Wednesday, September 23, 2015

ফাতাওয়ায়ে মমতাজিয়া (২য় খণ্ড) (মূর্খ-জাহিল মুফতিদের বিভ্রান্তিকর লেখনির দলিলভিত্তিক জওয়াব)

পীরে তরিকত রাহনুমায়ে শরিয়ত উস্তাযুল উলামা মুহিউসসুন্নাহ সুলতানুল মোনাজিরীন হযরতুল আল্লামা অধ্যক্ষ শেখ মোহাম্মদ আব্দুল করিম সিরাজনগরী (মা.জি.আ.) 

(১ম পর্ব)

ভূমিকা

بسم الله الرحمن الرحيم
نحمده ونصلى على رسوله الكريم
মহান আল্লাহ পাকের দরবারে শোকর আদায় করছি।যিনি আমাদেরকে আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে সৃষ্টি করে সৃষ্টিকুলের মূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উম্মত করেছেন।যিনি আমাদের দরদি ও নিদানকালে শাফায়াতের কাণ্ডারী।একখানা হাদিস শরীফে রয়েছে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
‘শেষ যামানায়  ঈমানের উপর স্থির থাকা এমনি কঠিন হবে যেমনিভাবে হাতের তালুতে একটি জলন্ত আংটা বা আগুনের টুকরো রাখার মতো। অর্থাৎ জলন্ত অগ্নির টুকরো হাতের তালুর মধ্যে রাখতে যে পরিমাণ কষ্ট হবে,শেষ যমানায় ঈমানের উপর স্থির থাকা তদ্রুপ কষ্ট হবে।’

শেষ যমানায় ইলিম কমতে থাকবে, মুর্খ-জাহেলদের প্রাদুর্ভাব বেশি পরিমাণে দেখা দিবে।লোকেরা মুর্খ-জাহেলদের খপ্পরে পড়ে যাবে।বিভিন্ন সমস্যায় পড়ে মুর্খ-জাহেলদের নিকট দ্বীনি মাসআলা-মাসায়েলের ফতোয়া জিজ্ঞেস করবে।ঐ সমস্ত মুর্খ-জাহেলরা ইলিম ব্যতিরেখে বিভিন্ন ফতোয়া দিতে থাকবে।এতে ফতোয়াদাতা ও ফতোয়াপ্রার্থী উভয়ই গোমরাহীর অতল গহ্বরে নিমজ্জিত হবে।

এমনি একযুগ সন্ধিণে ‘ফাতাওয়ায়ে মমতাজিয়া (২য় খণ্ড)’ প্রকাশ হতে যাচ্ছে যখন চারদিক থেকে শুধু শিরকি ও কুফুরির কালো ধোয়া ভেসে আসছে।যার কারণে মানুষ ধর্মীয় অঙ্গনে আজ মারাত্মক উদভ্রান্ত দিশেহারা হয়ে পড়ছে।কোনটা জায়েয-কোনটা নাজায়েয,কোনটা হালাল-কোনটা হারাম,কোনটা শিরিক-কোনটা কুফুরি-কোরআন সুন্নাহর সুগভীর জ্ঞানে অভিজ্ঞ উলামায়ে কেরামদের দলিলভিত্তিক ফয়সালার তোয়াক্কা না করেই মুর্খ-জাহেলদের মতো ফতোয়াবাজি করে সমাজের মধ্যে এমনি এক ফিতনা ফাসাদ সৃষ্টি করছে।যার দরুন তাদের ফতোয়ায় সঠিক আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের অনুসারীরা তথা সুন্নিয়তের অমূল্য রত্ন গাউছুল আ’জম সৈয়দ আব্দুল কাদির জিলানী (রাদিয়াল্লাহু আনহু),আল্লামা মোজাদ্দিদে আলফেসানী (রাদিয়াল্লাহু আনহু),আল্লামা শেখ আব্দুল হক মোহাদ্দিসে দেহলভী (আলাইহির রহমত), আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (আলাইহির রহমত), আল্লামা ফখরুদ্দিন রাজী (আলাইহির রহমত), আল্লামা শায়খ ওয়ালী উদ্দিন ইরাকী (আলাইহির রহমত), আল্লামা জারকানী (আলাইহির রহমত), আল্লামা সৈয়দ মাহমুদ আলুছী হানাফী বাগদাদী (আলাইহির রহমত), ত্রয়োদশ শতাব্দীর মোজাদ্দিদ শাহ আব্দুল আজিজ মুহাদ্দিদে দেহলভী (আলাইহির রহমত), চতুর্দশ শতাব্দীর মোজাদ্দিদ আ’লা হযরত আল্লামা ইমাম শাহ আহমদ রেজা খাঁন বেরলভী (আলাইহির রহমত), আল্লামা আহমদ সাঈদ কাযেমী ও হাকিমুল উম্মত আল্লামা মুফতি আহমদ ইয়ারখাঁন নঈমী (আলাইহিমার রহমত) প্রমূখ বিজ্ঞ উলামায়ে কেরামগণ কাফের সাব্যস্থ হয়ে পড়েন।যাদের পদাঙ্ক অনুসরণ ছাড়া সুন্নিয়তই কল্পনা করা যায় না,তারা যদি কুফুরির ভেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পড়েন,তাহলে এই বিশ্বে সুন্নি বলে আমরা কাদের নাম উচ্চারণ করবো?

তাবরানী শরীফের ১১/৫৮ পৃষ্ঠায় হযরত ইবনে আব্বাস(রাদিয়াল্লাহু আনহু)হতে বর্ণিত একখানা হাদিসে রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন-
'অর্থাৎ নিশ্চয় কিয়ামতের পূর্বে ঘোর অন্ধকার রাত্রি অতিবাহিত হওয়ার ন্যায় বিভিন্ন প্রকারের ফিতনা বের হতে থাকবে,লোক সকালে মু’মিন হবে,বিকালে কাফের হয়ে যাবে।আর বিকালে মু’মিন এবং সকালে কাফের হয়ে যাবে।এ ফিতনাবহুল যুগে একদল লোক পার্থিব স্বার্থসিদ্ধির জন্য নিজ দ্বীন ধর্মকে বিক্রি করে দিবে।’

আমরা এ হাদিসের সত্যতা পাই যে, বর্তমান যুগে পার্থিব স্বার্থসিদ্ধির জন্য একদল বিপদগামী লোক ইহুদি-নাসারার মদদপুষ্ট হয়ে আমাদের দেশে বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে,চটি চটি বই লিখে চার মাজহাব ও চার তরিকার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অপপ্রচার চালিয়ে আসছে এবং কোরআন সুন্নাহ ইজমাহ ভিত্তিক আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের সর্বজনমান্য আকিদাসমূহের পরিপন্থী বক্তব্য দিয়ে এদেশের মুসলমানদেরকে মনগড়াভাবে শিরিক কুফুরির ফতোয়া দিয়ে সাধারণ মুসলমানকেও সে দিকে ধাবিত করছে।

হযরত আউফ বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,তিনি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বলতে শুনেছেন যে,আমার উম্মতের মধ্যে যারা আল্লাহর সাথে কোন কিছুতে শরিক সাব্যস্ত না করে মৃত্যুবরণ করবে, তাদের জন্য রয়েছে শাফায়াত। (তারিখে কবীর- ১/১৮৫ পৃষ্ঠা)

শিরকি ও কুফুরি এবং আল্লাহর হাবিবের শানে বেআদবিমূলক আচরণ থেকে যারা মুক্ত থাকবে, তারাই নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং নেককার লোকের শাফায়াত লাভ করতে পারবে।যারা শিরিক ও কুফুরিতে লিপ্ত হয়ে পড়বে এবং নূর নবীর শান-মানের উপর কটুক্তি করবে তারা এ শাফায়াত থেকে বঞ্চিত থাকবে।

তাই মুর্খ-জাহিল ফতোয়াবাজ মুফতিদের খপ্পর থেকে দেশের সরলপ্রাণ সুন্নি মুসলমানদেরকে শিরকি ও কুফুরি এবং নূর নবীর শান বিরোধী কটুক্তি করা থেকে ফিরিয়ে ঈমান বাঁচানোর তাগিদে আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস ‘ফাতাওয়ায়ে মমতাজিয়া ২য় খণ্ড।’

শিরকি কুফুরি মতবাদকে যারা লালন করছেন সাথে সাথে আল্লাহর হাবিবের শান-মানের উপর কুটারাঘাত করছে তারা যদি আমার এ ফতোয়াটি পাঠ করে ঈমানী চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে কুফুরি শিরকি নবী বিদ্বেষী মতবাদ চেরে সঠিক আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকিদা ও আমলের দিকে ফিরে আসে তাহলেই আমার শ্রম স্বার্থক হয়েছে বলে মনে করবো।

اللهم ثبتنا على معتقدات اهل السنة والجماعة وامتنا فى زمرتهم واحشرنا معهم-  (مكتوبات امام ربانى)
অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমাদেরকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকিদার উপর অটল রাখুন,এ দলে অবস্থানরত অবস্থায় আমাদেরকে দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ার তাওফিক দান করুন এবং এ দলের (আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত) সঙ্গেই হাশর করুন।আমিন।

গ্রন্থকার

আল ইসতেফতা

আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ

সম্মানিত সুন্নি উলামায়ে কেরাম ও মুফতিয়ানে এজামগণের খেদমতে বিনীত আরজ এই যে,সম্প্রতি বি-বাড়িয়া,কসবা নিবাসী জনৈক মৌলভী ওহিদুর রহমান কেজভীর কয়েকটি চটি আকারের বই লিখে ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের সর্বসম্মত সহিহ আকিদার বিপরীত কতিপয় ভ্রান্ত আকিদা সংবলিত বক্তব্য প্রকাশ করে সরলমনা সুন্নি মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করছে।তার বিভ্রান্তিকর উক্তিগুলো থেকে কয়েকটি উক্তি নিম্নে প্রদত্ত হলো-

