দুভাষায় আমার প্রশ্নের জবাবে যা লিখেছেন তার সারসংক্ষেপ হলো-

‘মাওলানা কেরামত আলী জৈনপুরী লিখিত ‘জখিরায়ে কেরামত’ নামক কিতাব ১ম, ২য় ও ৩য় খণ্ড রহিয়াছে, কিন্তু কোন খণ্ডের মধ্যেই ওহাবীদের আক্বিদার অনুরূপ কোন আক্বিদা লিখিত নাই।
তিনি এবং তাহার খান্দানে কোন একজনের মধ্যেও আজ পর্যন্ত ওহাবীয়তের বাতাস পর্যন্ত লাগেনি। হ্যাঁ জখিরায়ে কেরামত নামক কিতাবের ১ম ও ২য় খণ্ডের কোন স্থানে তাকভীয়াতুল ঈমান এবং এই কিতাবের লিখক মৌলভী ইসমাঈল দেহলভীকে হক্ব (শুদ্ধ) বলা হইয়াছে। তাকভীয়াতুল ঈমান শুদ্ধ কিতাব এবং মৌলভী ইসমাইল দেহলভী হক পথে ছিলেন।এ ধরনের লেখা মাওলানা কেরামত আলী সাহেবের কোন সময় ছিল না এবং থাকিতেও পারে না।বরং কোন চালাক ওহাবী তার নিজ আক্বিদা প্রসারের জন্য মাওলানা কেরামত আলী জৈনপুরী সাহেবের দিকে সম্পর্ক করিয়া সমস্ত বদ আক্বিদার কথা জখিরায়ে কেরামত এর মধ্যে ঢুকাইয়া দিয়েছে।’

এভাবে জৈনপুরী সিলসিলার অন্যতম পীর মাওলানা আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলীর পীর সাহেব এর নিকটও এ বিষয়ে একখানা পত্র লিখেছিলাম। তিনিও আমাকে অনুরূপ উত্তর প্রদান করেছেন।
তিনি বলেন এই কিতাবটি জখিরায়ে কেরামত আছলী কিতাব নয় বরং এটা তাহরিফ বা পরিবর্তন হয়েছে। আছলী (মূল) কিতাব দেখলেই এর সত্যতা প্রমাণিত হবে।কিন্তু দীর্ঘদিন অনুসন্ধান করেও জনাব ফুলতলী সাহেবের কথা অনুযায়ী সেই আছলী কিতাবের কোন সন্ধান না পেয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে ফুলতলী সাহেবের সাথে সাক্ষাত করি এবং নতুন করে একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করি যে, জখিরায়ে কেরামত কিতাবের মধ্যে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের পরিপন্থি যে সব আক্বিদা রয়েছে তা আছলী কিতাবের অনুসারে সংশোধন করা হোক এবং জৈনপুরী সিলসিলার সমস্ত উলামায়ে কেরাম একমত হয়ে যেন জখিরায়ে কেরামতের একটি নতুন সংস্করণ প্রকাশ করেন।তিনি আমাকে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দেন।জনাব ফুলতলী সাহেবের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে আমার লিখিত ‘মাহবুবে খোদাকে ভাই বলিল কাহারা’ পুস্তকটি কোন পরিবর্তন ছাড়াই দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয় ১৯৭৮ইং সনে।

বড়ই পরিতাপের বিষয় এই যে,দীর্ঘ একযুগের অধিককাল অপেক্ষা করার পরও এ ব্যাপারে ফুলতলী সাহেবের পক্ষ থেকে আর কোন সাড়া পাওয়া গেলো না।অপরদিকে সুন্নী মুসলমানদের পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ আসছিল যে,জখিরায়ে কেরামত কিতাবের বাতিল আক্বিদার ব্যাপারে প্রমাণভিত্তিক একটি সুস্পষ্ট ফয়সলা করা আবশ্যক।কিন্তু মাদ্রাসার প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব ও অন্যান্য কাজের ঝামেলায় এদিকে মনোনিবেশ করতে পারিনি।

