Monday, September 21, 2015

‘সিরাতে মুস্তাকিম’ কিতাবের বাতিল আক্বিদার জবাব

একনজরে ‘সিরাতে মুস্তাকিম’ নামক কিতাবের বাতিল আক্বিদা ও তারই পার্শ্বে ইসলামী আক্বিদা নিম্নে প্রদত্ত হলো:-

বাতিল আক্বিদা-০১

নামাযের মধ্যে নবীয়েপাকের খেয়াল করা গরু-গাধার খেয়ালে ডুবে থাকার চেয়েও খারাপ এবং তাঁকে নামাযের মধ্যে তা’জিমের সঙ্গে খেয়াল করা শিরক।
(সৈয়দ আহমদ বেরলভীর বাণী, ইসমাঈল দেহলভীর লিখিত ‘সিরাতে মুস্তাকিম- পৃষ্ঠা ১৬৭)
(কেরামত আলী জৈনপুরীর লিখিত ‘জখিরায়ে কেরামত’ পৃষ্ঠা- ১/২৩১, বাংলা জখিরায়ে কেরামত ১ম খণ্ড ২৯ পৃষ্ঠা দ্র:)
(মাও: ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী 'সৈয়দ আহমদ বেরলভীর জীবনী' গ্রন্থের (২য় সংস্করণ ৬৭/৭১/৭২ পৃষ্ঠায় সিরাতে মুস্তাকিম কিতাবকে হেদায়তের কিতাব বলে সার্টিফাই করা হয়েছে)

ইসলামী আক্বিদা-০১

নামাযের বৈঠকে তোমার কলব বা অন্তরে হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও তাঁর পবিত্র দেহাকৃতিকে হাজির করে বলবে "আস-সালামু আলাইকা আইয়ুহান্নাবীউ ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু" অর্থাৎ আল্লাহর হাবীবকে তা’জিমের সাথে খেয়াল করে সালাম পেশ করবে।কেননা আল্লাহর হাবীবের তা’জিমই আল্লাহর বন্দেগী।
(ইমাম গাজ্জালী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু'র কৃত এহইয়ায়ে উলুমিদ্দিন-১/৯৯ পৃষ্ঠা)

সুতরাং নামাযে আল্লাহর হাবীবের তা’জিম ও খেয়াল করাকে শিরকের ফতওয়া দেওয়া সাহাবায়ে কেরামসহ সমস্ত মুসলমানগণকে মুশরিক বানানোর পায়তারা বৈ কিছুই নয়।

বাতিল আক্বিদা-০২

হাদীসশরীফের বর্ণনা চোর ও জিনাকারের ঈমান চুরি ও জিনার সময় পৃথক হয়ে যায়।ঠিক তেমনিভাবে মাজারশরীফে অবস্থান করে দোয়া করার সময় অধিক পরিমাণে ঈমান ধ্বংস হয়ে যায়। অজ্ঞতার ওজর না থাকলে তারা পরিস্কার কাফের হয়ে যেতো। জিয়ারতকারী ব্যক্তি যদি আলেম হয়, দোয়া করার সময় নি:সন্দেহে কাফির।(সিরাতে মুস্তাকিম-১০৫ পৃষ্ঠা)
সিরাতে মুস্তাকিম কিতাব সৈয়দ আহমদের বাণী ইসমাইল দেহলভী লিখেছেন বলে জৈনপুরী কেরামত আলী সাহেব তা জখিরায়ে কেরামত- ১/২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন।
ফুলতলীর ইমাদ উদ্দিন সাহেব ও সোনাকান্দার পীর সাহেব আনিছুত তালেবীন- ৪/৫১ পৃষ্ঠায় তা সমর্থন করেছেন।
অনুরূপ মাও: মওদুদী সাহেবের 'ইসলামী রেঁনেসা আন্দোলন' ৭৬ পৃষ্ঠায় রয়েছে-
যারা মনষ্কামনা পুরণ করার জন্য আজমির অথবা সালারে মাসউদের কবরে বা এই ধরনের অন্যান্য স্থানে যায়,তারা এত বড় গোনাহ করে যে, হত্যা ও জিনার গোনাহ তার তুলনায় কিছুই নয়।’ (নাউজুবিল্লাহ)