ওহিদুর রহমান কেজভীর শিরিকী কুফরী আকিদা যেমন-

(১) নূর নবীজির মাদ্দা হল আল্লাহ। আল্লাহ আল্লাহর জাত থেকে নূর নবীকে প্রকাশ করেছেন।(বাশার বলিল কাহারা? ২৭ পৃষ্ঠা)

(২) আল্লাহপাক যেমন নূরে কাদীম, নবীপাকও নূরে কাদীম।নূরে কাদীম হল আজালী,আবাদী অর্থাৎ চিরস্থায়ী।(ইসলাহে হাকিকতে নূরে মোহাম্মদী ১২ পৃষ্ঠা)

(৩) নবী পাকের বেলায় জন্ম বা সৃষ্টি এই শব্দগুলি ব্যবহার করা যাইবে না। (নূর মোবরকের হাকিকত ১৭ পৃষ্ঠা)

(৪) নবী পাকের শানের অবমাননা হবে ভাবিয়া আল্লাহ কোরআনুল কারীমে নবী পাকের শানে কোথাও খালাকা (সৃষ্টি করিয়াছেন) শব্দটি ব্যবহার করেন নাই। (নূর মোবারকের হাকিকত ১৯ পৃষ্ঠা)

(৫) নবীজিকে বাশার বলা যেই কথা, মাটির মানুষ বলা সেই কথা।(নূর মোবারকের হাকিকত ১৯ পৃষ্ঠা)

(৬) যাহারা নবীপাককে জাতিতে মানুষ লিখিয়াছে,তাহাদেরকে লক্ষ লক্ষ বার কাফের বলিলেও তাদের উপযুক্ত পাওনা শেষ হবে না।(নূর মোবারকের হাকিকত ১৯ পৃষ্ঠা)

(৭) সূরায়ে বনী ইসরাইলের ৯৩ নং আয়াত ‘হাল কুনতু ইল্লা বাশারার রাসূলা’ দ্বারা নবীজিকে জাতিতে মানুষ বলিলে কাফের হইবে।(বাশার বলিল কাহারা? ২৬ পৃষ্ঠা)

(৮) আল্লাহপাক কোথাও নবীপাককে বাশার বলেন নাই এবং আল্লাহপাক নবীপাকের বেলায় ইনসান শব্দটিও ব্যবহার করেন নাই। (বাশার বলিল কাহারা? ১৮ পৃষ্ঠা)

(৯)  من انفسكم এর তাফসির লিখতে গিয়ে اى من جنسكم  লিখিয়াছেন ইত্যাদি।কথাগুলো তাফসির কারকের মত।কোন তাফসিরকারকের মত দ্বারা কোরআনের দলিলকে রদ করা যায় না।(বাশারা বলিল কাহারা? ১৮ পৃষ্ঠা)

(১০) কোন কোন আলেম  من انفسكم এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নূর নবীজিকে جنس بشر লিখিয়াছেন। তাহারা মারাত্মক ভুল করিয়াছেন এবং তাহারা যদি এই ভুলকে সংশোধন না করিয়া এই ভুলের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে,তাহলে তাদের এই ভুল কুফুরীতে পরিণত হইবে। (ইসলাহে হাকিকতে নূরে মোহাম্মদী ১৯ পৃষ্ঠা)

(১১)  সূরা হজ্জ্বের আয়াত الله يصطفى من الملئكة رسلا ومن الناس ان الله سميع بصير এই আয়াতে আমাদের নূর নবীজি ব্যতীত অন্যান্য নবীদের কথা বলা হইয়াছে। (অর্থাৎ আমাদের নূর নবীজি এই আয়াতের অন্তর্ভুক্ত নন)

শরিয়তের মুফতি সাহেবানদের নিকট নিবেদন যে,উপরোল্লিখিত উক্তিগুলো আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের মাপ-কাঠিতে কি সাব্যস্থ হয়? এবং উক্তিকারীর উপর শরিয়তের কি হুকুম প্রযোজ্য হবে? সিরাজনগর দরবার শরীফের দারুল ইফতা থেকে সবিস্তার দলিলসহ জওয়াবদানে বাধিত ফরমাবেন।

নিবেদক
সৈয়দ রুহুল আমিন আল করিমী
কালাইনজুড়া,(সৈয়দবাড়ি)
বানিয়াচং, হবিগঞ্জ।মোহাম্মদ ঈমান আলী স্নানঘাট,বাহুবল, হবিগঞ্জ।

দারুল ইফতা
সিরাজনগর দরবার শরীফ এর পক্ষ থেকে ফাতাওয়া- ০১

بسم الله الرحمن الرحيم
نحمده ونصلى على رسله الكريم
জনৈক মৌলভীর লিখিত যে কয়টি চটি বই প্রকাশিত হয়েছে এর কয়েকটি আমাদের হস্তগত হয়েছে। এগুলোতে ইসলামের মৌলিক আকিদার পরিপন্থী অনেক কুফরি ও গোমরাহীপূর্ণ কথাবার্তায় ভরপুর।
প্রশ্নে উল্লেখিত এবং তার স্বহস্তে লিখিত শুধু ১১টি ঈমাননাশক জঘন্য উক্তি উল্লেখ করা হয়েছে মাত্র।

এর ১নং ও ২নং উক্তি হলো-

(১) ‘নূর নবীজির মাদ্দা হল আল্লাহ। আল্লাহ আল্লাহর জাত থেকে নূর নবীকে প্রকাশ করেছেন।’ (বাশার বলিল কাহারা? ২৭ পৃষ্ঠা)

(২) ‘আল্লাহপাক যেমন নূরে কাদীম, নবীপাকও নূরে কাদীম।নূরে কাদীম হল আজালী,আবাদী অর্থাৎ চিরস্থায়ী।’ (ইসলাহে হাকিকতে নূরে মোহাম্মদী ১২ পৃষ্ঠা)

উপরোক্ত আকিদা দু’টি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের মতে জঘন্য কুফুরি ও পরিস্কার শিরিক।যে ব্যক্তি এ ধরনের বাতিল আকিদা পোষণ করবে,সে ইসলামের গণ্ডি হতে বহির্ভুত হয়ে কাফির ও মুশরিকে পরিণত হয়ে যাবে।

দলিলসমূহ নিম্নরূপ-

দলিল-১

চতুর্দশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ আলা হযরত ইমাম আহমদ রেজা খাঁন বেরলভী (আলাইহির রহমত) ‘সিলাতুস সফা ফি নূরিল মোস্তফা’ নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেন-

ھاں عین ذات الھی سے پیدا ہونے کے یہ معنی نہیں کہ معاذ اللہ ذات الھی ذات رسالت کے لۓ مادہ ہے جیسے مٹی سے انسان پیدا ہوا عیاذ باللہ ذات الھی کا کوئ حصہ یا کل ذات نبی ہوگیا اللہ عز وجل حصے اور ٹکرے اور کسی کے ساتہ متحد ہوجانے یا کسی میں حلول فرمانے سے پاک ومنزہ ہے حضور سید عالم صلی اللہ علیہ وسلم خواہ کسی شئ کو جزء ذات الھی خواہ کسی مخلوق کو عین ونفس ذات الھی ماننا کفر ہے-
(আলা হযরত ইমাম আহমদ রেজা খাঁন আলাইহির রহমত عین ذات الھی سے پیدا ہوا ‘আইনে জাতে এলাহী ছে পয়দা হুয়া’ এর ভাবার্থ উদঘাটন করতে গিয়ে উল্লেখ করেন)
ভাবার্থ: আইনে জাতে এলাহি বা আল্লাহর প্রকৃত জাত থেকে (নূরে হাকিকী আল্লাহর জাত কর্তৃক) হাবিবে খোদা সৃষ্টি হওয়ার অর্থ এই নয় যে, আল্লাহর জাত রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জাত সৃষ্টির জন্য মাদ্দা বা মূল ধাতু।(নাউজুবিল্লাহ) যেমন মাটি দ্বারা মানুষ সৃষ্টি করা হয়েছে,অথবা ইহার অর্থ এই নয় যে,আল্লাহর জাতের কোন অংশ বা আল্লাহর কুল জাত নবী হয়ে গিয়েছেন।(নাউজুবিল্লাহ) মহান আল্লাহ অংশ,টুকরো এবং কোন কিছুর সাথে একীভূত হওয়া অথবা কোন বস্তুর মধ্যে হুলুল হওয়া থেকে পবিত্র।হুজুর সাইয়িদে আলম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)এমনকি কোন বস্তুকে আল্লাহর জাতের অংশ এমনকি কোন সৃষ্টিকে প্রকৃত জাত ও নফসে জাতে এলাহি মানা বা আক্বিদা রাখা কুফুরি।’

দলিল-২

হাকিমুল উম্মত মুফতি আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী আলাইহির রহমত তদীয়- رساله نور ‘রিসালায়ে নূর’ এর ৭ পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছেন-

حضور صلی اللہ علیہ وسلم کے رب کا نور ہونے کے نہ تویہ معنی ہیں کہ حضور خدا کے نور کا ٹکرا ہیں نہ یہ کہ رب کا نور حضور کے نور کا مادہ ہے نہ یہ کہ حضور علیہ السلام خدا کی طرح ازلی ابدی ذاتی نور ہیں- نہ یہ کہ رب تعالی حضور میں سرایت کرگیا ہے تاکہ شرک وکفر لازم آے بلکہ صرف یہ معنی ہیں کہ حضور صلی اللہ علیہ وسلم بلا واسطہ رب سے فیض حاصل کرنے والے ہیں اور تمام مخلوق حضور واسطے سے رب کا فیض لینے والی-
অর্থাৎ ‘হুজুরপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খোদার নূর হওয়ার অর্থ এই নয় যে,হুজুরপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খোদার নূরের টুকরো বা অংশ।এর অর্থ ইহাও নয় যে,খোদার নূর হুজুরেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নূরের মাদ্দা বা মূল।এর অর্থ এটাও নয় যে, হুজুরপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খোদা তা’য়ালার ন্যায় আজালী আবাদী জাতি নূর।এর অর্থ ইহাও নয় যে,আল্লাহতা’য়ালা হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মধ্যে ‘ছরায়ত’ বা অনুপ্রবেশ করেছেন।এরূপ হলে শিরিক এবং কুফুর অবিবার্য হয়ে পড়বে।বরং শুধুমাত্র এর অর্থ এটাই হবে যে, হুজুরপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেলাওয়াছাতা বা মধ্যস্ততাবিহীন সরাসরি আল্লাহতা’য়ালার ফয়েজ অর্জনকারী এবং সমস্ত সৃষ্টি হুজুরপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মধ্যস্ততায় খোদার ফয়েজ গ্রহণকারী।’