ইতোমধ্যে (১৯৮৮ ইং) যুক্তরাজ্য বার্মিংহামে এক আন্তর্জাতিক ঈদে মিলাদুন্নবী সুন্নী কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়।উক্ত কনফারেন্সের প্রধান অতিথি হিসেবে আমি যোগদান করি।সেখানে প্রায় তিনমাস যাবত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে গিয়ে পুনরায় জখিরায়ে কেরামত সম্পর্কে প্রশ্নের সম্মূখীন হই।সেখানকার উলামায়ে কেরাম ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ আমাকে এ ব্যাপারে ফুলতলী সাহেবের সাথে আবার সাক্ষাত করার জন্য অনুরোধ জানান।
তাদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে আমি ফুলতলী সাহেবের সাথে সাক্ষাত করতে রাজি হই।কিন্তু সেই সময় সুযোগ আসতে প্রায় ২/৩ বছর সময় অতিবাহিত হয়ে যায়।অবশেষে (আনুমানিক) ১৯৯১ইং সনে আমি এবং ফুলতলী সাহেব (আমরা উভয়ে) একই সময়ে লণ্ডনে অবস্থান করছি। এমতাবস্থায় হঠাৎ একদিন আলহাজ্ব ছুরুক মিয়া (সুন্দি মিয়া) আমাকে টেলিফোনের মাধ্যমে ব্রীকল্যান্ড মসজিদে আমন্ত্রন জানালেন।আমি অনতিবিলম্বে ব্রীকল্যান্ড মসজিদে হাজির হয়ে ফুলতলী সাহেবের সাথে সাক্ষাত করি।আমার সাথে ছিলেন মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন সাহেব,মাওলানা হাফেজ তালিবউদ্দিন,জনাব মোহাম্মদ ছুরুক মিয়া,মোহাম্মদ ইউসুফ মিয়া ও আলহাজ্ব আব্দুল মান্নান সাহেব প্রমূখ।

কিন্তু ফুলতলী সাহেব আমাদের সাথে আলোচনায় না বসে বরং মুহাদ্দিস হাবিবুর রহমান সাহেবকে দায়িত্বভার দিয়ে মসজিদ থেকে চলে যান। অতঃপর আমরা মসজিদ থেকে বের হয়ে অন্য এক বাসায় আলোচনায় লিপ্ত হলাম।আমি বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করার সাথে জখিরায়ে কেরামতের বাতিল আক্বিদা সম্পর্কে মুহাদ্দিস সাহেবের নিকট প্রশ্ন রাখি।
মুহাদ্দিস হাবিবুর রহমান সাহেব উত্তরে বললেন- জখিরায়ে কেরামত আমি দেখেছি এবং এগুলো কিতাবে আছে সত্য- তবে এই সব আক্বিদা আমার নেই এবং আমার সাহেব কিবলা ফুলতলী সাহেবেরও নেই। প্রতি উত্তরে আমি প্রমাণস্বরূপ বললাম ফুলতলী সাহেবের পুত্র জনাব ইমাদউদ্দিন চৌধুরী সাহেবের লিখিত এ সব বাতিল আক্বিদার প্রতি সমর্থন পাওয়া যায়।তিনি বললেন- ছেলে দোষী হলে বাপ দোষী নয়। অন্যান্য প্রশ্নের উত্তরে তিনি বললেন- এ প্রশ্নগুলো কোন একদিন ফুলতলী সাহেবের নিকটই করুন।কিন্তু সেই সুযোগ আর হল না।

প্রিয় পাঠকগণ! জৈনপুরী সাহেবের সিলসিলাভুক্ত অন্যতম পীর মাওলানা আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলী সাহেবের কাছ থেকে যদিও এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোন ফয়সালা পাওয়া গেল না কিন্তু ফুলতলী সাহেবের পুত্র জনাব ইমাদউদ্দিন চৌধুরী সাহেবের লেখনি ও বক্তব্যের দ্বারা এটা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে,তাদের ঊর্ধ্বতন পীর মাওলানা কেরামত আলী জৈনপুরী সাহেবের জখিরায়ে কেরামত ও তার আক্বাইদ ওহাবী ইসমাঈল দেহলভীর আকাঈদের অনুরূপই ছিল।

