Friday, September 18, 2015

সৈয়দ আহমদ বেরলভী ও ইসমাঈল দেহলভী ছিলেন ইংরেজদের দালাল

সত্যান্বেষী নবী প্রেমিক বন্ধুগণ!
সৈয়দ আহমদ ও ইসমাইল দেহলভী সাহেবের- 'সিরাতে মুস্তাকিম' ও 'তাকভীয়াতুল ঈমান' বক্তব্যের দ্বারা এটাই প্রতীয়মান হয় যে,ওরা জেনে শুনে উদ্দ্যেশ্য প্রণোদিতভাবে যা শিরকে জলী (স্পষ্ট শিরক) নয় অথচ তিনি তাকে শিরকে জলী (স্পষ্ট শিরিক) লিখে দিয়েছেন এবং তিনি এ তথ্য নিজেই স্বীকার করে নিয়ে বললেন,এটা প্রকাশ হওয়ার পর মুসলমানদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিবে।

এতে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে এই কিতাবটি লেখার কারণ কি? যা স্পষ্ট শিরিক নয় তা স্পষ্ট শিরিক বললেন কেনো? এর জবাবে প্রত্যেক গুণী জ্ঞানী নবী প্রেমিক মুসলমানগণ বলতে বাধ্য হবেন,তাদের একমাত্র উদ্দ্যেশ্য ছিলো মুসলমানদের ঐক্যকে বিনষ্ট করা এবং তাদের মন আজাদী আন্দোলনের প্রস্তুতি থেকে অন্যদিকে ফিরিয়ে দেওয়া,কারণ ওরা ছিলেন ইংরেজদের মদদপুষ্ট দালাল।

কোন কোন লেখক মৌলভী ইসমাইল দেহলভী ও তার পীর সৈয়দ আহমদ বেরলভীকে ইংরেজবিরোধী মুজাহিদ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।অথচ তারা উভয়ের বক্তব্য দ্বারা প্রমাণিত হয় তারা ইংরেজদের বিরুদ্ধে ছিলেন না।বরং ইংরেজদের পক্ষে এবং আজাদী আন্দোলনের প্রস্তুতির বিরুদ্ধে ছিলেন।
নিন্মে  ইসমাইল দেহলভী সাহেবের বক্তব্যের প্রতি লক্ষ্য করুন-

(১) মির্জা হায়রত দেহলভী প্রণীত ‘হায়াতে তাইয়িবা’ নামক মৌলভী ইসমাইল দেহলভীর জীবনী গ্রন্থে (২৭১ পৃষ্ঠা মাতবায়ে ফারূকী) উল্লেখ রয়েছে-

کلکتہ میں جب مولانا اسمعیل نے جھاد کا وعظ فرمانا شروع کیا اور سکھوں کے مظالم کی کیفیت پیش کی تو ایک شخص نے دریافت کیا آپ انگریزوں پر جھاد کا فتوی کیوں نہیں دیتے؟ آپ نے جواب دیا ان پر جھاد کرنا کسی طرح واجب نہیںـ ایک تو ان کی ھم رعیت ہیں دوسرے ہمارے مذھبی ارکان کے ادا کرنے میں وہ ذرا بھی دست اندازی نہیں کرتے ـ ھمیں ان کی حکومت میں ہر طرح آزادی ھے
بلکہ اگر ان پر کوئ حملہ وار ہو تو مسلمانوں پر فرض ھے کہ وہ اس سے لڑیں اور اپنی گور نمنٹ برطانیہ پر آنچ نہ آنے دیں 
অর্থাৎ ‘মাওলানা ইসমাইল দেহলভী যখন কলিকাতায় জিহাদ সংক্রান্ত ওয়াজ শুরু করলেন এবং শিখদের অত্যাচার সম্পর্কে বিবরণ দিচ্ছিলেন, তখন এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন আপনি ইংরেজদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার ফতওয়া দিচ্ছেন না কেনো? তিনি (মৌলভী ইসমাইল দেহলভী) উত্তরে বললেন- তাদের বিরুদ্ধে (ইংরেজদের বিরুদ্ধে) কোন অবস্থাতেই জিহাদ করা ওয়াজিব নয়। একদিকে আমরা হচ্ছি তাদের প্রজা। অপরদিকে আমাদের ধর্মীয় কোন কাজ সম্পন্ন করতে তারা কোন বাধা দিচ্ছে না।তাদের শাসনে (ইংরেজ শাসনে) আমাদের সর্বপ্রকার স্বাধীনতা রয়েছে।যদি ইংরেজদের উপর কোন বহিশত্রু“ আক্রমন করে, তখন এ দেশীয় মুসলমানদের উপর ফরজ তারা যেন আক্রমণকারীদেরকে প্রতিহত করে এবং ইংরেজ সরকারের যেন কোন ক্ষতি করতে না পারে।’