উক্ত এবারতে আল্লামা মুফতি আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী আলাইহির রহমত হুজুরপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘নূরে খোদা’ বা আল্লাহর নূর এর ৫টি অর্থ করেছেন।তন্মধ্যে প্রথমোক্ত ৪টি অর্থকে কুফুরি ও শিরিক বলে অভিহিত করেছেন।আর সর্বশেষ তথা ৫নং অর্থটিকে সঠিক অর্থ বলে মত প্রকাশ করেছেন।
এককথায় হুজুরেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খোদার নূর এর সঠিক ঈমানী অর্থ হলো- নূরনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেলাওয়াছাতা বা মধস্থতাবিহীন সরাসরি আল্লাহর ফয়েজ অর্জনকারী।এবং সমস্ত সৃষ্টি হুজুরপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মধ্যস্থতায় খোদার ফয়েজ গ্রহণকারী।
সুতরাং হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর নূর হওয়ার অর্থ এই নয় যে,আল্লাহর জাতের টুকরো বা অংশ এবং তাঁর সৃষ্টির মাদ্দা আল্লাহর জাত।

দলিল-৩

আল্লামা জারকানী আলাইহির রহমত ‘শরহে মাওয়াহিবে লাদুনিয়া’ নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেন-

من نوره اضافة تشريف واشعار بانه خلق عجيب وان له شانا مناسبة ما الى الحضرة الربوبية على حد قوله تعالى ونفخ فيه من روحه وهى بيانية اى من نور هو ذاته لابمعنى انها مادة خلق نوره منها بل بمعنى تعلق الارادة به بلا واسطة شئ فى وجوده-
অর্থাৎ মিন নূরিহি তাঁর (আল্লাহর) নূর হতে বা নূর কর্তৃক ইহা ইজাফতে তাশরিফি বা সম্মানসূচক সম্বন্ধ এবং ইহা জানিয়ে দেয়া উদ্দেশ্য যে,ইহা সৃষ্টিজগতের এক আশ্চর্য বস্তু।ইহার একটি পৃথক শান রয়েছে আল্লাহতা’য়ালার দরবারে।এ শানটির একটি মুনাসিবত বা সাদৃশ্য হতে পারে আল্লাহতা’য়ালার ঐ বাণীর সাথে- ونفخ فيه من روحه আদম আলাইহিস সালামের দেহ মোবারকে তাঁর (আল্লাহর) রূহ ফুঁকলেন অর্থাৎ এখানে রূহের সম্বন্ধ আল্লাহতা’য়ালার দিকে সম্মানার্থে করা হয়েছে।
من نوره এর মধ্যে من ‘হরফে জার’ বয়ানিয়া,বর্ণনামূলক।من نوره এর মধ্যে যে নূর রয়েছে এর ব্যাখ্যায় আল্লামা জারকানি আলাইহির রহমত বলেন- اى من نور هو ذاته অর্থাৎ  নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যে নূর দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে সে নূর আল্লাহতা’য়ালার জাত কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে,আল্লাহর জাত রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সৃষ্টির মাদ্দা বা মূল ধাতু,বরং ইহার অর্থ এই যে,নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নূর মোবারক সৃষ্টি করার মধ্যে আল্লাহতা’য়ালার এরাদা বা ইচ্ছার সম্পর্ক বেলা ওয়াসেতা বা সরাসরি অর্থাৎ কোন কিছুর মাধ্যম ছাড়াই সৃষ্টি করেছেন।
আল্লামা জারকানি আলাইহির রহমত এর উপরোক্ত দলিলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো আল্লাহতা’য়ালা হেকমতে কামেলার দ্বারা সর্বপ্রথম তাঁর হাবিবের নূর মোবারক সৃষ্টি করেছেন এবং সেই সৃষ্ট নূরের ডাইরেক্ট বা সরাসরি সম্পর্ক আল্লাহর জাতের সঙ্গে রয়েছে।

দলিল-৪

আল্লামা সৈয়দ আহমদ সাঈদ কাজেমী রহমতুল্লাহ আলাইহি তাঁর ميلاد النبى صلى الله عليه وسلم নামক গ্রন্থের ১৩ পৃষ্ঠায় হযরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু এর বর্ণিত হাদিস শরীফের ব্যাখ্যায় লিখেন-

اس حدیث میں نور کی اضافت بیانیہ ہے اور نور سے مراد ذات ہے زرقانی جلد اول صفحہ٤٦ حدیث کے معنی یہ ہے کہ اللہ تعالی نے اپنے حبیب صلی اللہ علیہ وسلم کے نور پاک یعنی اپنی ذات مقدسہ سے پیدا فرمایا اس کے یہ معنی نہیں کہ معاذ اللہ اللہ تعالی کی ذات حضور علیہ السلام کی ذات کا مادہ ہے یا نعوذ باللہ حضور کا نور اللہ کے نور کا کوئ حصہ یا ٹکڑا ہے تعالی اللہ عن ذالک علوا کبیرا-
اگر کسی ناواقف شخص کا یہ اعتقاد ہے تو اسے توبہ کرنا فرض ہے- اس لئے کہ ایسا ناپاک عقیدہ خالص کفر و شرک ہے اللہ تعالی اس سے محفوظ رکھے-
অর্থাৎ উক্ত (হযরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত) হাদিসে নূর এর এজাফত এজাফতে বয়ানিয়া (বর্ণনামূলক সম্পৃক্ত) আর নূর দ্বারা ذات (যাত) বা সত্ত্বা বুঝানো হয়েছে। (জারকানী ১/৪৬ পৃষ্ঠা) এখন হাদিসের অর্থ এই যে,আল্লাহ তায়ালা তাঁর হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র নূর মোবারক স্বীয় যাত বা সত্ত্বা হতে সৃষ্টি করেছেন।(মা'য়াজাল্লাহ) কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে,আল্লাহ তায়ালার যাত বা সত্ত্বা হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যাত বা সত্ত্বার মাদ্দা।(নাউজুবিল্লাহ) অথবা এ অর্থও নয় যে,হুজুরপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নূর মোবারক আল্লাহতায়ালার নূরের অংশ বা টুকরো।আল্লাহ তায়ালা তা হতে (অর্থাৎ অংশ, টুকরো এবং হুজুরের নূর সৃষ্টির মাদ্দা) পবিত্র ও মহান।
যদি কোন অজ্ঞ লোকের এ বদ আকিদা থাকে (যেমন নবীজির সৃষ্টির মাদ্দা হল আল্লাহ।আল্লাহ আল্লাহর জাতের অংশ থেকে নূর নবীকে প্রকাশ করেছেন ইত্যাদি) তবে তার উপর তাওবা করা ফরয।কেননা এরূপ নাপাক আকিদা নিরেট কুফুরি ও শিরক।মহান আল্লাহ তা’য়ালা যেন আমাদেরকে এ ধরনের বাতিল আকিদা থেকে হেফাযত রাখেন।
   
দলিল-৫

হযরত মোজাদ্দিদে আলফেছানী আলাইহির রহমত তদীয়-(منتخبات مكتوبات امام ربانى) ‘মুন্তাখাবাতে মাকতুবাতে ইমামে রাব্বানী’ নামক ১৪৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-

او تعالی قدیم وازلی است و‏‏‏غیر اورا قدم وازلیت ثابت نبود جمیع ملتیں بریں حکم اجماع فرمودہ اند وہر کسیکہ بقدم و آزلیت غیر حق جل وعلا قائل گشتہ است تکفیراو نمودہ اند-(مکتوب نمبر ۲۰۷)
উর্দু মাকতুবাতে ইমামে রাব্বানী ৬৪২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে-

عقیدہ ساتواں: اور حق تعالی قدیم اور ازلی ہے اور اسکے سوا کسی کے لئے قدم اور ازلیت ثابت نہیں ہے تمام مسلمانوں کا اسپر اجماع ہے اور جو کوئ حق تعالی کے سوہ قدیم اور ازلی ہونے کا قائل ہوا ہے وہ کافر ہے-
অর্থাৎ ‘আল্লাহ তায়ালা কাদীম আজালী তথা অনাদি-অনন্ত।আল্লাহ তা’য়ালা ছাড়া অন্য কেউ কাদীম ও আজালী তথা অনাদি-অনন্ত সাব্যস্থ নয়।এর উপর সমস্ত মুসলমানের ইজমা বা ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যদি কেউ আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত অন্য কাউকে কাদীম ও আজালী তথা অনাদি-অনন্ত এর প্রবক্তা হয় তবে সে কাফের হবে।

উপরোক্ত দলিলসমূহের আলোকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো নূরনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সৃষ্টির মাদ্দা বা মূল আল্লাহর জাত নয়।আল্লাহর জাতের অংশ বা টুকরোও নয়।কেননা আল্লাহর জাত আজালী আবাদী অনাদি-অনন্ত এবং চিরস্থায়ী।আল্লাহর জাত অংশ বা টুকরো হওয়া থেকে পবিত্র।যদি কেউ আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন সত্ত্বাকে আজালী আবাদী অনাদি-অনন্ত এবং চিরস্থায়ী মনে করে তবে সে সমস্ত মুসলমানের ইজমা বা ঐকমত্যে কাফের ও মুশরিক সাব্যস্থ হবে।