কেননা তিনি সৈয়দ আহমদ বেরলভী সাহেবের জীবনী গ্রন্থের প্রথম সংস্করন ৪৫ পৃষ্ঠায় চাঁদ ও তারা মেলা শিরোনামে সৈয়দ আহমদ সাহেবকে চন্দ্র এবং মৌলভী ইসমাঈল দেহলভী ও কেরামত আলী জৈনপুরী সাহেবকে তারা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

মোটকথা বইটির বিভিন্ন স্থানে মাওলানা ইমাদউদ্দিন সাহেব ইসমাঈল দেহলভীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

এতে প্রতীয়মান হয় যে, কেরামত আলী জৈনপুরী, ইসমাঈল দেহলভী ও সৈয়দ আহমদ বেরলভী সাহেব তারা সবাই একই আক্বিদায় বিশ্বাসী ছিলেন।

সুতরাং জখিরায়ে কেরামত তাহরিফ বা পরিবর্তন হয়নি।বরং এই কিতাবের আক্বিদাই জৈনপুরী সাহেবের আক্বিদা।
পরবর্তীতে মাওলানা কেরামত আলী জৈনপুরী সাহেবের জীবনী নামক একটি বাংলা অনুবাদগ্রন্থ আমার হাতে আসে।পুস্তকের মূল লেখক মাওলানা কেরামত আলীর নাতি এবং মাওলানা আব্দুল আউয়াল সাহেবের পুত্র মাওলানা আব্দুল বাতেন জৈনপুরী।অনুবাদক মৌলভী আছমত আলী এম এ, প্রকাশক মো: আহমদ সিদ্দিকী জৈনপুরী।
উক্ত পুস্তকের ১৩০-১৩১ পৃষ্ঠায় মৌলভী ইসমাঈল দেহলভী এবং তার লিখিত তাকভীয়াতুল ঈমান সম্পর্কে মাওলানা কেরামত আলী জৈনপুরী সাহেবের যে মতামত রয়েছে তা নিম্নরূপ:

‘তাকভীয়াতুল ঈমান’ হযরত মাওলানা শাহ ইসমাঈল শহীদ (রা.) এর লিখিত একখানা প্রসিদ্ধ কিতাব ইহা তৌহিদ (একত্ববাদ) সুন্নত অনুসরণে শিক্ষা শেরক,বিদআত এবং কুসংস্কার দুরীকরণ বিষয়ে একখানা পূর্ণাঙ্গ পুস্তক।উক্ত কিতাবের শব্দ ও বাক্যবলী বেশ সুন্দর দেখিতে পাইলাম।

উক্ত জৈনপুরী কেরামত আলী জীবনী পুস্তকের ১১৮ পৃষ্ঠায় সৈয়দ আহমদ এর মর্যাদা সম্পর্কে লিখিত আছে-