ইসলামী আক্বিদা-০২

সৈয়দ আহমদ বেরলভীর পীর ও মুর্শিদ ত্রয়োদশ শতাব্দীর মোজাদ্দিদ শাহ আব্দুল আজিজ মোহাদ্দিসে দেহলভী (আলাইহির রহমত) তদীয় তাফসিরে আজিজি ৩০ পারা ১১৩ পৃষ্ঠা ফার্সী উল্লেখ করেন-

‘অভাবগ্রস্থ ও কঠিন সমস্যায় নিমজ্জিত ব্যক্তি যদি ঐ সব ওফাতপ্রাপ্ত ওলীগণের নিকট হুজুরী দিয়ে নিজের হাজত পূরনের জন্য আরজী পেশ করে তা অবশ্যই পেয়ে থাকবেন।কেননা আউলিয়ায়ে কেরামগণ খোদাপ্রদত্ত ক্ষমতাবলে তাদের মুশকিলাতকে দূর করে দিয়ে থাকেন।’

একাদশ শতাব্দীর মোজাদ্দিদ আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (আলাইহির রহমত) তদীয় মিরকাত শরহে মিশকাত’ নামক কিতাবের ২/৪০৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-

‘সকল উলামায়ে কেরামগণ ঐকমত্য পোষন করেছেন যে,পুরুষদের জন্য কবর জিয়ারত করা সুন্নত।’
সুতরাং সকল নবীপ্রেমিক ঈমানদারদের জন্য গভীরভাবে অনুধাবন করার প্রয়োজন যে,সৈয়দ আহমদ বেরলভীর ‘মলফুজাত’ বক্তব্যের দরুণ তার পীর ও মুর্শিদ শাহ আব্দুল আজিজ মোহাদ্দিসে দেহলভী সহ সকল আউলিয়ায়ে কেরাম ও উলামায়ে কেরামগণ কাফের সাব্যস্থ হয়ে গেলেন। (নাউজুবিল্লাহ)

বাতিল আক্বিদা-০৩

দূর-দূরান্ত থেকে আউলিয়ায়ে কেরামের মাজারশরীফ জিয়ারতের উদ্দ্যেশ্যে সফর করে তথায় পৌঁছা মাত্রই শিরকের অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে এবং আল্লাহ তায়ালার গজবের ময়দানে পতিত হবে। (সিরাতে মুস্তাকিম- ১০২ পৃষ্ঠা)

(ক) জৈনপুরী কেরামত আলীর ভাষ্য ‘সিরাতে মুস্তাকিম’ কিতাব সৈয়দ আহমদ বেরলভীর মলফুজাত বা বক্তব্য এবং ইসমাইল দেহলভী এ কিতাবের লিখক। (জখিরায়ে কেরামত- ১/২০ পৃষ্ঠা)

(খ) মাওলানা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলীর ভাষ্যমতে ‘সিরাতে মুস্তাকিম’ হেদায়তের কিতাব (সৈয়দ আহমদের জীবনী গ্রন্থ ২য় সংস্করণ ৬৭/৭১/৭২ পৃষ্ঠা)

(গ) মোহাম্মদ আব্দুর রহমান হানাফী পীর সাহেব সোনাকান্দা এর ভাষ্যমতে ‘সিরাতে মুস্তাকিম’ কিতাবখানা সৈয়দ আহমদ বেরলভীর মলফুজাত বা বক্তব্য।(আনিছুত তালেবীন- ৪/৫১ পৃষ্ঠা)

ইসলামী আক্বিদা-০৩

ইমাম শাফেয়ী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) সূদুর ফিলিস্তিন থেকে সফর করে কুফা এসে ইমামে আ’জম আবু হানিফা (রাদিয়াল্লাহু আনহুর) মাজারশরীফ জিয়ারত করে বরকত লাভ করতেন।
হানাফী মাযহাবের ইমামগণ তা সমর্থন করেছেন এজন্য আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী (আলাইহির রহমত) রদ্দুল মুহতার কিতাবের ১/৫৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন-