উল্লেখ্য যে, قديم ‘কাদীম’ শব্দটি দু’টি অর্থে ব্যবহৃত হয়।তন্মধ্যে একটি হলো- حقيقي ‘হাকিকী’ বা প্রকৃত অর্থে,যা অনাদি-অনন্ত,চিরস্থায়ী বুঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।যার আরম্ভও নেই শেষও নেই।এ অর্থে একমাত্র আল্লাহতা’য়ালাই قديم ‘কাদীম’ অন্য কেউ নয়। আল্লাহতা'য়ালা ছাড়া অন্য কাউকে এ অর্থে কাদীম বলে আকিদা পোষণ করলে মুশরিক ও কাফির হয়ে যাবে।
পক্ষান্তরে قديم ‘কাদীম’ শব্দটি মাযাযী বা রূপক অর্থেও কোন কোন সময় ব্যবহৃত হয়।যার অর্থ হবে পুরাতন,প্রাচীন ও বহু পূর্বের ইত্যাদি। যার আরম্ভ রয়েছে তবে অনেক পুরাতন ও প্রাচীন।যেমন কোরআন শরীফের আয়াতে কারীমা حتى عاد كالعرجون القديم অর্থাৎ ‘অবশেষে তা (চাঁদ) পুনরায় (তেমনি) হয়ে গেলো,যেমন খেজুরের পুরাতন শাখা। (সূরা ইয়াসিন, আয়াত নং ৩৯)।
এখানে قديم এর অর্থ পুরাতন নেয়া হয়েছে।অপর একটি আয়াতে কারীমা قالوا تالله انك لفى ضللك القديم অর্থাৎ (ইউসুফ আলাইহিস সালাম এর ভাইয়েরা বলল) আল্লাহর শপথ! আপনি আপনার ঐ পুরানো পুত্রস্নেহের মধ্যে বিভোর রয়েছেন। (সূরা ইউসুফ,আয়াত নং ৯৫।
এখানে قديم এর অর্থ রূপক অর্থে পুরাতন বুঝানো হয়েছে।

আল্লামা মুজাদ্দিদে আলফেসানী আলাইহির রহমত বলেন-

خلاصہ کلام یہ کہ ظھور قرآنی کا منشا صفات حقیقیہ سے ہے اور ظھور محمدی کا منشا صفات اضافیہ سے ہے تو لازما اسکو قدیم اور غیر مخلوق کھا ہے اور اسکو حادث اور مخلوق-
অর্থাৎ মুজাদ্দিদে আলফেসানী রাদিয়াল্লাহু আনহু তদীয় مكتوبات امام ربانى ‘মাকতুবাতে ইমামে রাব্বানী’ নামক কিতাবের ১৫৫৬ পৃষ্ঠা (উর্দু) মাকতুবাত নম্বর ১০০ উল্লেখ করেন-

মোদ্দাকথা হলো এই জহুরে কোরআনী এর منشا ‘মনসা’ বা কোরআনে পাকের বিকাশের উৎপত্তিস্থল আল্লাহপাকের হাকিকী সিফাত হতে এবং জহুরে মোহাম্মদী এর منشا ‘মনসা’  বা হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিকাশের উৎপত্তিস্থল হলো আল্লাহপাকের এজাফি বা সম্বন্ধিত সিফাত হতে।এহেতেু অনিবার্য কারণে কোরআনে পাককে قديم ‘কাদীম’ বা অনাদি ও অসৃষ্ট বলা হয়েছে।অপরদিকে হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে حادث ‘হাদিস’ বা সৃষ্ট বলা হয়েছে।
উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো- কোরআনেপাক قديم ‘কাদীম’ এবং হাবিবে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন حادث ‘হাদিস’ বা সৃষ্ট।

কথিত মৌলভীর ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮ নং উক্তি নিম্নরুপ-

(৩) নবী পাকের বেলায় জন্ম বা সৃষ্টি এই শব্দগুলি ব্যবহার করা যাইবে না। (নূর মোবরকের হাকিকত ১৭ পৃষ্ঠা)

(৪) নবী পাকের শানের অবমাননা হবে ভাবিয়া আল্লাহ কোরআনুল কারীমে নবী পাকের শানে কোথাও খালাকা (সৃষ্টি করিয়াছেন) শব্দটি ব্যবহার করেন নাই। (নূর মোবারকের হাকিকত ১৯ পৃষ্ঠা)

(৫) নবীজিকে বাশার বলা যেই কথা, মাটির মানুষ বলা সেই কথা। (নূর মোবারকের হাকিকত ১৯ পৃষ্ঠা)

(৬) যাহারা নবীপাককে জাতিতে মানুষ লিখিয়াছে,তাহাদেরকে লক্ষ লক্ষ বার কাফের বলিলেও তাদের উপযুক্ত পাওনা শেষ হবে না। (নূর মোবারকের হাকিকত ১৯ পৃষ্ঠা)

(৭) সূরায়ে বনী ইসরাইলের ৯৩ নং আয়াত ‘হাল কুনতু ইল্লা বাশারার রাসূলা’ দ্বারা নবীজিকে জাতিতে মানুষ বলিলে কাফের হইবে। (বাশার বলিল কাহারা? ২৬ পৃষ্ঠা)

(৮) আল্লাহপাক কোথাও নবীপাককে বাশার বলেন নাই এবং আল্লাহপাক নবীপাকের বেলায় ইনসান শব্দটিও ব্যবহার করেন নাই। (বাশার বলিল কাহারা? ১৮ পৃষ্ঠা)

কথিত মৌলভীর উপরোক্ত বক্তব্যের দ্বারা এ কথা সাব্যস্থ হয় যে,নূরনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানবজাতির অন্তর্ভুক্ত নন।এবং যারা নূরনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মানবজাতির অন্তর্ভুক্ত মানে মৌলভীর ফতোয়ায় তারা কাফের।এমনকি নূরনবীর শানে জন্ম (মিলাদ) বা সৃষ্টি (মাখলুক) শব্দদ্বয় পর্যন্ত প্রয়োগ করা অপরাধ বলে সাব্যস্থ হয়।(নাউজুবিল্লাহি মিন জালিক)

এ ব্যাপারে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের বক্তব্য হলো রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর অতি সম্মানিত প্রথম সৃষ্টি। তিনি নূর এবং বাশার উভয়ই।অর্থাৎ তিনি নূরানী বাশার বা মহামানব।তবে তিনি অন্য কোন মানুষের মতো নন। তিনি বেনজির বেমিসাল মানব।তাঁর সমতুল্য কোন মানব নেই।যে ব্যক্তি তাঁর নূরানিয়ত অস্বীকার করবে সে যেমন বাতিল দলের অন্তর্ভুক্ত হবে তেমনি যে ব্যক্তি রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাশারিয়াত বা মানব হওয়াকে অস্বীকার করবে সেও কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।

দলিলসমূহ নিম্নরূপ-

দলিল-১

আল্লামা সৈয়দ মাহমুদ আলুছি বাগদাদী আলাইহির রহমত তদীয় ‘তাফসিরে রুহুল মায়ানী’ নামক কিতাবের ৪ নং পারা ২য় জিলদের ১১৩ পৃষ্ঠায় لقد من الله على المؤمنين اذ بعث فيهم رسولا من انفسهم এর ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেন-

وقد سئل الشيخ ولى الدين العراقى هل العلم بكونه صلى الله عليه وسلم بشرا ومن العرب شرط فى صحة الايمان او من فروض الكفاية؟ فاجاب بانه شرط فى صحة الايمان- ثم قال: فلو قال شخص: او من برسالة محمد صلى الله عليه وسلم الى جميع الخلق لكن لا ادرى هل هو من البشر او من الملائكة او من الجن- اولا ادرى هل هو من العرب او العجم؟ فلا شك فى كفره لتكذيبه القران وجحده ما تلقته قرون الاسلام خلفا عن سلف وصار معلوما بالضرورة عند الخاص والعام-
ভাবার্থ: শায়খ ওলিউদ্দিন ইরাকী আলাইহিররহমতকে জিজ্ঞাসা করা হয়ে ছিল যে,রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে بشرا ومن العرب জাতিতে মানব এবং তিনি আরবি এ সম্পর্কে জ্ঞান রাখা কি ঈমান বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত অথবা তা কি ফরজে কিফায়া? তদোত্তরে তিনি বলেন- নিশ্চয় আল্লাহর হাবিবকে জাতিতে মানব এবং তিনি আরবীয় সম্পর্কে জ্ঞান রাখা বিশুদ্ধ ঈমানের জন্য শর্ত।অতঃপর তিনি বলেন- যদি কোন ব্যক্তি বলেন যে,আমি বিশ্বাস করি বা ঈমান রাখি হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমগ্র সৃষ্টির জন্য রাসূল হয়ে প্রেরিত হয়েছেন কিন্তু আমি জানি না যে,তিনি কি মানব জাতি না ফেরেশতা জাতীয়,না জ্বিন জাতীয় অথবা আমি জানি না তিনি কি আরবীয় না অনারবীয়? (উত্তরে তিনি ফতওয়া প্রদান করে বলেন) فلا شك فى كفره لتكذيبه القران ঐ ব্যক্তির কুফরি সম্পর্কে কোন সন্দেহ নেই কেননা সে কোরআনকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করলো।

দলিল-২

চতুর্দশ শতাব্দীর ত্রয়োদশ মুজাদ্দিদ আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেজাখাঁন বেরলভী আলাইহির রহমত (ওফাত ১৩৪০ হিজরি) তদীয় ‘নুরুল মোস্তফা’ কিতাবে উল্লেখ রয়েছে-