‘মুকাশাফাতে রহমত কিতাবে মাওলানা জৈনপুরী বলেন- হযরত রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত সৈয়দ সাহেবকে স্বপ্নযোগে একটি একটি করিয়া ৩টি খোরমা খাওয়াইয়া ছিলেন।সৈয়দ সাহেব নিদ্রা হইতে জাগরিত হইয়া উহার তাছির নিজ শরীরে অনুভব করেন।এই ঘটনার পর হইতে সৈয়দ সাহেব নবুয়তের রীতিনীতির পথপ্রাপ্ত হন।
ইহার কিছুদিন পর একদা স্বপ্নে জনাব বেলায়েতে মায়াব হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু এবং সৈয়দাতুন নেছা হযরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহা নিজ হাতে খুব উত্তমরূপে গোসল করান।অতঃপর হযরত ফাতেমা যুহরা (রা.)তাহার নিজ হাতে সৈয়দ সাহেবকে এক প্রকার সম্মানিত পোশাক পরিধান করাইয়াছেন।এই ঘটনার (অর্থাৎ হযরত আলী (রা.) ও হযরত ফাতেমা (রা.) দ্বয়ের গোসল করানো ও পোশাক পরিধান করানোর) পর সৈয়দ সাহেব রাহে নবুয়তের পূর্ণ দরজা লাভ করেন।এমনকি স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের তরফ হইতে সৈয়দ সাহেব আদেশপ্রাপ্ত হইয়াছিলেন যে, যদি আপনার হাতে লক্ষ লক্ষ লোকও মুরিদ হয় তবু আমি তাহাদিগকে প্রচুরভাবে দান করিব। (মুকাশাফাতে রহমত)

প্রিয় পাঠকগণ! মাওলানা কেরামত আলী জৈনপুরী সাহেবের নাতি ও যোগ্যতম উত্তরসূরী মাওলানা আব্দুল বাতেন জৈনপুরী সাহেবের উপরোক্ত প্রমাণভিত্তিক আলোচনা দ্বারা এটা সুস্পষ্ট প্রমাণিত হল যে,জখিরায়ে কেরামতে যে সব বাতিল আক্বিদা রয়েছে তা পরিবর্তন করা হয়নি শুধুমাত্র মাওলানা সুফিয়ান সিদ্দিকী জৈনপুরী সাহেব ব্যতীত উক্ত সিলসিলাভুক্ত আর কেহই এ সব আক্বিদার বিরোধিতা করেননি। সম্ভবত মাওলানা সুফিয়ান সিদ্দিকী জৈনপুরী সাহেব এ সব তত্ত্ব সম্পর্কে ওয়াকেফহাল ছিলেন না।হুছনেযন বা উত্তম ধারণা হিসেবে উক্ত অভিমত পেশ করেছিলেন।

