Wednesday, September 23, 2015

ফাতাওয়ায়ে মমতাজিয়া (২য় খন্ড) মূর্খ-জাহিল মুফতিদের বিভ্রান্তিকর লেখনীর দলিলভিত্তিক জওয়াব

দারুল ইফতা

সিরাজনগর দরবার শরীফ এর পক্ষ থেকে ফাতাওয়া- ০২

(২য় পর্ব)

بسم الله الرحمن الرحيم
نحمده ونصلى على رسوله الكريم
কুমিল্লা শাহপুর দরবার থেকে ‘আল কাওকাব’ নামক একটি বুলেটিন ৮ প্রকাশিত হয়েছে।এ বুলেটিন ৮ এর ৩০-৩২ পৃষ্ঠা পর্যন্ত জনৈক মুফতি (?) আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের সর্বজনমান্য আকিদার পরিপন্থী কতগুলো কুফুরি আকিদাকে সুন্নী ছদ্মাবরণে প্রচার করে সরলপ্রাণ সুন্নী মুসলমানগণকে বিভ্রান্ত করার পায়তারা চালাচ্ছে।আমার লিখিত পুস্তক ‘হাকিকতে নূরে মোহাম্মদী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ৪টি উদ্ধিৃতির অংশ বিশেষ উল্লেখ করত: এর অপব্যাখ্যা করে সেটাকে ‘বিভ্রান্তিমূলক কুফুরি মতবাদ’ বলার দুঃসাহস দেখাচ্ছে।

নিম্নে এ ৪টি উদ্ধিৃতির সঠিক ব্যাখ্যা পেশ করলাম।যাতে আমার লেখার উপর তার অভিযোগ অসার প্রমাণিত হয়।সে আমার লিখিত বই থেকে উল্লেখ করেছে-

(১) সকল ঈমানদার মুসলমানের ঈমান সহিহ শুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত হলো,আল্লাহর হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম جنس بشر ‘জিনসে বশর’ জাতিতে মানুষ এবং তিনি ছিলেন আরবি এ জ্ঞান সকল মুসলমানের থাকতে হবে এবং মানতে হবে অন্যথায় নিঃসন্দেহে কাফির বলে সাব্যস্ত হবে। (হাকিকতে নূরে মোহাম্মদী ১২৪ পৃষ্ঠা দ্র:)

ফতোয়াবাজ মুফতি (?) রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে, جنس بشر ‘জিনসে বশর’ শুধুমাত্র একথাটি উল্লেখ করে সুন্নী সমাজকে ধোকা দেয়ার অপকৌশল চালাচ্ছে। হুজুরেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো একদিকে জিনসে বশর অপরদিকে তিনি আপাদমস্তক নূর,আইনী সৃষ্টি নূর,যার কোন ছায়া ছিল না।অথচ সে যে উদ্ধিৃতি উল্লেখ করেছে এর একলাইন উপরে ৭নং পয়েন্টে এবং এর ৭ লাইন নিচে ৯ নং পয়েন্টে আমি আল্লাহর হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে بشر ‘বশর’ বা বেমিসাল বেনজির মানুষ।সুরত বা আকৃতির দিক দিয়ে তোমাদের মত অর্থাৎ আকৃতিতে বা দেখতে আমাদের মত মানুষ কিন্তু সৃষ্টিতে নূর,আপাদমস্তক নূর,আইনী নূর,যার ছায়া ছিল না।কেননা তাঁর জিসিম মোবারক لطافت ‘লাতাফাত’ বা সুক্ষ্ণ।তিনি জাতিতে মানুষ সৃষ্টির মধ্যে যার কোন তুলনা নেই তাও উল্লেখ করেছি।উদ্ধিৃত অংশের উপরে এবং নিচের দিকে কুঠিল নজর বা বাকা চোখে থাকিয়ে কথিত মুফতি (?) যে প্রতারণা করেছে তাই প্রমাণিত হয়।

