Thursday, September 17, 2015

মুসলিম জাহানে দ্বীনের যে সকল মুজাদ্দিদগণ চির স্মরণীয় হয়ে আছেন, তাঁদের নামের তালিকা

মুসলিম জাহানে দ্বীনের যে সকল মুজাদ্দিদগণ চির স্মরণীয় হয়ে আছেন,তাঁদের নামের তালিকা নিম্নে প্রদত্ত হলো:

মুজাদ্দিদ-১

হিজরি প্রথম ও দ্বিতীয় শতাব্দীর প্রথম মুজাদ্দিদ:
খলিফাতুল মুসলিমীন ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ (রাদিয়াল্লাহু আনহু)।তিনি দ্বিতীয় ওমর বলে পরিচিত।তিনি খারেজী ও শিয়া ফিতনা উৎখাত,উমাইয়া শাসকগণের জুলুম নির্যাতন দমন, ইয়াজিদী কুসংস্কারের পতন এবং হাজ্জাজ বিন ইউসুফ কর্তৃক আওলাদে রাসূলের প্রতি জুলুম ও নির্যাতনের উৎখাত প্রভৃতি স্বীয় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বলে দমন করে ইসলামের তাজদীদী কাজ আঞ্জাম দিয়েছেন।
তাঁর জন্ম ১৯ (ঊনিশ) হিজরি, এবং ওফাত শরীফ ১১২ হিজরি (একশত বারো হিজরি)।তিনি তাঁর জন্ম শতাব্দীর শেষ ভাগ থেকে আরম্ভ করে পর শতাব্দীর ১২ (বারো) বৎসর তাজদীদী দ্বীনের কাজের দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ইজমায়ে মুসলিমীন তথা সকল মুসলমানের ঐকমত্যে মুজাদ্দিদ হিসেবে গণ্য।

মুজাদ্দিদ-২

হিজরি দ্বিতীয় ও তৃতীয় শতাব্দীর দ্বিতীয় মুজাদ্দিদ:
(ক) ইমাম শাফেয়ী (রাদিয়াল্লাহু আনহু)।তাঁর জন্ম ১৫০ (একশত পঞ্চাশ) হিজরি,ওফাত ২০৪ (দুইশত চার) হিজরি।তিনি জন্ম শতাব্দীর শেষভাগ থেকে আরম্ভ করে পর শতাব্দীর ৪ (চার) বৎসর পর্যন্ত তাজদীদী দ্বীনের কাজ আঞ্জাম দিয়েছেন।

(খ) ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রাদিয়াল্লাহু আনহু)।তাঁর জন্ম ১৬৪ (একশত চৌষট্রি)হিজরি,ওফাত ২৪১ হিজরি (দুইশত একচল্লিশ) হিজরি। তিনি জন্ম শতাব্দীর শেষভাগ থেকে আরম্ভ করে পর শতাব্দীর ৪১ (একচল্লিশ) বৎসর পর্যন্ত তাজদীদী দ্বীনের দায়িত্বপালন করেন।
ইমাম শাফেয়ী (রাদিয়াল্লাহু আনহু), ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এর উস্তাদ ছিলেন।তিনি দ্বীনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাজদীদের কাজের সুচনা করেন।
তাঁর এ মহান তাজদীদের কার্যাবলী সমাপন করেন,তাঁরই সুযোগ্য শাগরিদ ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রাদিয়াল্লাহু আনহু)।তিনি সাড়ে সাঁতলক্ষ হাদীসের হাফিজ ছিলেন। তাঁর লিখিত হাদীসের কিতাব ‘মসনদে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল’ জগতে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে, এ কিতাবে চল্লিশ হাজারেরও অধিক হাদীস শরীফ রয়েছে।
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাদিয়াল্লাহু আনহু মু’তাজেলা ফেরকার ভ্রান্ত আক্বিদার খণ্ডন করে ইসলামের সঠিক আক্বিদাকে মুসলিম সমাজে পুনর্জীবিত করেন।
তাঁর জানাযা নামাজে আটলক্ষ পুরুষ এবং ষাট হাজার মহিলা শরিক হয়েছিলো।এছাড়াও নৌকা, ঘোড়ায় অসংখ্য লোকজন ছিলো। (বুস্তানুল মুহাদ্দিসীন)
তবকাতে শা’রানীতে উল্লেখ রয়েছে, এই দিনে বিশ হাজার ইহুদী ও নাসারা এবং অগ্নিপুজক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলো।