وہ بشر ہیں مگر عالم علوی سے لاکھ درجہ اشرف واحسن، وہ انسان ہیں مگر ارواح وملائکہ سے ہزار درجہ الطف، وہ خود فرماتے ہیں لست مثلکم میں تم جیسا نہیں رواہ الشیخان ویروی لست کھیئتکم، میں تمھارے ھیئت پرنہیں، ویروی ایکم مثلی، تم میں کون مجھ جیساہے- (نفی الفئ ص ۱٨)
ভাবার্থ: তিনি (নবীজী) বাশার বা মানব কিন্তু আলমে উলুবী থেকে লগুণ শ্রেষ্ঠ মর্যাদাবান ও সৌন্দর্যমণ্ডিত।তিনি (নবীজী) ইনসান কিন্তু আরওয়াহ বা আত্মাসমূহে ও ফেরেশতাগণ থেকেও সূক্ষ।তিনি নিজেই এরশাদ ফরমান- لست مثلكم অর্থাৎ আমি তোমাদের মত নই। (বোখারি,মুসলিম) আরো বর্ণিত আছে- لست كهيئتكم  অর্থাৎ আমি তোমাদের মত নই।আরেক বর্ণনায় রয়েছে- ايكم مثلى অর্থাৎ আমি তোমাদের কারো মত নই।(নাফিউল ফায়- ১৮ পৃষ্ঠা)

দলিল-৩

চতুর্দশ শতাব্দীর ত্রয়োদশ মুজাদ্দিদ আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেজাখাঁন বেরলভী আলাইহির রহমত (ওফাত ১৩৪০ হিজরি) তদীয় ‘নুরুল মোস্তফা’ কিতাবের ১৬-১৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন-

وہ بشر ہیں مگر عالم علوی سے لاکہ درجہ اشرف واحسن وہ انسان ہیں مگر ارواح وملا‎ئکہ سے ہزار درجہ الطف- وہ خود فرما تے ہیں لست كمثلكم  میں تم جیسا نہیں رواه الشيخان- ويروى لست كهيئتكم میں تمہاری ہیئت پر نہیں- ويروى ايكم مثلي- تم میں سے کون مجھ جیسا ہے-
آخر علامہ خفاجی کو فرماے سنا آپ کا بشر ہونا اور نور درخشندہ ہونا منا فی نہیں کہ اگر سمجھے تو وہ نور علی نور ہیں- پھر اس خیال فاسد پر کہ ہم سب کا سایہ ہوتا ہے ان کا بھی ہوگا تو ثبوت سایہ کا قائل ہونا عقل وایمان سے کس درجہ  دور پڑتا ہے-
محمد بشر لا كا لبشر
بل هو ياقوت بين الحجر
ভাবার্থ: তিনি (নবীজী) বাশার বা মানব কিন্তু আলমে উলভী থেকে লগুণ শ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাবান এবং তিনি ইনসান বা মানব কিন্তু আত্মাসমূহ ও ফেরেশতাগণ থেকে হাজার গুণ সুক্ষ।তিনি নিজেই এরশাদ ফরমান- لست مثلكم অর্থাৎ আমি তোমাদের মত নই।(বোখারি-মুসলিম) আরো বর্ণিত আছে- لست كهيئتكم  অর্থাৎ আমি তোমাদের মত নই।আরেক বর্ণনায় রয়েছে ايكم مثلى অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে আমার মতো কে আছো।পরিশেষে আল্লামা খুফফাজী বলতে শুনেছেন তাঁর বশর বা মানব হওয়া এবং তাঁর নূরানী হওয়ার মধ্যে কোন অন্তরায় নয়।তুমি এভাবে বুঝে নাও তিনি হলেন নুরুন আলা নূর। অতঃপর এ অহেতুক ধারনায় যারা বলে যে,আমাদের সবারই ছায়া আছে তো তাঁরও ছায়া হবে।তখন ছায়া প্রবক্তাদের উক্তি বিবেক ও ঈমান থেকে বহুদূর অতিক্রম করেছে।

(কবিতা) 

মুহাম্মাাদুন বাশারন লা কাল বাশারি
বাল হুয়া ইয়াকুতুন বাইনাল হাজারি

অর্থ: মুহাম্মাদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষ কিন্তু অন্যান্য মানুষের মতো নয়।বরং পাথরসমূহের মধ্যে যেমন ইয়াকুত পাথর।

দলিল-৪

আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেজাখাঁন বেরলভী রাহমাতুল্লাহ আলাইহি রচিত কাব্যগ্রন্থ ‘হাদায়েকে বখশিশ’ নামক কিতাবের ১/১১৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন-

اللہ کی سرتا بقدم شان ہیں
ان سا نہیں انسان وہ انسان ہیں یہ
قران تو ایمان بتاتاہے انہیں
ایمان یہ کھتاہے مری جان ہیں یہ
অর্থাৎ- (ক) নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হচ্ছেন আপাদমস্তক আল্লাহ তা’য়ালার অপার মহিমার এক অনন্য নিদর্শন। তিনি এমন এক ইনসান মানবকুলে যার ন্যায় কোন ইনসান নেই।

(খ) তাঁকে কোরআনপাক তো ঈমান বলে আখ্যায়িত করেছে।আবার ঈমান বলছে নবীজি তো আমার জান ও প্রাণ।

দলিল-৫

ফাতাওয়ায়ে রেজভীয়া ৬ষ্ঠ খণ্ড ৬৭ পৃষ্ঠায় আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেজা খাঁন আলাইহির রহমত ফতওয়া প্রদান করে উল্লেখ করেন-

اور جو مطلقا حضور سے بشریت کی نفی کرے وہ کافر ہے- قال تعالی: قل سبحن ربى هل كنت الا بشرا رسولا
অর্থাৎ যে ব্যক্তি মতলকান হুজুরপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাশারিয়াত বা মানবত্ব অস্বীকার করবে,সে ব্যক্তি কাফের। আল্লাহতা’য়ালা এরশাদ করেন- قل سبحن ربى هل كنت الا بشرا رسولا অর্থ: হে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনি বলুন,আমার প্রতিপালক অতি পবিত্র।আমি মানব রাসূল ছাড়া আর কিছুই নই। والله تعالى اعلم

দলিল-৬

শরহে আকাইদে নসফী (৯৪ পৃষ্ঠা পূরাতন ছাপা) উল্লেখ রয়েছে-

فقال وقد ارسل الله تعالى رسلا من البشر الى البشر مبشرين لاهل الايمان والطاعة بالجنة والثواب الخ-
ভাবার্থ: অতঃপর বলেন নিশ্চয় আল্লাহতা’য়ালা মানুষের মধ্যে থেকে মানুষ জাতির প্রতি রাসূল প্রেরণ করেছেন,ঈমানদার ও অনুগতদেরকে জান্নাত ও সওয়াবের সুসংবাদদাতা হিসেবে।

দলিল-৭

ত্রয়োদশ শতাব্দীর দ্বাদশ মুজাদ্দিদ শাহ আব্দুল আজিজ মুহাদ্দিসে দেহলভী আলাইহির রহমত (ওফাত ১২৩৯ হিজরি) তদীয় ‘তাফসিরে আজিজি’ নামক কিতাবের (২১৪ পৃষ্ঠা ২৯ পারা সূরায়ে জ্বিন) উল্লেখ রয়েছে- الا من ارتضى من رسول এ আয়াতের তাফসিরে বলেন-

خواہ از جنس بشر مثل حضرت محمد صلی اللہ علیہ وسلم الخ
অর্থাৎ হাবিবে খোদা হচ্ছেন جنس بشر জিনসে বশর বা মানবজাতি।

দলিল-৮

সপ্তম শতাব্দীর ষষ্ঠ মুজাদ্দিদ ইমাম ফখরুদ্দিন রাজি আলাইহির রহমত (ওফাত ৫৪৪ হিজরি) তদীয় ‘তাফসিরে কবীর’ (১৫ পারা বনী ইসরাইল) قل سبحان ربى هل كنت الا بشرا رسولا আয়াতের তাফসিরে উল্লেখ করেন-

(الوجه الثانى) من الاجوبة التى ذكرها الله فى هذه الاية عن هذه الشبهة هو ان اهل الارض لو كانوا ملائكة لوجب ان يكون رسولهم من الملائكة الجنس الى الجنس أميل واما لو كان اهل الارض من البشر اوجب ان يكون رسولهم من البشر  وهو المراد-
অর্থাৎ (দ্বিতীয় কারণ) আলাহপাক এই আয়াতে কারীমায় এরূপ সন্দেহ দূর করনার্থে উত্তর প্রদান করেছেন যে,তিনি (রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালাম)হচ্ছেন জমিনের অধিবাসী।যদি জমিনের অধিবাসী ফেরেশতা হতেন,তাহলে তাদের রাসূল ও তাদের স্বজাতি ফেরেশতা হতেন,যাতে তারা তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হয়।আর যেহেতু জমিনের অধিবাসী মানুষ জাতি তাহলে তাদের রাসূল ও হবেন তাদের স্বজাতি হতে।আয়াতে কারীমার উদ্দেশ্য হচ্ছে এটাই।অর্থাৎ তিনি হচ্ছেন জাতিতে বশর কিন্তু সৃষ্টির মধ্যে তিনি অতুলনীয়।

দলিল- ৯

একাদশ শতাব্দীর দশম মুজাদ্দিদ আল্লামা মুল্লা আলী ক্বারী আলাইহির রহমত (ওফাত ১০১৪ হিজরি) তদীয়- المورد الروى فى المولد النبوى ‘আল মাওরিদুর রাউয়ী ফি মাওলিদিন নববী’ নামক কিতাবের ৫৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-

الحاصل ان مجئ الرسول نعمة جسيمة- وكونه من جنس البشر منحة عظيمة وقال بعضهم قوله من انفسكم اى جنس العرب- وهو لا ينافى ما سبق-
সারকথা নিশ্চয় রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শুভাগমন এক মহান নিয়ামত বা বড় অনুগ্রহ।অথচ তিনি হচ্ছেন جنس البشر বা মানবজাতি।অনেকেই বলেন- আল্লাহর বাণী- من انفسكم এর তাফসির جنس العرب আরব দেশীয়।ইতোপূর্বে যা আলোচনা হয়েছিলো ইহা এর ব্যতিক্রম নয়। অর্থাৎ جنس البشر ও جنس العرب উভয় তাফসিরে কোন বৈপিরিত্ব নেই।