উল্লেখিত ১ নং উদ্ধিৃতি আমার নিজস্ব নয়।বরং এ উক্তি সর্বজন মান্য মুফাসসির তাফসিরে রুহুল মা’য়ানীর প্রণেতা আল্লামা সৈয়দ মাহমুদ আলুছী হানাফী বাগদাদী আলাইহির রহমত ও আল্লামা শায়খ ওয়ালী উদ্দিন ইরাকী আলাইহির রহমতদ্বয়ের বক্তব্য।যা সূরায়ে আলে ইমরানের ১৬৪ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা আলুছী বাগদাদী আলাইহির রহমত আল্লামা শায়খ ওয়ালী উদ্দিন আলাইহির রহমত এর উদ্ধিৃতি দিয়ে তাঁর তাফসিরে রুহুল মা’য়ানী গ্রন্থে সবিস্তার আলোচনা করেছেন।যা আমার লিখিত ‘হাকিকতে নূরে মোহাম্মদী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামক পুস্তকের ৯৪-৯৫ পৃষ্ঠাব্যাপী ‘তাফসিরে রুহুল মা’য়ানী’র এবারতসহ বিস্তারিত আলোচনা করেছি।যদি সন্ধিহান হন তাহলে সুস্থ মনমানসিকতায় একবার দেখে নিতে পারেন।নিম্নে তা হুবহু তুলে ধরা হলো-

وقد سئل الشيخ ولى الدين العراقى هل العلم بكونه صلى الله عليه وسلم بشرا ومن العرب شرط فى صحة الايمان او من فروض الكفاية؟ فاجاب بانه شرط فى صحة الايمان- ثم قال: فلو قال شخص: او من برسالة محمد صلى الله عليه وسلم الى جميع الخلق لكن لا ادرى هل هو من البشر او من الملائكة او من الجن- اولا ادرى هل هو من العرب او العجم؟ فلا شك فى كفره لتكذيبه القران وجحده ما تلقته قرون الاسلام خلفا عن سلف وصار معلوما بالضرورة عند الخاص والعام-
ভাবার্থ: শায়খ ওলিউদ্দিন ইরাকী আলাইহির রহমতকে জিজ্ঞাসা করা হয়ে ছিলো যে,রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে بشرا ومن العرب জাতিতে মানব এবং তিনি আরবি এ সম্পর্কে জ্ঞান রাখা কি ঈমান বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত অথবা তা কি ফরজে কিফায়া? তদোত্তরে তিনি বলেন- নিশ্চয় আল্লাহর হাবিবকে জাতিতে মানব এবং তিনি আরবীয় সম্পর্কে জ্ঞান রাখা বিশুদ্ধ ঈমানের জন্য শর্ত।অতঃপর তিনি বলেন- যদি কোন ব্যক্তি বলেন যে, আমি বিশ্বাস করি বা ঈমান রাখি হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমগ্র সৃষ্টির জন্য রাসূল হয়ে প্রেরিত হয়েছেন কিন্তু আমি জানি না যে,তিনি কি মানব জাতি না ফেরেশতা জাতীয়,না জ্বিন জাতীয় অথবা আমি জানি না তিনি কি আরবীয় না অনারবীয়? (উত্তরে তিনি ফতওয়া প্রদান করে বলেন) فلا شك فى كفره لتكذيبه القران ঐ ব্যক্তির কুফরি সম্পর্কে কোন সন্দেহ নেই কেননা সে কোরআনকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করলো।’

(২) সে আমার লিখিত বই থেকে আরো উল্লেখ করেছে - ‘তাঁকে মানুষ বলে ঈমান না রাখলে নিঃসন্দেহে কাফের।’

এ উক্তিটিও আমার নিজস্ব নয়। উদ্ধৃত অংশের ১ লাইন উপরে এবং এর ১ লাইন নিচে লিখা রয়েছে- ‘আল্লাহর হাবিব সৃষ্টিতে নূর, আপাদমস্তক নূর যার ছায়া ছিল না আইনী নূর কিন্তু جنس بشر ‘জিনসে বশর’ বা জাতিতে মানুষ কিন্তু সৃষ্টির মধ্যে তাঁর কোন তুলনা নেই।তাঁকে আমাদের মত মানুষ বা দশজনের মধ্যে একজন মানুষ বলা বা আকিদা রাখা কুফুরি।তিনি হচ্ছেন اكمل بشر ‘আকমলে বশর’ বা পূর্ণাঙ্গ মানুষ, خير البشر ‘খাইরিল বশর’ বা সর্বশ্রেষ্ঠ মানব বা মহামানব।তিনি অলৈাকিক মহামানব,যার কোন তুলনা হয় না। যার দেহ মোবারকের কোন ছায়া ছিল না।এ লেখাগুলো আপনার চোখে ধরা পড়ল না কেন? আমি মুফতিকে (?) বলতে চাই,মুফতি সাহেব! আপনার চোখে দেখার পাওয়ার যদি কমে গিয়ে থাকে তাহলে ডাক্তারি করিয়ে চোখে চশমা দিয়ে আমার লেখা কিতাবখানা পাঠ করলে আপন ঈমান নসিব হবে।অন্যথায় কুফুরি ও গোমরাহী অতল গহ্বরে ডুবিয়ে যাবেন।