জখিরায়ে কেরামত ২/১৯৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে-

اور مولوی حسام الدین  صاحب  پنجابی سے سنا کہ مولوی فضل حق نے جو بڑے زبرد ست علامہ بیٹے مولوبی فضل امام کے ہیں اور فضیلت اور کمالیت انکی تمام ھندوستان میں مشھور ہے تین مھینے تک محنت کرکے ایک رسالہ بیان میں امکان مثل کے تقویۃ الایمان کے بعض اقوال کے رد میں لکھکر مولانا ممدوح کے پاس بھیجا تھا جسوقت مولانا ظھر کی نماز پڑھکے جامع مسجد سے شاہ جھان آباد کی نکلتے تھے قاصد نے اسوقت وہ رسالہ انکے حوالہ کیا ـ مولانا نے اسی وقت کھڑے اس رسالہ کو اول سے آخرتک دیکھ لیا بعد اسکے سیڑھیوں پر مسجد کی بیٹھکر دوات قلم کاغذ منگواکر رد لکھنا اسکا شروع کیا اور عصر تک اسکا رد لکھکر اسی قاصد کے حوالہ کر نماز عصر کی اداکی ـ اور مولوی فضل  حق کی تین مھینے کی محنت کو دوگھنٹے میں اڑا دیا ـ مولوی فضل حق نے اس رسالہ کو دیکھکر بہت تعجب ہوگیا اور رد اسکانہ لکھ سکے ـ پھر اس ملک کے بعضنے نا معقول نیم ملاؤن کو ہوس ہے کہ دو چار رسالہ صرف و نحو اور معقولات کے پرھکر ان علامہ لاثانی پر طعن کریں اور انکے تقویۃ الایمان وغیرہ رسالون کا رد لکھیں ـ سبحان اللہ
 یہ چھوٹا منھ وہ بڑی بات ـ چہ نسبت خاک را با عالم پاک
(ذخیرہ کرامت حصہ دوم ۲/۱۹۴
জখিরায়ে কেরামত ২/১৯৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে: (কেরামত আলী জৈনপুরী সাহেব বলেন) আমি মৌলভী হুছাম উদ্দিন সাহেব পাঞ্জাবীর নিকট থেকে শুনেছি যে, মাওলানা ফজলে হক (খায়রাবাদী) যিনি বড় আল্লামা মাওলানা ফজলে ইমামের সন্তান।সমগ্র ভারতবর্ষে তাঁর ফজিলত ও কামালিয়াতের সুনাম প্রসিদ্ধি লাভ করেছে।
তিনি তিনমাস যাবৎ বহু পরিশ্রমের ফলে ‘তাকভীয়াতুল ঈমান’ কিতাবের কতেক উক্তির খণ্ডনে ইমকানে মিছাল সংক্রান্ত বিষয়ের একখানা কিতাব লিখে মাও: মামদু এর নিকট প্রেরণ করেছিলেন।ঐ সময় মাওলানা সাহেব জুহরের নামায আদায়ের জন্য জামে মসজিদ থেকে শাহজাহানাবাদ যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হচ্ছিলেন। তখনই বাহক ঐ খণ্ডনপত্র (মাওলানা ফজলে হক খায়রাবাদী কর্তৃক লিখিত খণ্ডনপত্রখানা) তার হাতে পৌঁছালেন।মাওলানা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কিতাবখানার আদ্যপান্ত দেখে নিলেন।
অতঃপর মসজিদের সিড়িতে বসে দোয়াত-কলম এবং কাগজ সংগ্রহ করে ঐ কিতাবের খণ্ডন লিখতে আরম্ভ করলেন।আসরের নামাযের পূর্বেই উহার খণ্ডন লিখে ঐ বাহকের কাছে দিয়ে আসরের নামায সম্পন্ন করলেন।
মাওলানা ফজলে হক তিনমাস পরিশ্রম করে যে কিতাবখানা লিখেছিলেন,মাত্র দুই ঘন্টার মধ্যে তা অসার করে উড়িয়ে দিলেন। মাওলানা ফজলে হক খায়রাবাদী সাহেব তাঁর লিখিত কিতাবের খণ্ডন দেখে হতভম্ভ হয়ে গেলেন এবং এর কোন জবাব লিখতে পারেননি।

তদুপরি এ দেশের কতেক অবুঝ নিম মোল্লাগণের কি দশা যে, দু’-চারখানা ছরফ,নাহু এবং মা’কুলাতের কিতাব পড়ে অদ্বিতীয় এক আল্লামার উপর দোষারোপ করে থাকেন।তার কিতাব ‘তাকভীয়াতুল ঈমান’ ও অন্যান্য কিতাবের খণ্ডন লিখে থাকেন।
সুবহানাল্লাহ! এ ছোট মুখে বড় কথা।
প্রবাদ: পবিত্র আলমের সঙ্গে মাটির কি সম্পর্ক।

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ দেখলেনতো ওহাবীদের গুরুঠাকুর মৌলভী ইসমাঈল দেহলভীর লিখিত ‘তাকভীয়াতুল ঈমান’ ও তার লিখকের প্রতি মাওলানা কেরামত আলী জৌনপুরী সাহেব কেমন করে অন্ধভক্ত সাজলেন।হাদীস শরীফে উল্লেখ রয়েছে- كفى با المرء كذبا ان يحدث بكل  ما سمع যা শুনে তাই প্রচার করে বেড়ায় সত্য মিথ্যা যাচাই করে না মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট।