‘আমি (ইমাম শাফেয়ী) ইমামে আ’জম আবু হানিফা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বরকত লাভ করার উদ্দেশ্যে তাঁর মাজারশরীফে আগমন করতাম। ইমাম শাফেয়ী বলেন যখনই আমার কোন হাজত বা প্রয়োজন হতো, তখনই আমি ইমামে আ’জম আবু হানিফা রাদিয়াল্লাহু আনহু'র মাজারশরীফের নিকট গিয়ে দু’রাকাত নফল নামায পড়ে তাঁর জিয়ারতের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার দরবারে প্রয়োজন পুরণের জন্য দোয়া করতাম।সাথে সাথে আমার সেই হাজত পুরণ হয়ে যেতো। (শামী)

বিশ্বের মুসলিম সমাজ একটু চিন্তা করলেই বুঝতে সক্ষম হবেন যে, সৈয়দ আহমদের ফতওয়া বা বক্তব্য, কেরামত আলী জৈনপুরী,ইসমাঈল দেহলভী,ইমাদউদ্দিন ফুলতলী,সোনাকান্দার পীর সাহেব, সকলের সমর্থিত সিরাতে মুস্তাকিমের ভাষ্য ‘ওলীর দরবারে জিয়ারতের জন্য পৌঁছার সাথে সাথে শিরকে নিমজ্জিত হবে এর দ্বারা চার মাযহাবের ইমামগণ মুশরিক,সকলই শিরকের মধ্যে নিমজ্জিত হয়ে পড়েন। (নাউজুবিল্লাহ)

বাতিল আক্বিদা-০৪

আউলিয়ায়ে কেরাম কবরে অবস্থান করে জীবিতের ন্যায় উপকার করতে সক্ষম নয়।যদি কবর জিয়ারতে মকছুদ পুরণ হতো,তাহলে দুনিয়ার সকল মানুষ মদিনাশরীফে চলে যেতো। (সিরাতে মুস্তাকিম- ১০৩ পৃষ্ঠা)

জ্ঞানান্ধ সৈয়দ আহমদ বেরলভী আউলিয়ায়ে কেরামগণের জিয়ারতের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েও শান্ত্বনা লাভ করতে পারেননি বরং আল্লাহর হাবীবের রওজা মোবারক মদিনাশরীফের জিয়ারতেও বাঁধা সৃষ্টি করতে দু:সাহস করলো।তার উপরোক্ত বক্তব্য স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো- মদিনাশরীফ জিয়ারতের উদ্দেশ্যে যাওয়াতেও কোন লাভ নেই। (নাউজুবিল্লাহ)

ইসলামী আক্বিদা-০৪

আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (আলাইহির রহমত) তদীয় ‘মিরকাত শরহে মিশকাত’ "বাবে জিয়ারতে কুবুর" ২য় খণ্ড ৪০৫ পৃষ্ঠায়- হযরত আনাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে হাদীস রেওয়ায়েত করেছেন- আল্লাহর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- ‘আমি তোমাদেরকে ইতোপূর্বে কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম,মনযোগের সাথে শ্রবণ করো।এখন থেকে কবর জিয়ারত করতে থাকো।’

‘ইমামে নববী (আলাইহির রহমত) এর লিখিত ‘আল ঈজাহ ফি মানাসিকিল হাজ্জ’ নামক কিতাবের ব্যাখ্যায় মোজাদ্দিদে আলফেসানী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এর দাদা উসতাদ আল্লামা ইবনে হাজর হায়তামী মক্বী (আলাইহির রহমত) সহীহ হাদীস উল্লেখ করেছেন- যাকে ইমামে দার কুতনী,অনুরূপ ইমাম তিবরানী এবং ইবনে সুবুকী সহীহ সনদে হাদীসশরীফ রেওয়ায়েত করেছেন আল্লাহর হাবীব ইরশাদ করেছেন- যে ব্যক্তি আমার জিয়ারতের উদ্দ্যেশ্যে আমার নিকট আসবে,আমার জিয়ারত ব্যতিরেকে আর কোন হাজত বা উদ্দ্যেশ্য থাকবে না,তাহলে কিয়ামতের দিনে তার জন্য শাফায়াতকারী হওয়া আমার উপর হক্ব বা নৈতিক দায়িত্ব হয়ে পড়বে।