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের বিশুদ্ধ আকিদা হলো রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিঃসন্দেহে বেনজির বেমিসাল সর্বশ্রেষ্ঠ মানব।যদি কেউ রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র বাশারিয়াত বা মানবত্বকে অস্বীকার করে তবে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের মতে সে কাফের হয়ে যাবে।অনুরূপ কেউ যদি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমাদের মতো মানুষ বলে বিশ্বাস করে সেও কাফেরদের দলভুক্ত হবে।

নেত্রকোণা নিবাসী মরহুম মাওলানা গাজী আকবর আলী রেজভী সুন্নী আলকাদেরী সাহেবও এই মাসআলার ব্যাপারে আমাদের সাথে ঐকমত্য রয়েছেন।তার লিখিত ও প্রকাশিত বই-পুস্তকসমূহ এর জলন্ত প্রমাণ। তার লিখিত পুস্তকের মধ্যে ‘নূরে খোদা রহমতে আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা ঈমান ভাণ্ডার (১ম খণ্ড), ‘আছমতে আম্বিয়া বা ঈমান ও মারেফাত ভাণ্ডার বিংশ খণ্ড, ‘আত্তাহিয়্যাতের রহস্য ও কলিমায়ে তাওহিদের তাফসির’ এবং ‘হুক্কার জাতির উচ্ছেদ ও গান-বাজনার পতন’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

এসব বই-পুস্তকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাশারিয়াত সম্পর্কে তিনি যে লিখিত বক্তব্য প্রদান করেছেন তা নিম্নরূপ-

(ক) ‘নবী মানুষ জাতিতেই আসেন মানুষই হয়,জীন বা ফেরেস্তা নবী হয় না।ইহা এই দুনিয়ার নীতি বিধান।’ (ঈমান ও মারেফাত ভাণ্ডার বিংশ খণ্ড- ৮ পৃষ্ঠা)

(খ) ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানব সম্রাট।’ (গান-বাজনার পতন- ১৩ পৃষ্ঠা)

(গ) ‘নবীজির মতো মানুষ দুনিয়ায় নাই।’ (ঈমান ও মারেফাত ভাণ্ডার বিংশ খণ্ড- ১৭ পৃষ্ঠা)

(ঘ) ‘ফলকথা হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষ কিন্তু বেমিছাল মানুষ।দুনিয়ার মানুষের সঙ্গে হুজুরের তুলনা হইতে পারে না।’ (ঈমান ভাণ্ডার ১ম খণ্ড- ২৩ পৃষ্ঠা)

(ঙ) যারা ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বাশার বা মানুষ না মানে তবে (তারা) কাফের হবে। আমাদের মত বললে কাতল করা ওয়াজিব হয়ে যায়।’ (আত্তাহিয়্যাতের রহস্য- ১৩ পৃষ্ঠা)

(চ) ‘নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মানুষ বলিয়া ডাকা অথবা ভাই ইত্যাদির শব্দের দ্বারা ডাকা হারাম।যদি এহানতের অর্থাৎ তুচ্ছতার সহিত ডাকে তবে কাফের হইবে।কিতাব আলমগীরী। (ঈমান ও মারেফাত ভাণ্ডার- ৯ পৃষ্ঠা)

ফতোয়ায়ে আলমগীরী ২/২৮২ পৃষ্ঠা নতুন ছাপা ২/৪১১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে-

من قال لاادرى ان النبى صلى الله عليه وسلم كان انسيا اوجنيا يكفر كذا فى الفصول العمادى-
অর্থাৎ- যে ব্যক্তি বলে যে,আমি জানি না নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষ ছিলেন না জিন ছিলেন,সে ব্যক্তি কাফের হয়ে যাবে। যেমন ফুসুলুল ইমাদীতে এরূপ বর্ণনা রয়েছে।

ফাতাওয়ায়ে রেজভীয়া ৬ষ্ঠ খণ্ড ৬৭ পৃষ্ঠায় আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেজা খাঁন আলাইহির রহমত ফতওয়া প্রদান করে উল্লেখ করেন-

اور جو مطلقا حضور سے بشریت کی نفی کرے وہ کافر ہے- قال تعالی: قل سبحن ربى هل كنت الا بشرا رسولا
অর্থাৎ যে ব্যক্তি মতলকান হুজুরপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাশারিয়াত বা মানবত্ব অস্বীকার করবে,সে ব্যক্তি কাফের।