মুজাদ্দিদ-৩

হিজরি তৃতীয় ও চতুর্থ শতকের তৃতীয় মুজাদ্দিদ:
(ক) ইমাম নাছাই রাহমাতুল্লাহি আলাইহি।তাঁর জন্ম ২১৫ (দুইশত পনের) হিজরি এবং ওফাত ৩০৩ (তিনশত তিন হিজরি।তিনি জন্ম শতাব্দীর শেষভাগ থেকে আরম্ভ করে পর শতাব্দীর তিন বৎসর পর্যন্ত তাজদীদে দ্বীনের দায়িত্ব পালন করেন।

(খ) ইমাম আবুল হাসান আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু।তাঁর জন্ম ২৬০ (দুইশত ষাট) হিজরি এবং ওফাত ৩২০ (তিনশত বিশ) হিজরি।তিনি জন্ম শতাব্দীর শেষভাগ থেকে আরম্ভ করে পর শতাব্দীর বিশ বৎসর পর্যন্ত তাজদীদে দ্বীনের দায়িত্ব পালন করেন।
ইমাম নাছায়ী প্রথমে ‘ছুনানে কবীর’ নামে হাদীস শরীফের একখানা কিতাব সংকলন করেন।অতঃপর উহাকে সংক্ষেপ করে ‘আল মুজতাবা’ নামকরণ করেন।এই ‘মুজতাবা’ ছেহহা ছিত্তার অন্যতম কিতাব।ইহাই নাছায়ী শরীফ নামে মুসলিম বিশ্বে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে।
ইমাম নাছায়ী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) বিদআতী ফেরকা মুরজিয়ার উপদল জাহমিয়া ফেরকার ভ্রান্ত আকাইদের খণ্ডন করে তাজদীদে দ্বীনের কাজ সম্পন্ন করেন।

ইমাম আবুল হাসান আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু তিনি ইলমে আকাইদের একজন প্রসিদ্ধ ইমাম। তিনি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের দুইজন ইমামের মধ্যে একজন,অপরজন হচ্ছেন ইমাম আবু মনছুর মা’তুরদী বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু মুছা আশআরী (রাদিয়াল্লাহু আনহু)'র বংশধর।

মুজাদ্দিদ-৪

হিজরি চতুর্থ ও পঞ্চম শতকের চতুর্থ মুজাদ্দিদ:
(ক) ইমাম বায়হাকী (রাদিয়াল্লাহু আনহু)।তাঁর জন্ম ৩৮৪ (তিনশত চৌরাশি) হিজরি এবং ওফাত ৪৫৮ (চারশত আটান্ন) হিজরি।তিনি তাঁর জন্ম শতাব্দীর শেষভাগ থেকে আরম্ভ করে পর শতাব্দীর ৫৮ বৎসর পর্যন্ত তাজদীদে দ্বীনের খেদমত আঞ্জাম দেন।

(খ) ইমাম আবু বকর বাকেল্লানী (রাদিয়াল্লাহু আনহু)।তাঁরা উভয়ই রাফেজী ফেরকার স্বরূপ উন্মোচন করেন এবং মুসলমানদেরকে রাফেজী ফেরকার ভ্রান্ত আক্বিদার কবল থেকে তাঁদের ঈমান ও আক্বিদাকে হেফাজত করেন।ফলে মুসলিম সমাজ ইসলামের মূলধারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বাইদের উপর অটল থাকতে সহযোগিতা হয়।

রাফেজী ফেরকা মূলত: শিয়া ফেরকার একটি শাখা।রাফেজী শব্দের অর্থ পরিত্যাগকারী।যেহেতু তারা অধিকাংশ সাহাবায়ে কেরামগণকে পরিত্যাগ করেছে এবং শায়খাইন তথা খলিফাতুর রাসূল হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) ও আমিরুল মো’মিনীন হযরত ওমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এর বরহক খিলাফতকে অস্বীকার করে মুসলমানদের বৃহৎ জামায়াত ত্যাগ করে নূতন বিদআতী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এজন্য এদেরকে রাফেজী নামকরণ করা হয়েছে।

রাফেজীদের ভ্রান্ত আক্বিদা হলো:

১. তাদের ধর্মীয় ইমামগণ নিষ্পাপ, যাবতীয় ভুল ত্র“টি হতে পবিত্র।

২. সকল সাহাবায়ে কেরাম রেদওয়ানুল্লাহি আলাইহিম আজমাইন থেকে হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু আফজল বা সর্বোত্তম।