অন্য এক রেওয়ায়েতে রয়েছে- আল্লাহর উপর হক্ব হয়ে পড়বে অর্থাৎ আল্লাহ তাঁর উপর আমাকে তার জন্য কিয়ামতের দিনে শাফায়াতকারী হিসেবে মঞ্জুর করে নিবেন।

বাতিল আক্বিদা-০৫

‘একদিন স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা স্বীয় শক্তিশালী হাতে সৈয়দ আহমদের ডান হাত ধরে বললেন আজ তোমাকে এই দিলাম,পরে আরও দিবো।এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি তার কাছে বায়আত গ্রহণ করার জন্য বারবার আরজি পেশ করতে থাকলে তিনি বললেন-আয় আল্লাহ আপনার এক বান্দা বায়আত গ্রহণ করার জন্য আমার কাছে আসছে,আর আপনি আমার হাত ধরে আছেন।আল্লাহ তায়ালা উত্তরে বললেন- তোমার হাতে যারা বায়আত গ্রহণ করবে লক্ষ লক্ষ গোনাহ থাকলেও আমি তাকে ক্ষমা করে দিবো।’ (সিরাতে মুস্তাকিম ৩০৮ পৃষ্ঠা)

উপরোক্ত এবারতের তিনটি বিষয় লক্ষ্যণীয়-

(১) সৈয়দ আহমদ বেরলভী সাহেব সরাসরি আল্লাহপাকের সাথে আলাপ কালামে হাকিকী হওয়ার দাবি করেছেন।

(২) তিনি আল্লাহপাকের সাথে মজলিস হওয়ার দাবি করেছেন।

(৩) এবং তিনি আল্লাহপাকের সাথে মুসাফা (করমর্দন) করার দাবি করেছেন।

ইসলামী আক্বিদা-০৫

ত্রয়োদশ শতাব্দীর মোজাদ্দিদ শাহ আব্দুল আজিজ মোহাদ্দিসে দেহলভী (আলাইহির রহমত) তদীয় ‘তাফসিরে আজিজি’ নামক কিতাবের ১ম জিলদের ৫৩৪ পৃষ্ঠায় (সূরা বাকারা) উল্লেখ করেন-

‘আল্লাহ তায়ালার সাথে সরাসরি কথা বলা একমাত্র ফেরেশতাগণ ও নবীগণ আলাইহিমুস সালাম এর জন্যই নির্ধারিত।অন্য কেহ এই মর্যাদায় পৌঁছতে পারে না।
অতঃপর যারা আল্লাহর সাথে সরাসরি কথা বলার দাবি করে,তারা যেনো নবী ও ফেরেশতা হওয়ার দাবি করলো।’

‘আল্লামা কাজী আবুল ফজল আয়াজ রাদিয়াল্লাহু আনহু (ওফাত ৫৪৪ হিজরি) তদীয় 'শিফা শরীফ' ২/২৮৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-

‘যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার উলুহিয়ত ও তাওহীদের স্বীকৃতি দেয় অর্থাৎ আল্লাহকে এক মাবুদ বলে স্বীকার করে কিন্তু আল্লাহ তায়ালার সাথে সরাসরি কথা-বার্তা বলার দাবি করে তবে ইজমায়ে উম্মত বা সকল মুসলমানের ঐকমত্য কুফুরি হবে।’

বাতিল আক্বিদা-০৬

সৈয়দ আহমদ বেরলভীকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জাত ও সিফাতের সাথে কামালে মুশাবিহত বা পরিপূর্ণ মিল রেখে সৃষ্টি করা হয়েছে।এজন্য তার স্বভাবে জ্ঞানীদের রীতি অক্ষর জ্ঞান সম্পর্কে অজ্ঞ ছিলেন।নাউজুবিল্লাহ (সিরাতে মুস্তাকিম- ৬ পৃষ্ঠা)

ইসলামী আক্বিদা-০৬

কোন সৃষ্টির সঙ্গে আল্লাহর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তুলনা দেওয়া চলে না।যারা নূর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে কোন সৃষ্টির তুলনা দিয়ে থাকে তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুমহান মর্যাদা ও শানে চরম বেআদবি করার দরুণ কুফুরিতে পতিত হবে। (শিফা শরীফ) (শরহে আক্বাইদে নাসাফী- ১৬৪ পৃষ্ঠা)