আল্লাহতা’য়ালা এরশাদ করেন- قل سبحن ربى هل كنت الا بشرا رسولا অর্থ: হে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনি বলুন,আমার প্রতিপালক অতি পবিত্র।আমি মানব রাসূল ছাড়া আর কিছুই নই। والله تعالى اعلم

(৩) আজব মুফতি (?) আমার লিখিত ‘হাকিকতে নূরে মোহাম্মদী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ৩৯ পৃষ্ঠা থেকে যে উদ্ধিৃতি দিয়েছেন ‘এর অর্থ এই নয় যে,আল্লাহতা’য়ালার নূর নবী সৃষ্টির ধাতু।আল্লাহতা’য়ালা কোন মাধ্যম ছাড়াই ‘কুন’ বলেছেন ‘ফাইয়াকুন’ নবীর নূর মোবারক সৃষ্টি হয়ে গেল।’ (হাকিকতে নূরে মোহাম্মদ- ৩৯ পৃষ্ঠা দ্র:)

এ কথাটিও শুধু আমার নিজস্ব বক্তব্য নয়।এটা আল্লামা জারকানী আলাইহির রহমত ‘শরহে মাওয়াহিবে লাদুনিয়া’ নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেন।নিম্নে তা প্রদত্ত হলো-

من نوره اضافة تشريف واشعار بانه خلق عجيب وان له شانا مناسبة ما الى الحضرة الربوبية على حد قوله تعالى ونفخ فيه من روحه وهى بيانية اى من نور هو ذاته لابمعنى انها مادة خلق نوره منها بل بمعنى تعلق الارادة به بلا واسطة شئ فى وجوده-
অর্থাৎ মিন নূরিহি তাঁর (আল্লাহর) নূর হতে বা নূর কর্তৃক ইহা ইজাফতে তাশরিফি বা সম্মানসূচক সম্বন্ধ এবং ইহা জানিয়ে দেয়া উদ্দেশ্য যে,ইহা সৃষ্টিজগতের এক আশ্চর্য বস্তু।ইহার একটি পৃথক শান রয়েছে আল্লাহতা’য়ালার দরবারে।এ শানটির একটি মুনাসিবত বা সাদৃশ্য হতে পারে আল্লাহতা’য়ালার ঐ বাণীর সাথে- ونفخ فيه من روحه আদম আলাইহিস সালামের দেহ মোবারকে তাঁর (আল্লাহর) রূহ ফুঁকলেন অর্থাৎ এখানে রূহের সম্বন্ধ আল্লাহতা’য়ালার দিকে সম্মানার্থে করা হয়েছে।
من نوره এর মধ্যে من ‘হরফে জার’ বয়ানিয়া, বর্ণনামূলক।من نوره এর মধ্যে যে নূর রয়েছে এর ব্যাখ্যায় আল্লামা জারকানি আলাইহির রহমত বলেন- اى من نور هو ذاته অর্থাৎ নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যে নূর দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে সে নূর আল্লাহতা’য়ালার জাত কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে,আল্লাহর জাত রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সৃষ্টির মাদ্দা বা মূল ধাতু, বরং ইহার অর্থ এই যে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নূর মোবারক সৃষ্টি করার মধ্যে আল্লাহতা’য়ালার এরাদা বা ইচ্ছার সম্পর্ক বেলা ওয়াসেতা বা সরাসরি অর্থাৎ কোন কিছুর মাধ্যম ছাড়াই সৃষ্টি করেছেন।
আল্লামা জারকানি আলাইহির রহমত এর উপরোক্ত দলিলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো আল্লাহতা’য়ালা হেকমতে কামেলার দ্বারা সর্বপ্রথম তাঁর হাবিবের নূর মোবারক সৃষ্টি করেছেন এবং সেই সৃষ্ট নূরের ডাইরেক্ট বা সরাসরি সম্পর্ক আল্লাহর জাতের সঙ্গে রয়েছে।
এজন্যই বলা হয়ে থাকে আল্লাহর হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম عین ذات الھی سے پیدا ہوا আল্লাহর প্রকৃত জাত কর্তৃক সৃষ্টি।
সুতরাং আল্লাহ হচ্ছেন নূরে হাকিকী অর্থ নূর সৃষ্টিকারী আর রাসূলেপাক হচ্ছেন সৃষ্টিতে নূর جنس ‘জিনছে’ বা জাতিতে বেনজির বেমিসাল বশর অর্থাৎ নূরানী মানুষ।