দলিল-১০

হানাফী মাযহাবের অন্যতম ভাষ্যকার ফকিহ আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রাহমাতুল্লাহ আলাইহি বলেন-

وحاصله انه قسم البشر الى ثلاثة اقسام (١) خواص كالانبياء- (٢) واوساط كالصالحين من الصحابة وغيرهم- (٣) وعوام كباقى الناس-
মোদ্দাকথা মানুষ তিন প্রকার- (১) খাস বা সর্বশ্রেষ্ট স্তর যেমন আম্বিয়া আলাইহিমুচ্ছালাম। (২) আউসাত বা দ্বিতীয় স্তর যেমন ছাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুমসহ ও ছাহাবায়ে কেরাম ব্যতীত অন্যান্য ছালেহীন বা সৎকর্ম পরায়নগণ।(৩) তৃতীয় স্তর, আম বা সর্ব সাধারণ (পূর্বে উল্লেখিত দুই প্রকার ব্যতিত অন্যান্য) মানুষ। (রাদ্দুল মুহতার ১/২৮২ নতুন ছাপা ২/৪১১ পৃষ্ঠা)

দলিল-১১

ইমাম হাফিজ ইবনে হজর মক্কী হাইতামী আলাইহির রহমত (ওফাত ৯৭৪ হিজরি) তদীয়- الدر المنضود فى الصلاة والسلام على صاحب المقام المحمود ‘আদদুর মানদুদ’ নামক কিতাবের ২৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন-

قال الفخر الرازى: وقع الاجماع على ان افضل النوع الانسانى نبينا سيدنا محمد صلى الله عليه وسلم لقوله صل الله عليه وسلم- انا سيد ولد ادم ولا فخر-
ভাবার্থ: হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানবজাতির মধ্যে শ্রেষ্ঠ মানব এর উপর ইজমা হয়েছে। আল্লাহর হাবিব নিজেই এরশাদ করেন আমি আদম সন্তানের সরদার। এতে আমার কোন গর্ব নেই।

দলিল- ১২

আল্লামা আহমদ শাহাবুদ্দিন খুফফাজী,মিশরী রাহমাতুল্লাহ আলাইহি তাঁর نسيم الرياض فى شرح شفاء القاضى عياض কিতাবের ১/১৫ পৃষ্ঠায় রয়েছে-

(من انفسهم) بضم الفاء جمع نفس ولها معان منها العين والذات الشاملة للروح والجسد ومنها الروح ومرجع الضمير كالسابق والمراد انه من جنس البشر وانما امتاز عنهم بالرسالة والخصائص-
অর্থাৎ- মিন আনফুছিহিম ‘ফা’ অক্ষরে পেশ দ্বারা (তাদের মধ্য থেকে) ইহা ‘নফস’ শব্দের বহুবচন। তার কয়েকটি অর্থ রয়েছে,তন্মধ্যে একটি অর্থ হচ্ছে মূল সত্ত্বা,যা রূহ মোবারক ও শরীর মোবারক উভয়ই শামিল রয়েছে।এখানে জমির বা সর্বনামের মারজা বা প্রত্যাবর্তন পূর্বের ন্যায়ই।মর্মার্থ হচ্ছে নিশ্চয় তিনি জিনসে বশর বা মানব জাতির অন্তর্ভুক্ত।তবে পার্থক্য হচ্ছে রিছালাত দ্বারা।মুদ্দাকথা হলো আল্লাহর সৃষ্টিতে নূর,আপাদমস্তক নূর যার ছায়া ছিল না।অপরদিকে তিনি হচ্ছেন সৃষ্টির মধ্যে অতুলনীয় বশর,মহামানব।

দলিল-১৩

আল্লামা মুফতি আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী আলাইহির রহমত তদীয় ‘জা-আল হক’ ১ম খণ্ড ১৭২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-

نبی جنس بشر میں آتے ہیں اور انسان ھی ہوتے ہیں جن یا فرشتہ نہیں ہوتے یہ دنیاوی احکام ہیں-
অর্থাৎ- নবী جنس بشر ‘জিনসে বশর’ বা মানব জাতির মধ্যে আবির্ভুত হয়ে থাকেন,আর তিনি انسان ‘ইনসান’ বা মানবই হন,জ্বিন কিংবা ফিরিশতা নন।এটি হচ্ছে পার্থিব বিধি-বিধান অনুযায়ী।

তিনি উক্ত কিতাবের ১৬২ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ করেন-

عقیدہ اول: نبی وہ انسان مرد ہیں جن کو اللہ نے احکام شرعیہ کی تبلیغ کے لۓ بھیجا (شرح عقائد) لہذا نبی نہ تو غیر انسان ہو اور نہ عورت- قرآن فرماتاہے – وماارسلنا من قبلك الا رجالا نوح اليهم، اور ہم آپ سے پہلے نہ بھیجا مگران سردوں کو جن کی طرف ہم وحی کرے تھے- معلوم ہوا کہ جن- فرشتہ- عورت وغیرہ نبی نہیں ہو سکتے- 
আকিদা আউয়ালঃ
নবী সেই মানব পুরুষ,যাকে আল্লাহতা’য়ালা শরিয়তের বিধিবিধান পৌঁছানোর জন্য প্রেরণ করেছেন। (শরহে আকাইদ) এজন্য নবী মানব ছাড়া অন্য কোন জাতের হন না, এবং মহিলা নবী হন না।কোরআন পাকে ইরশাদ হচ্ছে-

وما ارسلنا من قبلك الا رجالا نوحى اليهم-
প্রমাণিত হল যে,জিন,ফেরেশতা,মহিলা ইত্যাদি নবী নন।

عقیدہ دوم: نبی ہمیشہ اعلی خاندان اور عالی نسب میں سے ہوتے ہیں اور نہایت عمدہ اخلاق ان کو عطا ہوتے ہیں ذلیل قوم اور ادنی حرکات سے محفوظ (بہار شریعت) بخاری جلد اول کے شروع میں ہے کہ جب ہرقل بادشاہ روم کے پاس حضور علیہ الصلوۃ والسلام کا فرمان عالی پہنچا کہ اسلم تسلم اسلام لے سلامت رہےگا- تو ہرقل نے ابو سفیان کو بلاکر حضور صلی اللہ علیہ وسلم کے متعلق کچھ سولات کۓ پہلا سوال یہ تھا کہ کیف نسبہ فیکم تومیں ان کا خاندان ونسب کیسا ہے؟ ابو سفیان نے کہا ھو فینا ذو نسب وہ ہم میں نہایت اعلی خاندان ہیں یعنی قریشی ہاشمی ومطلبی ہیں صلی اللہ علیہ وسلم اس کے جواب میں ہرقل نے کہا- وكذالك الرسل نبعث فى قومها- ہمیشہ انبیاۓ کرام اعلی قوم واعلی خاندان میں بھیجے جاتے ہیں- جس سے معلوم ہو کہ انبیاۓ کرام عالی خاندان میں تشریف فرما ہوتے ہیں-
আকিদা দুউমঃ
নবী সর্বদাই উচ্চ খান্দান,উত্তম বংশ থেকে হন।অত্যন্ত উত্তম চরিত্র তাদের প্রদান করা হয়ে থাকে।নিচু বংশ অসংগত কর্ম হতে মাহফুজ বা সুরতি।(বাহারে শরীয়ত)বোখারি প্রথম জিলদের প্রারম্ভে একটি বর্ণনা রয়েছে যে,যখন রোম সম্রাট হিরাকিয়াস এর প্রতি হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পত্র প্রেরণ করলেন যে, اسلم تسلم ইসলাম গ্রহণ করুন নিরাপত্তা লাভ করুন।তখন হিরাকিয়াস আবু সুফিয়ানকে তলব করে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে কতিপয় প্রশ্ন করলেন।প্রথম প্রশ্ন এই ছিল যে, كيف نسب فيكم তোমাদের মধ্যে তাঁর বংশ কিরূপ? আবু সুফিয়ান উত্তরে বলল-هو فينا ذو نسب অর্থাৎ তিনি আমাদের মধ্যে উচ্চ খান্দানের লোক।অর্থাৎ কোরেশী হাশেমী, মোত্তালেবী।এ জবাব শুনে হিরাকিয়াস বললেন- وكذالك الرسل تبعث فى قومها হ্যাঁ আম্বিয়ায়ে কেরাম সর্বদাই উচ্চ বংশ,উত্তম খান্দানে প্রেরিত হয়ে থাকেন।এতে বুঝা গেল নবীগণ উচ্চ বংশেই প্রেরিত হন।

عقیدہ سوم: کوئ شخص اپنی عبادت واعمال سے نبوت نہیں پاسکتا- نبوت محض عطاء الھی ہے اللہ اعلم حیث یجعل رسالتہ اللہ خوب جانتا ہے کہ جہاں اپنی رسالت کھے اور غیر نبی خواہ غوث ہو یا قطب ابدال یا کچھ اور نہ تو نبی کے برابر ہو سکتاہے نہ اس سے بڑھ سکے- یہ چند امور خیال میں رہیں-
আকিদা ছউমঃ
কোন ব্যক্তি এবাদত বন্দেগি ও আমলের মাধ্যমে নবুয়ত লাভ করতে পারে না।নবুয়ত কেবল আল্লাহর দান। الله اعلم حيث يجعل رسالته আল্লাহতা’য়ালা অধিক জানেন যে,কাকে রিসালাত নবুয়তের দায়িত্ব অর্পন করবেন।নবী ব্যতিত গাউস,কুতুব,আব্দাল,কখনো নবীর সমপর্যায়ে পৌঁছতে পারবে না।না তাদের সমপর্যায় থেকে বেড়ে যেতে পারে।এ বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন।

দলিল- ১৪

আল্লামা সৈয়দ মোহাম্মদ আজিজুল হক আলকাদেরী শেরে বাংলা রাহমাতুল্লাহ আলাইহি বলেন-

محمد گر چہ از جنس بشرہست
نظیرش در جھاں لیکن محالست
উচ্চারণ: মুহাম্মদ গরছে আয জিনসে বশর হাস্ত -নযী- রশ দর জাহাঁ- লে-কিন মহা-লাস্ত।