বাতিল আক্বিদা-০৭

পূর্ণাঙ্গ শরিয়ত ও দ্বীনের যাবতীয় হুকুম আহকামের ব্যাপারে সৈয়দ আহমদ বেরলভীকে নবীগণের ছাত্রও বলা চলে,এবং নবীগণের উস্তাদের সমকক্ষও বলা চলে। নাউজুবিল্লাহ। (সিরাতে মুস্তাকিম- ৭১ পৃষ্ঠা)

ইসলামী আক্বিদা-০৭

হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উস্তাদ একমাত্র আল্লাহ তায়ালা।সুতরাং যারা সৈয়দ আহমদ বেরলভীকে আল্লাহর হাবীবের উস্তাদের সমকক্ষ বলে দাবি করে, তারা প্রথমে আল্লাহর সঙ্গে চরম বেআদবি করলো এবং আল্লাহর হাবীবের সুমহান মর্যাদাহানী হওয়ার কারণে সে কুফুরিতে পতিত হবে। (নাউজুবিল্লাহ)

বাতিল আক্বিদা-০৮

সৈয়দ আহমদ বেরলভীর নিকট এক প্রকারের ওহী এসে থাকে,যাকে শরিয়তের পরিভাষায় ‘নাফাসা ফির রাও’ বলা হয়।
কোন কোন আহলে কামাল ইহাকে বাতেনী ওহী বলেও আখ্যায়িত করে থাকেন এবং তাদের (সৈয়দ আহমদ বেরলভী ও তার ন্যায় অন্যদের) ইলিম যা হুবহু নবীদের ইলিম কিন্তু প্রকাশ্য ওহী দ্বারা অর্জিত নয় (অর্থাৎ বাতেনী ওহী দ্বারা অর্জিত) নাউজুবিল্লাহ।
(সিরাতে মুস্তাকিম- ৭১ পৃষ্ঠা)

উপরোল্লেখিত বক্তব্য দ্বারা বুঝা গেলো ‘নাফাসা ফির রাও’ যা জাহিরী ওহীর দ্বিতীয় প্রকার কেবলমাত্র নবীর জন্যই খাস,তা মনগড়া মতে বাতেনী ওহী ডিকলারেশন দিয়ে সৈয়দ আহমদ বেরলভীর নিকটও এসেছে এবং নবীগণের সমান সমান ইলিম তার ছিলো বলে দাবি করা হয়েছে। (নাউজুবিল্লাহ)

ইসলামী আক্বিদা-০৮

ইসলামী আক্বিদা হলো ওহীয়ে জাহিরীর দ্বিতীয় প্রকার نفث فى الروع নাফাসা ফির রাও’ এ প্রকারের ওহী কেবলমাত্র হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্যই খাস।অন্যের জন্য হতে পারে না। (নুরুল আনওয়ার দ্র:)
কোন উম্মত নবীদের সমান ইলিম লাভ করতে পারে না।এবং নবীদের সমকক্ষও হতে পারে না।
কোন উম্মতকে নবীদের সমকক্ষ বা নবী থেকে উত্তম আক্বিদা রাখা কুফুরি। (শরহে আক্বাইদে নাসাফী- ১৬৪)
নবুয়তের দাবিদার না হওয়া সত্ত্বেও যদি কেহ তার কাছে ওহী আসে বলে দাবি করে তাহলে তার এ দাবি কারাটাই আল্লাহর হাবীবকে অস্বীকার করার নামান্তর মাত্র এবং তাকে নবী বানানোর অপচেষ্টা করা বৈ কিছুই নয়।তাই তারা কুফুরিতে নিমজ্জিত হবে। (শিফা শরীফ- ২/২৮৫)