অনুরূপ বক্তব্য চতুর্দশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ আলা হযরত ইমাম আহমদ রেজা খাঁন বেরলভী আলাইহির রহমত ‘সিলাতুস সফা ফি নূরিল মোস্তফা’ নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেন-

ھاں عین ذات الھی سے پیدا ہونے کے یہ معنی نہیں کہ معاذ اللہ ذات الھی ذات رسالت کے لۓ مادہ ہے جیسے مٹی سے انسان پیدا ہوا عیاذ باللہ ذات الھی کا کوئ حصہ یا کل ذات نبی ہوگیا اللہ عز وجل حصے اور ٹکرے اور کسی کے ساتہ متحد ہوجانے یا کسی میں حلول فرمانے سے پاک ومنزہ ہے حضور سید عالم صلی اللہ علیہ وسلم خواہ کسی شئ کو جزء ذات الھی خواہ کسی مخلوق کو عین ونفس ذات الھی ماننا کفر ہے-
(আলা হযরত ইমাম আহমদ রেজা খাঁন আলাইহির রহমত عین ذات الھی سے پیدا ہوا ‘আইনে জাতে এলাহী ছে পয়দা হুয়া’ এর ভাবার্থ উদঘাটন করতে গিয়ে উল্লেখ করেন)
ভাবার্থ: আইনে জাতে এলাহি বা আল্লাহর প্রকৃত জাত থেকে (নূরে হাকিকী আল্লাহর জাত কর্তৃক) হাবিবে খোদা সৃষ্টি হওয়ার অর্থ এই নয় যে, আল্লাহর জাত রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জাত সৃষ্টির জন্য মাদ্দা বা মূল ধাতু। (নাউজুবিল্লাহ) যেমন মাটি দ্বারা মানুষ সৃষ্টি করা হয়েছে,অথবা ইহার অর্থ এই নয় যে,আল্লাহর জাতের কোন অংশ বা আল্লাহর কুল জাত নবী হয়ে গিয়েছেন।(নাউজুবিল্লাহ) মহান আল্লাহ অংশ,টুকরো এবং কোন কিছুর সাথে একীভূত হওয়া অথবা কোন বস্তুর মধ্যে হুলুল হওয়া থেকে পবিত্র।হুজুর সাইয়িদে আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনকি কোন বস্তুকে আল্লাহর জাতের অংশ এমনকি কোন সৃষ্টিকে প্রকৃত জাত ও নফসে জাতে এলাহি মানা বা আক্বিদা রাখা কুফুরি।’

উপরোক্ত দলিলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো, আল্লাহতা’য়ালার জাত মোবারক এমন একটি নূর যার কোন উদাহরণ বা মিসাল নেই।বেনজীর বেমিসাল নূর।যে নূরের অংশ হয় না,ভাগ হয় না, টুকরো হয় না,লাল,হলুদ,সবুজ এককথায় সৃষ্টির মধ্যে যার কোন তুল্য নেই।মোটকথা আল্লাহর নূর হলো নূরে হাকিকী এবং রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নূর হলো নূরে তাখলিকী বা আল্লাহর সৃষ্টি নূর।

এ সংক্রান্ত বক্তব্য আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতে বিজ্ঞ উলামায়ে কেরাম যেমন- আল্লামা আহমদ সাঈদ কাযেমী আলাইহির রহমত, হাকিমুল উম্মত আল্লামা মুফতি আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী আলাইহির রহমতও প্রদান করেছেন।

অথচ আমি আমার ‘হাকিকতে নূরে মোহাম্মদী’ এর ৪০ পৃষ্ঠায় আ’লা হযরত লিখিত ‘সিলাতুছ ছফা ফি নূরিল মোস্তাফা’ এর মূল এবারতসহ বিস্তারিত আলোচনা করেছি।দৃড় প্রত্যয়ের জন্য আরেকবার দেখে নিলে ঈমান তাজা হবে।

(৪) আমার লিখিত ‘হাকিকতে নূরে মোহাম্মদী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ১২৩ পৃষ্ঠা থেকে একটি খণ্ড বক্তব্য উল্লেখ করে সে লিখে- ‘আল্লাহর হাবিব নূরে মাজাজি।’

এ বক্তব্যও শুধুমাত্র আমার নয়।বরং এটা ইমাম ফখরুদ্দিন রাজী আলাইহির রহমত সূরা নূর এর ৩৫ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় ‘তাফসিরে কবীরে’ এ বক্তব্যই প্রদান করেছেন। যা আমার লিখিত হাকিকতে নূরে মোহাম্মদী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামক কিতাবের ৪৭ পৃষ্ঠায় বিস্তারিত আলোচনা করেছি। মনের শান্ত্বনার জন্য এবারতটুকু পুনরায় উল্লেখ করলাম।