উল্লেখ্য যে,মীর্জা হায়রত দেহলভী প্রণীত ‘হায়াতে তাইয়িবা’ কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে মাওলানা মঞ্জুর নোমানী সাহেব ‘মাসিক আল ফোরকান ১৩৫৫ হিজরি শহীদ সংখ্যা ৫১ পৃষ্ঠায় বলেন-

کتاب مرزا حیرت مرحوم کی حیات طیبہ ھے شاہ اسمعیل شھید کی نہایت مضبوط سوانح عمری ھے
অর্থাৎ ‘মীর্জা হায়রত দেহলভী লিখিত ‘হায়াতে তাইয়িবা’ শাহ ইসমাইল দেহলভীর জীবনী হিসেবে অত্যান্ত মজবুত গ্রন্থ।’

(২) মুন্সি মুহাম্মদ জাফর থানস্রী প্রণীত ‘সাওয়ানেহে আহমদী’ নামক গ্রন্থেও ৪৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে-

یہ بھی  صحیح روایت ھے کہ اثناۓ قیام کلکتہ میں جب ایک روز مولانا  محمد  اسمعیل  دھلوی  وعظ فرمارھے تھے ایک شخص نے مولانا سے یہ فتوی پوچھا کہ سرکار انگریزی  ير جھاد کرنا درست ھے یا نہیں ؟ اس کے جواب میں مولانا نے فرما یاکہ اسی بے روریا اور غیر متعصب سرکار پر کسى طرح بھی جھاد دورست نہیں
অর্থাৎ ‘ইহাও একটি সহী শুদ্ধ বর্ণনা যে,কলিকাতা অবস্থানকালে একদা মাওলানা ইসমাইল দেহলভী ওয়াজ করছিলেন।হঠাৎ এক ব্যক্তি মাওলানা ইসমাইল দেহলভীকে ফতওয়া জিজ্ঞাসা করলো,ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে জিহাদ করা সঠিক কি না? প্রতি উত্তরে মাওলানা(ইসমাইল দেহলভী)বললেন,এ ধরণের সচেতন এবং সংস্কারক সরকারের বিরুদ্ধে জিহাদ করা কোন অবস্থাতেই সঠিক হবে না।’

উল্লেখ্য যে,মুন্সি জাফর থানস্রী লিখিত ‘সাওয়ানেহে আহমদী কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভী সিরতে সৈয়দ আহমদ গ্রন্থেও ৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-

سوانح احمدی وتواریخ عجیبہ اردو پھلی کتاب سید صاحب کے حالات میں مقبول و مشھور ھے جس سے سید صاحب کے حالات کی بہت اشاعت ھوئ
অর্থাৎ ‘সাওয়ানেহে আহমদী’ এবং তাওয়ারিখে আজিবা গ্রন্থদ্বয়ই উর্দু ভাষায় প্রথম কিতাব,যা সৈয়দ আহমদ বেরলভী সাহেবের জীবনী সম্পর্কে গ্রহণযোগ্য ও প্রসিদ্ধ কিতাব। যা দ্বারা সৈয়দ আহমদ সাহেবের জীবনী খুব বেশি প্রচারিত হয়েছে।