বাতিল আক্বিদা-০৯

এই সকল বুজুর্গদের নিকট (যে সকল বুজুর্গদের নিকট ‘নাফাসা ফির রাও’ বা বাতেনী ওহী আসে) এবং নবীগণ আলাইহিমুস সালামের মধ্যে পার্থক্য শুধু এতটুকু যে,নবীগণ উম্মতগণের প্রতি প্রেরিত হয়ে থাকেন এবং সেই সকল বুজুর্গ তাদের মনে উদিত বিধানকে প্রতিষ্ঠিত করেন।নবীগণের সাথে তাদের সম্পর্ক শুধু এতোটুকু যতোটুকু সম্পর্ক ছোট ভাই ও বড় ভাইয়ের মধ্যে অথবা বড় ছেলে ও বাপের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে। নাউজুবিল্লাহ।
(সিরাতে মুস্তাকিম- ৭১ পৃষ্ঠা)

ইসলামী আক্বিদা-০৯

ওহী একমাত্র নবীগণ আলাইহিমুস সালাম এর জন্য খাস।নবীগণ ছাড়া অন্য কারো কাছে ওহী আসার প্রশ্নই আসতে পারে না।ওহীয়ে খফী যাকে ‘এলহাম’ নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে।নবীগণের ‘এলহাম’ সঠিক এবং সত্য যার মধ্যে কোন সন্দেহ থাকতে পারে না।কিন্তু ওলীগণের ‘এলহাম’ সত্য ও মিথ্যা উভয়ই হতে পারে।ওলীগণের এলহাম শরিয়তের দলিল হয় না।ওলীগণের এলহাম অন্যের জন্য যেমনি দলিলরূপে পরিগণিত হয় না তেমনি নিজের জন্যও হয় না।হ্যাঁ যদি এলহাম কোরআন সুন্নাহর মোতাবেক হয়,তা দ্বারা মনে শান্ত্বনা আসে মাত্র। (নুরুল আনোয়ার)

যদি বলা হয় কোন কোন আল্লাহর ওলী ‘ইলমে লাদুনী’ লাভ করে পূর্ণাঙ্গ শরিয়তের হুকুম আহকাম সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা অর্জন করে থাকেন। (যেমন সৈয়দ আহমদ বেরলভী) তা একেবারেই ভিত্তিহীন।

এ প্রসঙ্গে আল্লামা আব্দুল গণি নাবিলুছি (আলাইহির রহমত) তদীয় ‘আল হাদিকাতুন নাদিয়া’ নামক কিতাবের ১/১৬৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-

فا لعلم اللدنى نوعان لدنى روحانى لدنى شيطان فالروحانى هو الوحى ولاوحى بعد الرسول صلى الله عليه وسلم
ভাবার্থ ‘ইলমে লাদুনি দুই প্রকার (১) লাদুনিয়ে রূহানী, (২)লাদুনিয়ে শয়তানী।লাদুনিয়ে রূহানী হলো ওহী এবং আল্লাহর হাবীব সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরে আর কোন ওহী নেই।’

এ দ্বারা প্রতীয়মান হলো আল্লাহর হাবীব যেহেতু সর্বশেষ নবী কিয়ামত পর্যন্ত আর কোন নবী আসবেন না। সুতরাং ওহীর দরজা যেমনি বন্ধ তদ্রুপ লাদুনিয়ে রূহানীর দরজাও বন্ধ।

মোদ্দাকথা হলো- সৈয়দ আহমদ বেরলভীর মলফুজাত ও ইসমাইল দেহলভীর লিখিত এবং মাওলানা কেরামত আলী জৈনপুরী সমর্থিত ‘সিরাতে মুস্তাকিম’ কিতাবের বক্তব্যের মাধ্যমে যে বাতিল আক্বিদাগুলি স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হলো তা নিম্নরূপ-

(১) রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সৈয়দ আহমদ বেরলভীর পূর্ণ সাদৃশ্য বর্তমান। আল্লাহর হাবীব উম্মী ছিলেন তিনিও উম্মী। (নাউজুবিল্লাহ)

(২) সেচ্ছায় নামাযের মধ্যে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খেয়াল করলে নামাযতো হবেই না বরং শিরিক হবে।আর অনিচ্ছাকৃতভাবে নামাযের মধ্যে নূরনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খেয়াল যদি এসে যায়,তাহলে এক রাকাতের পরিবর্তে চার রাকাআত নফল নামায পড়ে নিতে হবে। (নাউজুবিল্লাহ)