অর্থ: হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদিও মানব জাতির অন্তর্ভুক্ত কিন্তু তাঁর উপমা গোটা বিশ্বেও পাওয়া অসম্ভব। (দিওয়ান-ই আযীয -৩৫ পৃষ্ঠা)

দলিল- ১৫

ফতোয়ায়ে আলমগীরী ২/২৮২ পৃষ্ঠা নতুন ছাপা ২/৪১১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে-

من قال لاادرى ان النبى صلى الله عليه وسلم كان انسيا اوجنيا يكفر كذا فى الفصول العمادى-
অর্থাৎ- যে ব্যক্তি বলে যে,আমি জানি না নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষ ছিলেন না জিন ছিলেন,সে ব্যক্তি কাফের হয়ে যাবে।যেমন ফুসুলুল ইমাদীতে এরূপ বর্ণনা রয়েছে।

উল্লেখ্য যে, انسان ‘ইনসান’ অর্থ হলো- মানবজাতি। (ফরহাঙ্গে রব্বানী- ৫৮ পৃষ্ঠা)

উপরিলিখিত দলিলসমূহের দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো- আল্লাহর হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির সেরা মানবজাতিতে এ দুনিয়ায় শুভাগমন করেছেন এবং তিনি মানবজাতির অন্তর্ভুক্ত।যে ব্যক্তি আল্লাহর হাবিবকে মানবজাতির অন্তর্ভুক্ত না মানবে সে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের বিশুদ্ধ আকিদা মতে কাফের সাব্যস্থ হবে।

কথিত মৌলভী নিজের বাহাদূরী দেখাতে গিয়ে ৯, ১০ ও ১১ নং উদ্ধিৃতে লিখেছে-

(৯)  من انفسكم এর তাফসির লিখতে গিয়ে اى من جنسكم  লিখিয়াছেন ইত্যাদি।কথাগুলো তাফসির কারকের মত।কোন তাফসিরকারকের মত দ্বারা কোরআনের দলিলকে রদ করা যায় না। (বাশারা বলিল কাহারা? ১৮ পৃষ্ঠা)

(১০)  কোন কোন আলেম  من انفسكم এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নূর নবীজিকে جنس بشر লিখিয়াছেন। তাহারা মারাত্মক ভুল করিয়াছেন এবং তাহারা যদি এই ভুলকে সংশোধন না করিয়া এই ভুলের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে,তাহলে তাদের এই ভুল কুফুরীতে পরিণত হইবে। (ইসলাহে হাকিকতে নূরে মোহাম্মদী ১৯ পৃষ্ঠা)

(১১) সূরা হজ্জ্বের আয়াত الله يصطفى من الملئكة رسلا ومن الناس ان الله سميع بصير এই আয়াতে আমাদের নূর নবীজি ব্যতীত অন্যান্য নবীদের কথা বলা হইয়াছে। (অর্থাৎ আমাদের নূর নবীজি এই আয়াতের অন্তর্ভুক্ত নন)

এর প্রতিউত্তরে আমরা বলতে চাই من انفسكم তাফসির করতে গিয়ে যে সমস্ত মুফাসসিরীনে কেরাম اى من جنسكم লিখেছেন তারা কথিত মৌলভীর মতো মূর্খ-জাহিল নন।তারা স্বীয় যুগের খ্যাতনামা হক্বানী রব্বানী আলেমেদ্বীন এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের সুস্পষ্ট ভাষ্যকার।তাদের তাফসিরের দ্বারা কোরআন শরীফের দলিল কী রদ হয় নাই।বরং কোরআন শরীফের সঠিক তাফসির বা ব্যাখ্যাই প্রকাশ পেয়েছে।অকারণে তাদের তাফসিরকে ভুল বা কুফুরি আখ্যায়িত করে নিজেকে  চরম গোমরাহী ও কুফুরির গহ্বরে নিমজ্জিত হওয়ারই নামান্তর।

সূরা হজ্জ্বের আয়াতে الله يصطفى من الملئكة رسلا ومن الناس ان الله سميع بصير আয়াতের ব্যাখ্যায় সে বলেছে এই আয়াতে আমাদের নূরনবীজি ব্যতীত অন্যান্য নবীদের কথা বলা হইয়াছে।(অর্থাৎ আমাদের নূরনবীজি এই আয়াতের অন্তর্ভুক্ত নন) অথচ এই আয়াতের তাফসিরে আল্লামা আলা উদ্দিন আলী ইবনে মোহাম্মদ বিন ইব্রাহিম বাগদাদী আলাইহির রহমত (ওফাত ৭২৫ হিজরি) তদীয় تفسير خازن ‘তাফসিরে খাজিন’ নামক কিতাবে আমাদের নবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লামকেও অন্তর্ভুক্ত করেছেন।যেমন তাঁর তাফসিরে খাজিনের ৩/২৬৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন-

(الله يصطفى من الملائكة رسلا ومن الناس) ومن الناس يعنى يختار الله من الناس رسلا مثل ابراهيم وعيسى ومحمد وغيرهم من الانبياء والرسول صلى الله عليهم اجمعين-
অর্থাৎ আল্লাহ মনোনীত করে নেন ফেরেশতাদের মধ্য থেকে রাসূল এবং মানুষের মধ্য থেকেও।আয়াতে কারীমায় বর্ণিত ومن الناس এ আয়াতে কারীমার মর্মার্থ হলো আল্লাহ তায়ালা মানুষের মধ্য থেকে রাসূল প্রেরণ করেছেন,যেমন হযরত ইব্রাহিম,হযরত ইসা এবং হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আরো অনেক নবী ও রাসূল মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আজমাঈন মানুষ থেকেই প্রেরণ করেছেন।’

অনুরূপ খলিফায়ে আ’লা হযরত সদরুল আফাজিল আল্লামা সৈয়দ নঈমুদ্দিন মুরাদাবাদী আলাইহির রহমতও ‘তাফসিরে খাজাইনুল ইরফান’ নামক কিতাবে আয়াতে উল্লেখিত ومن الناس এর ব্যাখ্যায় আমাদের নবীজিকেও অন্তর্ভুক্ত করেছেন।যেমন সূরা হজ্জের ৭৫নং আয়াত الله يصطفى من الملئكة رسلا ومن الناس ان الله سميع بصير ‘কানযুল ঈমান ফি তরজমাতিল কোরআন’ নামক গ্রন্থে যেভাবে তরজমা ও তাফসির উল্লেখ রয়েছে তা নিম্নে হুবহু প্রদত্ত হলো-

اللہ چن لیتاہے فرشتوں میں سے رسول اور آدمیوں میں سے-
অনুবাদ: আল্লাহ মনোনীত করে নেন ফেরেশতাদের মধ্য থেকে রাসূল এবং মানুষের মধ্য থেকেও।নিশ্চয় আল্লাহ শুনেন,দেখেন।

আ’লা হযরতের সুযোগ্য খলিফা সদরুল আফাজিল আল্লামা সৈয়দ নঈম উদ্দিন মুরাদাবাদী আলাইহির রহমত(ওফাত ১৯৪৮ ইংরেজি) কানুযুল ঈমানের হাশিয়ার (পার্শ্বটীকার) ‘খাজাইনুল ইরফান’ নামক গ্রন্থে উক্ত আয়াতের তাফসিরে যা লিখেছেন নিম্নে তাও পেশ করা হলো-
اللہ چن لیتاہے فرشتوں میں رسول
আল্লাহ মনোনীত করে নেন) এর টীকায় লিখেছেন-

مثل جبریل ومیکائیل وغیرہ
অনুবাদ: যেমন জিব্রাঈল ও মিকাঈল প্রমুখ।
اور آدمیوں میں سے
এবং মানুষের মধ্য থেকেও) এর টীকায় লিখেছে-

مثل حضرت ابراہیم وحضرت موسی وحضرت عیسی وحضرت سید عالم صلوۃ اللہ تعالی علیہم وسلامہ کے- شان نزول یہ ایت ان کفار کے رد میں نازل ہوئ جنہوں نے بشر کے رسول ہونے کا انکار کیا تھا اور کہا تھا کہ بشر کیسے رسول ہو سکتاہے اس پر اللہ تعالی نے یہ آیت نازل فرمائ اور ارشاد فرمایا کہ اللہ مالک ہے جیسے چاہے اپنا رسول بناۓ وہ انسانوں میں سے بھی رسول بناتاہے اور ملائکہ میں سے بھی جنہیں چاہے-
অনুবাদ: যেমন- হযরত ইব্রাহিম,হযরত মুসা,হযরত ঈসা (আলাইহিস সালাম) এবং হযরত সাইয়িদে আলম মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

শানে নুযুল: এ আয়াত ঐ সব কাফিরের খণ্ডনে অবতীর্ণ হয়েছে,যারা মানুষ হবার বিষয়কে অস্বীকার করেছে।আর বলেছে যে,বশর মানুষ কিভাবে রাসূল হতে পারে? এর জবাবে আল্লাহতায়ালা এ আয়াত অবতীর্ণ করেন।আর এরশাদ ফরমান যে,আল্লাহ মালিক,যাকে চান আপন রাসূল বানান।তিনি মানুষ থেকেও রাসূল বানান।ফিরিশতাকুল থেকেও যাকে ইচ্ছা করেন। (তাফসিরে খাযাইনুল ইরফান)

কথিত মৌলভী আরো লিখেছে-

আল্লাহপাক নবীজির বেলায় কোথাও ইনসান শব্দটি ব্যবহার করেন নাই।তাহলে দেখুন কোরআনুল কারীমের সূরায়ে আর রাহমানে প্রথম আয়াতে আল্লাহতা’য়ালা এরশাদ করেন-