সপ্তম শতাব্দীর ষষ্ঠ মুজাদ্দিদ আল্লামা ইমাম ফখরুদ্দিন রাজী আলাইহির রহমত (ওফাত ৬০৪ হিজরি) তদীয় ‘তাফসিরে কবির’ নামক কিতাবের ১২ নম্বর জিলদের ২৩ নম্বর জুজ এর ২৩০ পৃষ্ঠায় ইমাম গাজ্জালি আলাইহির রহমত এর- مشكوة الانوار ‘মিশকাতুল আনওয়ার’ নামক কিতাবের উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করেন-

والممكن لذاته يستحق العدم من ذاته والوجود من غيره والعدم هو الظلمة- ( ص ۲۳٠ جزء ۲۳)
ভাবার্থ: মুমকিন বিজ্জাত বা সত্ত্বাগত মুমকিন বলা হয় যা স্বয়ং অস্তিত্বশীল নয়,অন্যের দ্বারা অস্তিত্বশীল হয়,আর সকল عدم ‘আদম’ বা অস্তিত্বহীন হচ্ছে জুলমত বা অন্ধকার (যা নূরের বিপরীত)।

অতঃপর বলেন-

الحاصلة والوجود هو النور- فكل ما سوى الله مظلم لذاته مستنير بانارة الله تعالى (ص ۲۳٠ جزء ۲۳)
ভাবার্থ: সারকথা হচ্ছে, আল্লাহতা’য়ালার ওজুদই হচ্ছে একমাত্র নূর (বা হাকিকী নূর বমা’না منور ‘মুনাওইর’ নূর সৃষ্টিকারী) অতএব আল্লাহ ছাড়া অন্য সবকিছু সত্ত্বাগতভাবে জুলমত বা অন্ধকার এবং আল্লাহ প্রদত্ত নূরের দ্বারাই নূরান্বিত।এককথায় আল্লাহ হচ্ছেন ওয়াজিবুল ওজুদ যার আরম্ভ নেই, শেষও নেই যিনি বিজ্জাত মওজুদ অর্থাৎ নিজে নিজেই অস্তিত্বশীল।

অতঃপর আরো বলেন-

وعند هذا يظهر ان النور المطلق هو الله سبحانه وان اطلاق النور على غيره مجاز اذ كل ما سوى الله (ص ۲۳٠ جزء ۲۳)
ভাবার্থ: দলিলভিত্তিক আলোচনার দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, নিশ্চয় নূরে মতলক হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু তা’য়ালা।আল্লাহ ছাড়া অন্যের উপর নূরের এতলাক বা অন্য কাউকে নূর আখ্যায়িত করা মজাজ বা রূপক অর্থে প্রয়োগ হবে। (হাকিকী নূর একমাত্র আল্লাহতা’য়ালা।আল্লাহ তাঁর হাবিবের নূর মোবারক সর্বপ্রথম সৃষ্টি করেছেন।)

অতঃপর আরো বলেন-

فثبت انه سبحانه هو النور- وان كل ما سواه فليس بنور الاعلى سبيل المجاز (ص ۲۳٠ جزء ۲۳)
ভাবার্থ: অতএব,স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো,নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবহানাহু তা’য়ালাই একমাত্র নূর। আল্লাহতা’য়ালা ছাড়া অন্য যা কিছুই রয়েছে কাউকে নূর বলে আখ্যায়িত করা যায় না কিন্তু তা হবে মজাজ বা রূপক অর্থে নূর।

আল্লামা ফখরুদ্দিন রাজী আলাইহির রহমত এর উপরোক্ত বক্তব্যকে পরবর্তী সুন্নী উলামায়ে কেরামগণও গ্রহণ করেছেন।যেমন- আ’লা হযরত আল্লামা শাহ আহমদ রেজা খাঁন আলাইহির রহমত ‘সিলাতুছ ছফা ফি নূরিল মোস্তফা’ নামক কিতাবে আল্লাহর নূরকেই একমাত্র হাকিকী নূরে বলে অভিহিত করেছেন।আমার বক্তব্যও এটাই।