(৩) নামাযে যিনার ধারণার চেয়ে স্ত্রী সহবাসের খেয়াল ভাল। (নাউজুবিল্লাহ)

(৪) নবীগণ আলাইহিমুস সালাম উম্মতগণের প্রতি প্রেরিত হয়ে থাকে। (ইসলামের ভাষ্যমতে নবীগণ পূর্ণাঙ্গ শরিয়ত ও দ্বীনের যাবতীয় হুকুম আহকাম আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে উম্মতগণকে তা’লিম ও তরবিয়ত দিয়ে থাকেন সাথে বাতেনী তরবিয়তও দিয়ে থাকেন)
অপরদিকে সৈয়দ আহমদ বেরলভী মনে উদিত বিধানাবলীকে প্রতিষ্ঠিত করেন যা তিনি বাতিনী ওহী দ্বারা সরাসরি আল্লাহর পক্ষ থেকে লাভ করে থাকেন।(নাউজুবিল্লাহ)

অথচ আল্লাহর পক্ষ থেকে সরাসরি ইলিম নবীগণ ব্যতীত অন্য কেহ পেতে পারে না।

(৫) নবীগণ ও সৈয়দ আহমদ বেরলভীর মধ্যে পার্থক্য শুধুমাত্র এতোটুকু যতোটুকু সম্পর্ক বড়ভাই ও ছোট ভাইয়ের মধ্যে অথবা বড় ছেলেও বাপের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে। (নাউজুবিল্লাহ)

(৬) একদিকে সৈয়দ আহমদ বেরলভীকে নবীগণের ছাত্রও বলা চলে অন্যদিকে নবীগণের উস্তাদের সমকক্ষও বলা চলে। (নাউজুবিল্লাহ)

(৭) সৈয়দ আহমদ বেরলভী বাতেনী ওহীর মাধ্যমে নবীগণের সমতুল্য বা হুবহু নবীগণের ইলিমের সমপরিমাণ ইলিম সরাসরি অর্জন করেছেন। (নাউজুবিল্লাহ)

(৮) সৈয়দ আহমদ বেরলভীকে মা’ছুম বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। (নাউজুবিল্লাহ) মা’সুম গুণ একমাত্র নবীগণের জন্য নির্ধারিত।নবীগণ ছাড়া অন্যকেহ এগুণে গুণান্বিত হতে পারে না।একমাত্র বাতিল ফেরকা শিয়া সম্প্রদায়ই তাদের ইমামগণকে মাসুম বলে আক্বিদা রাখে।

(৯) একদিন স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা স্বীয় শক্তিশালী হাতে সৈয়দ আহমদ বেরলভীর ডান হাত ধরে বললেন আজ তোমাকে এতোটুকু দিলাম,পরে আরো দিবো। (নাউজুবিল্লাহ)

(১০) আল্লাহ তায়ালা ও সৈয়দ আহমদ বেরলভী সাহেবের মধ্যে পরস্পর সরাসরি কথাবার্তা হয়েছে। (নাউজুবিল্লাহ)

(১১) আল্লাহ তায়ালার সাথে সৈয়দ আহমদের করমর্দন বা মুসাফা হয়েছে। (নাউজুবিল্লাহ)

(১২) আউলিয়ায়ে কেরামের জিয়ারতের উদ্দ্যেশ্যে সফর করা শিরিক এবং সে সকল ওলীদের দরবারে অবস্থান করলে আল্লাহর গজবে পতিত হবে। (নাউজুবিল্লাহ)।

(১৩) চুরি ও জিনা করার মূহূর্তে যেভাবে ঈমান চলে যায়, ঠিক তেমনিভাবে ওলি আল্লাহগণের দরবারে অবস্থান করে দোয়া করার মূহূর্তে জিয়ারতকারীর ব্যক্তি ঈমানহারা হয়ে কাফের হয়ে যায়। (নাউজুবিল্লাহ)

(১৪) যদি কোন কবর জিয়ারতে মকসুদ পূর্ণ হতো তাহলে দুনিয়ার সকল মানুষ মদিনা মুনাওয়ারা চলে যেতো।

অর্থাৎ এ সকল কুফরী আক্বিদা মুসলমানগণ কখনো মানা সম্ভব নয়।

No comments:

Post a Comment