(৩) ফুলতলী সাহেবের বড় সাহেবজাদা মাওলানা মো: ইমাদউদ্দিন চৌধুরী ফুুলতলী সিলেট, সৈয়দ আহমদ শহীদ বেরলভী জীবনী ২য় সংস্করণ ৪৮ ও ৪৯ পৃষ্ঠায় লিখেন-

এক ইংরেজ আতিথ্য,এশার নামাযের পর নৌকার দিক দর্শকরা খবর দিলো মশালধারী কয়েকজন লোক নৌকার দিকে এগিয়ে আসছে।সৈয়দ সাহেব খবর নিয়ে জানতে পারলেন জৈনেক ইংরেজ ব্যবসায়ী সৈয়দ সাহেবের কাফেলার জন্য খাদ্যদ্রব্য নিয়ে আসতেছেন।কিছুণের মধ্যে ইংরেজ ভদ্রলোক কয়েকজন লোকসহ সৈয়দ সাহেবের সামনে উপস্থিত হয়ে নিবেদন করলেন,জনাব তিনদিন থেকে আপনার শুভাগমনের অপেক্ষায় ছিলাম।আজ সৌভাগ্যক্রমে আপনি তাশরীফ এনেছেন।আমার এই নগন্য দ্রব্যগুলি গ্রহণ করুন।সৈয়দ সাহেব কাফেলাসহ ইংরেজের আতিথ্য গ্রহণ করলেন।’

উপরোক্ত তথ্যাবলী থেকে সুষ্পষ্টভাবে প্রমাণিত হল যে,মৌলভী ইসমাইল দেহলভী ও তার পীর সৈয়দ আহমদ বেরলভী সাহেব ইংরেজবিরোধী ছিলেন না বরং ইংরেজদের পক্ষেই কাজ করেছেন।ইংরেজের সাহায্য সহযোগিতা গ্রহণ করে সুকৌশলে মুসলমানদের চোখে ধুলী দিয়ে ইংরেজদের দালালী করেছেন।তিনি এবং তার পীর সৈয়দ আহমদ বেরলভী সাহেব শিখদের বিরুদ্ধে যে লড়াই বা যুদ্ধ করেছিলেন তা ইংরেজদের স্বার্থেই করেছিলেন। কারণ ইংরেজরা চেয়েছিলো স্বাধীন শিখ জাতির শক্তিকে ও দুর্বল করে দেওয়া।

এ প্রসঙ্গে ‘কলকাতা কেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবী’ পুস্তকের ৯০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে-

‘ওহাবী ও শিখদের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে উভয় পক্ষেরই শক্তি ক্ষয় হোক এটাই ইংরেজদের কাম্য ছিলো।
এই প্রেক্ষিতে ১৮৩১ সালে ওহাবী নেতা সৈয়দ আহমদের ইন্তেকাল হয় এবং ১৮৩৯ সালে রণজিত সিং এর মৃত্যুর পর লর্ড ডালহৌসী একে একে পাঞ্জাব ও সিন্ধু এলাকা ইংরেজ রাজত্বের অন্তুর্ভূক্ত করে নেয়।’

এতে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো মৌলভী ইসমাইল দেহলভী ও তার পীর সৈয়দ আহমদ বেরলভীর আন্দোলনের দ্বারা ইংরেজরাই লাভবান হয়েছে এবং তাদের রাজত্বের পরিধি ও শক্তি আরো বৃদ্ধি পেয়েছিলে।অপরদিকে এই আন্দোলনের দ্বারা মুসলমানদের জান-মালের বহু ক্ষয় ক্ষতি হয়েছিলো।

No comments:

Post a Comment