খোলাসা বয়ানঃ

জনৈক মুফতি (?) এর ফতোয়ায় যদি উপরোক্ত ৪টি বক্তব্য ঈমাননাশক বা বিভ্রান্তিকর কুফুরি মতবাদ হয়ে থাকে, তাহলে আমার প্রশ্ন- আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের বিজ্ঞ উলামায়ে কেরাম যেমন-

(১) আল্লামা ফখরুদ্দিন রাজী আলাইহির রহমত,
(২) আল্লামা শায়খ ওয়ালী উদ্দিন ইরাকী আলাইহির রহমত,
(৩) আল্লামা সৈয়দ মাহমুদ আলুছী হানাফি বাগদাদী আলাইহির রহমত,
(৪) আ’লা হযরত আল্লামা শাহ আহমদ রেজা খাঁন ফাজিলে বেরলভী আলাইহির রহমত,
(৫) হাকিমুল উম্মত আল্লামা মুফতি আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী আলাইহির রহমত,
(৬) গাজ্জালীয়ে যমান আল্লামা সৈয়দ আহমদ সাঈদ কাজেমী আলাইহির রহমত প্রমূখ প্রাজ্ঞ উলামায়ে কেরামদের বক্তব্যও বিভ্রান্তিমূলক বা ঈমাননাশক কুফুরি মতবাদ বলার দুঃসাহস দেখাবেন? যদি দেখান তাহলে আমরা বলতে পারি আপনি সুন্নী জামাতের অন্তর্ভুক্ত নন।আপনি খারেজি,রাফেজি ও ওহাবিদের ন্যায় বাতেল দলের অন্তর্ভুক্ত বলেই সুন্নী মুসলমানগণ মনে করবে।

ফতোয়ায় উল্লেখ রয়েছে ‘আল্লাহ পাকের নূর থেকে পেয়ারে নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সৃষ্টি করেছেন।’ এর সঠিক মর্মার্থ কী হবে, তথাকথিত মুফতি সাহেব আপনি কি অনুধাবন করেছেন? যদি এই অনুভুতি আপনার না-ই থাকে তাহলে এ ব্যাপারে মাহির বা বিজ্ঞ সুন্নী উলামায়ে কেরামদের বক্তব্য কী তা শুনুন,জানুন এবং বুঝার চেষ্টা করুন।

হাকিমুল উম্মত মুফতি আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী আলাইহির রহমত তদীয়- رساله نور ‘রিসালায়ে নূর’ এর ৭ পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছেন-

حضور صلی اللہ علیہ وسلم کے رب کا نور ہونے کے نہ تویہ معنی ہیں کہ حضور خدا کے نور کا ٹکرا ہیں نہ یہ کہ رب کا نور حضور کے نور کا مادہ ہے نہ یہ کہ حضور علیہ السلام خدا کی طرح ازلی ابدی ذاتی نور ہیں- نہ یہ کہ رب تعالی حضور میں سرایت کرگیا ہے تاکہ شرک وکفر لازم آے بلکہ صرف یہ معنی ہیں کہ حضور صلی اللہ علیہ وسلم بلا واسطہ رب سے فیض حاصل کرنے والے ہیں اور تمام مخلوق حضور واسطے سے رب کا فیض لینے والی-
অর্থাৎ ‘হুজুরপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খোদার নূর হওয়ার অর্থ এই নয় যে, (১)হুজুরপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খোদার নূরের টুকরো বা অংশ।এর অর্থ ইহাও নয় যে, (২)খোদার নূর হুজুরেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নূরের মাদ্দা বা মূল।এর অর্থ এটাও নয় যে, (৩)হুজুরপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খোদা তা’য়ালার ন্যায় আজালী আবাদী জাতি নূর। এর অর্থ ইহাও নয় যে, (৪)আল্লাহতা’য়ালা হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মধ্যে ‘ছরায়ত’ বা অনুপ্রবেশ করেছেন।এরূপ হলে শিরিক এবং কুফুর অবিবার্য হয়ে পড়বে।বরং শুধুমাত্র এর অর্থ এটাই হবে যে, (৫)হুজুরপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেলাওয়াছাতা বা মধ্যস্ততাবিহীন সরাসরি আল্লাহতা’য়ালার ফয়েজ অর্জনকারী এবং সমস্ত সৃষ্টি হুজুরপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মধ্যস্ততায় খোদার ফয়েজ গ্রহণকারী।’