الرحمن علم القران خلق الانسان علمه البيان
উপরোক্ত আয়াতে কারীমার তরজমা করেছেন চতুর্দশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেজখাঁন আলাইহির রহমত তদীয় ‘কানযুল ঈমান’ নামক কিতাবে উল্লেখ করেন-

رحمن نے اپنے محبوب کو قرآن سکھایا انسانیت کی جان محمد کو پیدا کیا ماکان وما یکون کا بیان انہیں سکھایا-
বঙ্গানুবাদ: পরম দয়ালু (রহমান) আপন মাহবুবকে কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন।মানবতার প্রাণ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সৃষ্টি করেছেন,যা সৃষ্টি হয়েছে এবং যা সৃষ্টি হবে সব কিছুর বর্ণনা তাকেই শিক্ষা দিয়েছেন।’

আল্লামা আরিফ বিল্লাহ আশ শায়খ আহমদ আছছাবী মালিকী আলাইহির রহমত (ওফাত ১২৪১ হিজরি) তদীয় ‘তাফসিরে ছাভী’ নামক কিতাবের চতুর্থ জিলদের ১৬৩ পৃষ্ঠায় خلق الانسان علمه البيان ‘খালাকাল ইনসানা আল্লামাহুল বয়ান’ এর তাফসিরে উল্লেখ করেন-

قيل هو محمد صلى الله عليه وسلم لانه الانسان الكامل والمراد بالبيان علم ما كان وما يكون وما هو كائن-
ভাবার্থ: خلق الانسان আল্লাহ তায়ালা ইনসান সৃষ্টি করেছেন।বর্ণিত আয়াতে কারীমায় ‘ইনসান’ এর মুরাদ নেওয়া হয়েছে,মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।কেননা الانسان الكامل  ‘ইনসানে কামিল’ একমাত্র হুজুর পুর নূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং البيان ‘আল বয়ান’ দ্বারা মুরাদ হচ্ছে ما كان وما يكون  পূর্ব ও পরবর্তী সমস্ত সৃষ্টির জ্ঞান আল্লাহ তায়ালা তাঁর হাবিবকে দান করেছেন।

মুদ্দাকথা হলো আল্লাহ তায়ালা ‘আল ইনসান’ অর্থাৎ ইনসানে কামিল নূরনবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সৃষ্টি করেছেন।এভাবে অধিকাংশ মুফাসসিরানে কেরাম এ আয়াতে কারীমার  ব্যাখ্যা করেছেন।

পরিশেষে ইমাম শারফুদ্দিন বুছিরী রাহমাতুল্লাহ আলাইহি ‘কাসিদাতুল বুরদায়’ থেকে একখানা কবিতার মাধ্যমে আমার ফতোয়ার ইতি টানতে চাই-

فمبلغ العلم فيه انه بشر- وانه خير خلق الله كلهم
(অনুবাদ) ‘কাজেই তাঁর সম্বন্ধে আমার জ্ঞানের সীমা এই যে,তিনি (হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একজন বাশার (মানুষ) এবং তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ মাখলুক।  

উপসংহার

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকিদা হলো আল্লাহ তাবারাকা ওয়াতায়ালা হচ্ছেন ওয়াজিবুল অজুদ যার আরম্ভও নেই এবং শেষও নেই। আল্লাহ নিরাকার বেমিসাল,আল্লাহর জাতের সঙ্গে কোন শরিক নেই এবং তাঁর সিফতে খাসসার মধ্যেও কোন শরিক নেই।আল্লাহ তা’য়ালার জাত যেমন কাদীম তেমনি তাঁর সিফতে খাসসাও কাদীম বা আজালী আবাদী চিরস্থায়ী।

আল্লাহপাকের জাত ও সিফাতে খাসসা ব্যতীত আর যা কিছু আছে সবই হাদিস বা নশ্বর।আল্লাহতা’য়ালা হচ্ছেন ওয়াজিবুল অজুদ এবং তাঁর হাবিব মুহাম্মাদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হচ্ছেন মমকিনুল অজুদ।মুহাক্বীকীনদের মতে আল্লাহতা’য়ালার জাত হচ্ছে নূরে হাকিকী বা বেনজির বেমিসাল এবং কাদীম তথা منور ‘মুনাওইর’ বা নূর সৃষ্টিকারী।যার তুল্য কিছুই নেই।
অপরদিকে আল্লাহ তা’য়ালার হাবিবের নূর হচ্ছে সৃষ্ট।আল্লাহপাক সর্বপ্রথম হেকমতে কামেলার দ্বারা তাঁর হাবিবের নূর মোবারক সৃষ্টি করেছেন।আল্লাহ তায়ালা তাঁর হাবিবকে ঐ নূর কর্তৃক সৃষ্টি করেছেন যা عین ذات الھی বা আল্লাহর প্রকৃত জাত অর্থাৎ আল্লাহ তা’য়ালার স্বীয় জাত কর্তৃক তাঁর কুদরতে কামেলার দ্বারা কোন মাধ্যম ছাড়াই নবীর নূর মোবারক সৃষ্টি করেছেন।এর অর্থ এই নয় যে,আল্লাহ তা’য়ালার নূর নবী সৃষ্টির মাদ্দা বা মূল ধাতু।কেননা আল্লাহর নূর অংশ হয় না টুকরো হয় না,ভাগ হয় না।আল্লাহর নূর বেনজির বেমিসাল নূরে হাকিকী।কাদীম আজালী আবাদী চিরস্থায়ী।যার কোন আরম্ভ নেই শেষও নেই।সৃষ্টির সঙ্গে তাঁর কোন তুলনা চলেনা।

এজন্য বলা হয়ে থাকে আল্লাহর হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম عین ذات الھی سے پیدا ہوا আল্লাহর প্রকৃত জাত কর্তৃক সৃষ্টি।সুতরাং আল্লাহ হচ্ছেন নূরে হাকিকী অর্থ নূর সৃষ্টিকারী আর রাসূলেপাক হচ্ছেন সৃষ্টিতে নূর جنس ‘জিনছে’ বা জাতিতে বেনজির বেমিসাল বশর অর্থাৎ নূরানী মানুষ।

উপরোক্ত দলিলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো, আল্লাহতা’য়ালার জাত মোবারক এমন একটি নূর যার কোন উদাহরণ বা মিসাল নেই।বেনজীর বেমিসাল নূর।যে নূরের অংশ হয় না,ভাগ হয় না, টুকরো হয় না,লাল,হলুদ,সবুজ এককথায় সৃষ্টির মধ্যে যার কোন তুল্য নেই।

মোটকথা আল্লাহর নূর হলো নূরে হাকিকী এবং রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নূর হলো নূরে তাখলিকী বা আল্লাহর সৃষ্টি নূর।

সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহর সত্ত্বাকে রাসূল সৃষ্টির মাদ্দা বিশ্বাস করবে সে ব্যক্তি আ’লা হযরত আলাইহির রহমতসহ সমস্ত সুন্নী উলামায়ে কেরামের ফতোয়া অনুযায়ী কাফের ও মুশরিক সাব্যস্ত হবে।অপরদিকে মুফাসসিরীনে কেরাম রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বেনজির বাশারিয়াত বা অতুলনীয় মানবত্ব মানাকে জরুরিয়তে দ্বীন তথা ধর্মীয় অত্যাবশ্যকীয় বিষয় এর অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

আল্লাহ তা’য়ালার নূর মমতানিউত তাগয়্যুর অপরিবর্তীয় আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নূর মমকিনুত তাবাদদুল- পরিবর্তনশীল।কাজেই কাদীমের অংশ হাদেস (ধ্বংস যোগ্য) হতে পারে না।যদি তা হয় তা হলে আল্লাহর সংখ্যা একাধিক হয়ে পড়ে।যদি ধরে নেওয়া হয় যে,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নূর আল্লাহর হতে গৃহীত তা হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নূরও কাদীম হতে বাধ্য।তাহলে কাদীমের সংখ্যা দুই হয়ে পড়ে এবং কাদীম দুই সাব্যস্থ হলে আল্লাহও দুই সাব্যস্থ হতে বাধ্য (নাউজুবিল্লাহ) তা অসম্ভব এবং এতে শিরকে-ই আকবর সাবিত হয়ে যায়।যেহেতু কোরআন সুন্নাহ ইজমা ও কিয়াস এ চার দলিলের দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নূর মোবারক হাদেস কাদীম নয়,এজন্য আল্লাহর নূরের অংশ হওয়া অসম্ভব,কেননা কাদীমের অংশ হাদেস হতে পারে না।কাদীম কাদীমই থাকে।

সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নূর আল্লাহর নূরের অংশ নয়।এ আকিদাই সর্বসম্মতিক্রমে সঠিক এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের বিশুদ্ধ আকিদা।

সুতরাং যারা রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাশারিয়াত অস্বীকার করবে তারা কোরআনের আয়াত দ্বারা সাব্যস্ত জরুরি বিষয়কে অস্বীকার করার দরুন কাফের হবে।

যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাশার বা মানুষ মানাকে কুফুরি বলে প্রচার করছে তারা সমস্ত মুফাসসিরীনে কেরাম, মুহাদ্দিসীনে কেরাম তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের সমস্ত বিজ্ঞ উলামায়ে কেরামদেরকে কাফের সাজিয়ে নিজেদেরকে খারেজি ও ওয়াহাবিদের দুসর হিসেবে আসল চেহারা সমাজে প্রকাশ করছে।

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকিদা হলো রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু  আলাইহি  ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম সৃষ্ট নূর,আইনে নূর, আপাদমস্তক নূর,যার ছায়া ছিল না এবং বেনজির বেমিসাল বশর উভয়ই।এ বিষয়ে বিস্তারিত  জানতে হলে আমার লিখিত ‘হাকিকতে নূরে মোহাম্মদী’ নামক পুস্তকখানা পাঠ করতে অনুরোধ করছি।

বিনীত
অধ্যক্ষ শেখ মোহাম্মদ আব্দুল করিম সিরাজনগরী
তাং ০১/০৯/১৫ইং

No comments:

Post a Comment