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অগ্রনায়ক আল্লামা ফজলে হক খায়রাবাদী (আলাইহির রহমত) ওহাবীদের নেতা মৌলভী ইসমাঈল দেহলভীর লিখিত ‘তাকভীয়াতুল ঈমান’ এ ভ্রান্ত কিতাবের খণ্ডনে দুইখানা কিতাব লিখেছিলেন যথা- একটি হলো ‘তাহকীকুল ফতওয়া’ দ্বিতীয়টি হলো ‘ইমতিনাউন নাজির’ এ দুখানা কিতাব এখনো বড় বড় সুন্নি লাইব্রেরীতে পাওয়া যায়।এ দুটি কিতাবের খণ্ডনে এ পর্যন্ত কোন কিতাব পাওয়া যায় নাই।এজন্যইতো জৌনপুরী সাহেব তার খণ্ডনকৃত পুস্তকের নাম পর্যন্ত উল্লেখ করতে সক্ষম হননি।দলিল প্রমাণ বিহীন এ সব প্রোপাগান্ডার উত্তরে আমরা এটাই বলবো,কেবল শোনা কথার কোনই মূল্য নেই।

মুদ্দাকথা হলো কেরামত আলী জৌনপুরী সাহেব ‘তাকভীয়াতুল ঈমান’ কিতাবের ভ্রান্ত আক্বিদার সমর্থনে পঞ্চমুখ। নাউজুবিল্লাহ।

উল্লেখ্য যে, জৌনপুরী কেরামত আলী সাহেব মাওলানা ইসমাঈল দেহলভীর মধ্যস্থতায় সৈয়দ আহমদ বেরলভী থেকে খেলাফতনামা অর্জন করেছেন।

এ প্রসঙ্গে মাওলানা আব্দুল বাতেন জৌনপুরী কর্তৃক প্রণীত এবং মৌলভী আসমত আলী এম এ অনুদিত মাওলানা কেরামত আলী জৌনপুরী সাহেবের জীবনী গ্রন্থের ২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে-

‘হযরত মাওলানা (কেরামত আলী জৌনপুরী) সাহেবের রায়-বেরেলী উপস্থিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই হযরত সৈয়দ সাহেব প্রথম দৃষ্টি ও সাক্ষাতের দ্বারা তাঁহাকে পরীক্ষা করিয়া লইলেন এবং বয়াত করাইয়া উচ্চ সম্মান দান করিলেন।প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই মাওলানা সাহেবকে বলিলেন- এখন হইতেই হেদায়েত কাজে লাগিয়া যাও। অতঃপর হযরত মাওলানা শাহ ইসমাঈল শহীদ দেহলভীর মধ্যস্থাতায় খেলাফত ও শাজরানামা প্রদান করেন যাহা আজ পর্যন্ত বর্তমান রহিয়াছে।’

উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হল যে- মাওলানা কেরামত আলী জৈনপুরী,ইসমাইল দেহলভী ও সৈয়দ আহমদ বেরলভী সকলই একই আক্বিদায় বিশ্বাসী অর্থাৎ ‘তাকভীয়াতুল ঈমান’ ও সিরাতে মুস্তাকিম’ উভয় কিতাবের বাতিল আক্বিদায় বিশ্বাসী ছিলেন এবং সে অনুযায়ী আমল করতেন ও তার অনুসারীদের অনুরূপ আক্বিদা বিশ্বাসে অনুপ্রাণীত করেছেন।

আমাদের এই বাংলাদেশে তাদের ভক্ত অনুসারীদের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়।কেননা তারা সুন্নি জনতাকে ধোঁকা দিয়ে রাসূল প্রেমের কথা বলে তাদেরকে প্রতারিত করছেন।
এমতাবস্থায় আমাদের ঈমানী দায়িত্ব হচ্ছে ঐ সকল বাতিল মতবাদীদের প্রতারণা থেকে তাদেরকে সতর্ক করা এবং ঈমান ও আক্বিদাকে মজবুত করা।আল্লাহ আমাদের সবাইকে সিরাতে মুস্তাকিম নবীগণ,শহীদগণ, সিদ্দিকগণ ও আউলিয়ায়ে কেরামের পদাঙ্খ অনুসরণে ঈমান ও আক্বিদাকে সঠিক পথে পরিচালিত করার তৌফিক দান করুন।আমীন।

No comments:

Post a Comment