এখানে আল্লামা মুফতি আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী আলাইহির রহমত হুজুরপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘নূরে খোদা’ এর ৫টি অর্থ করেছেন।তন্মধ্যে প্রথমোক্ত ৪টি অর্থকে কুফুরি ও শিরিক বলে অভিহিত করেছেন।আর সর্বশেষ তথা ৫নং অর্থটিকেই সঠিক অর্থ বলে মত প্রদান করেছেন।এককথায় হুজুরেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খোদার নূর এর সঠিক ঈমানী অর্থ হলো- নূরনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেলাওয়াছাতা বা মধস্থতাবিহীন সরাসরি আল্লাহর ফয়েজ অর্জনকারী।এবং সমস্ত সৃষ্টি হুজুরপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মধ্যস্থতায় খোদার ফয়েজ গ্রহণকারী।

গাজ্জালীয়ে যমান আল্লামা সৈয়দ আহমদ সাঈদ কাজেমী রাহমাতুল্লাহ আলাইহি তাঁর ميلاد النبى صلى الله عليه وسلم নামক গ্রন্থের ১৩ পৃষ্ঠায় হযরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু এর বর্ণিত হাদিস শরীফের মর্মে অনুরূপ ব্যাখ্যাই প্রদান করেছেন-

اس حدیث میں نور کی اضافت بیانیہ ہے اور نور سے مراد ذات ہے زرقانی جلد اول صفحہ٤٦ حدیث کے معنی یہ ہے کہ اللہ تعالی نے اپنے حبیب صلی اللہ علیہ وسلم کے نور پاک یعنی اپنی ذات مقدسہ سے پیدا فرمایا اس کے یہ معنی نہیں کہ معاذ اللہ اللہ تعالی کی ذات حضور علیہ السلام کی ذات کا مادہ ہے یا نعوذ باللہ حضور کا نور اللہ کے نور کا کوئ حصہ یا ٹکڑا ہے تعالی اللہ عن ذالک علوا کبیرا-
اگر کسی ناواقف شخص کا یہ اعتقاد ہے تو اسے توبہ کرنا فرض ہے- اس لئے کہ ایسا ناپاک عقیدہ خالص کفر و شرک ہے اللہ تعالی اس سے محفوظ رکھے-
অর্থাৎ উক্ত (হযরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত) হাদিসে নূর এর এজাফত এজাফতে বয়ানিয়া (বর্ণনামূলক সম্পৃক্ত) আর নূর দ্বারা ذات (যাত) বা সত্ত্বা বুঝানো হয়েছে। (জারকানী ১/৪৬ পৃষ্ঠা) এখন হাদিসের অর্থ এই যে,আল্লাহ তায়ালা তাঁর হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র নূর মোবারক স্বীয় যাত বা সত্ত্বা হতে সৃষ্টি করেছেন।(মা’য়াজাল্লাহ) কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে,আল্লাহ তায়ালার যাত বা সত্ত্বা হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যাত বা সত্ত্বার মাদ্দা বা মূল।(নাউজুবিল্লাহ) অথবা এ অর্থও নয় যে,হুজুরপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নূর মোবারক আল্লাহতায়ালার নূরের অংশ বা টুকরো।আল্লাহ তায়ালা তা হতে পবিত্র ও মহান।

যদি কোন অজ্ঞ লোকের এ বদ আকিদা থাকে,তবে তার উপর তাওবা করা ফরয।কেননা এরূপ নাপাক আকিদা নিরেট কুফুরি ও শিরক। মহান আল্লাহ তা’য়ালা যেন আমাদেরকে এ ধরনের বাতিল আকিদা থেকে হেফাযত রাখেন।’

আ’লা হযরত আল্লামা শাহ আহমদ রেজা খাঁন আলাইহির রহমত ‘ছিলাতুফ ছফা ফি নূরিল মোস্তাফা’ নামক কিতাবে ‘জারকানী’র উদ্ধিৃতি দিয়ে অনুরূপ বক্তব্যই প্রদান করেছেন।আমরাও তাদেরই অনুকরণে নূরে খোদা এর অনুরূপ বক্তব্যই প্রদান করে থাকি।যা কথিত মুফতিদের (?) গায়ে সয়না।বরং অজ্ঞতার কারণে হিংসার বশঃবর্তী হয়ে ইহাকে বিভ্রান্তিকর ঈমাননাশক মতবাদ বলে মুসলমানদের বিপথগামী ও কুফুরির দিকে ধাবিত করছে। আল্লাহপাক ঈমানের হিফাযতকারী। আমিন।

অধ্যক্ষ শেখ মোহাম্মদ আব্দুল করিম সিরাজনগরী
তারিখ-০১/০৯/১৫ইং  

No comments:

Post a Comment