৩. হযরত উসমান গণি রাদিয়াল্লাহু আনহুর খেলাফতকে অস্বীকার করে।
পক্ষান্তরে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বিদা হলো- আল্লাহর হাবীবের ওফাত শরীফের পর সর্ব প্রথম বরহক খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু এর পর্যায়ক্রমে হযরত ওমর ফারুক, হযরত উসমান গণি ও হযরত আলী রেদওয়ানুল্লাহি আলাইহিম আজমাঈন সকলের খেলাফতের উপর ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

মুজাদ্দিদ-৫

হিজরি পঞ্চম ও ৬ষ্ঠ শতকের মুজাদ্দিদ হচ্ছেন- হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রাদিয়াল্লাহু আনহু। তাঁর জন্ম ৪৫০ (চারশত পঞ্চাশ) হিজরি, ওফাত ৫০৫ (পাঁচশত পাঁচ) হিজরি।
তিনি তাঁর জন্ম শতাব্দীর শেষভাগ থেকে আরম্ভ করে পর শতাব্দীর পাঁচ বৎসর পর্যন্ত তাজদীদে দ্বীনের খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন।
ইমাম গাজ্জালী (আলাইহির রহমত) সমকালীন ভ্রান্ত দলের আক্বাইদসমূহ বিশেষ করে কাদরীয়া সম্প্রদায়ের ভ্রান্ত আক্বিদার নাগপাশ থেকে মুসলিম জাতীর ঈমান আক্বিদা সংরক্ষণ করে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বিদাকে কোরআন-সুন্নাহের আলোকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন।
ইমাম গাজ্জালী (আলাইহির রহমত) এর পর যুগে যে বিদআতী দল সৃষ্টি হবে তার জওয়াবও দিয়েছেন।
যেমন সৈয়দ আহমদ বেরলভীর বাণী ইসমাঈল দেহলভীর কলম এবং জৈনপুরী কেরামত আলীর সমর্থিত কিতাব ‘সিরাতে মুস্তাকিম’ এ রয়েছে-

‘নামাযের মধ্যে নবীয়ে পাকের খেয়াল করা গরু-গাধার খেয়ালে ডুবে থাকার চেয়েও খারাপ এবং তাঁকে নামাজের মধ্যে তা’জিমের সঙ্গে খেয়াল করা শিরিক। (নাউজুবিল্লাহ)

ইমাম গাজ্জালী এহইয়ায়ে উলুমুদ্দিন ১/৯৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন- নামাযের বৈঠকে তোমার কলব বা অন্তরে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর দেহাকৃতিকে হাজির করে বলবে "আসসালামু আলাইকা আইয়ুহান্নাবীউ ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু"

অর্থাৎ আল্লাহর হাবীবকে তা’জিমের সাথে খেয়াল করে সালাম পেশ করবে।কেননা আল্লাহর হাবীবের তা’জিমই আল্লাহর বন্দেগী।

পাঠকবৃন্দ চিন্তা করে দেখুন ইমাম গাজ্জালী (আলাইহির রহমত) এর দূরদর্শী চিন্তাধারা কত ষ্পষ্ট।

মুজাদ্দিদ-৬

হিজরি ষষ্ঠ ও সপ্তম শতকের ষষ্ঠ মুজাদ্দিদ হচ্ছেন- শায়খুল ইসলাম ইমাম ফখরুদ্দিন রাজী রাদিয়াল্লাহু আনহু।তাঁর জন্ম ৫৪৪ (পাঁচশত চোয়াল্লিশ) হিজরি ওফাত ৬০৬ (ছয়শত ছয়) হিজরি।
তিনি তাঁর জন্ম শতকের শেষভাগ থেকে আরম্ভ করে পর শতাব্দীর ছয় বৎসর পর্যন্ত তাজদীদে দ্বীনের দায়িত্বপালন করেন।
তাঁর রচনাবলীর মধ্যে ‘তাফসিরে কবীর’ নামক কিতাবখানাই সারা বিশ্বে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে।তাফসিরে কবীরের বৈশিষ্ট অপরিসীম।
তিনি তদীয় তাফসিরে কবীরে ‘ জাহমিয়া’ মু’তাজিলা’ মুজাসসিম’ কায়রা মিয়া এবং তাঁর যুগের সকল ভ্রান্ত সম্প্রদায়ের বাতিল আক্বাঈদের খণ্ডন করে তাঁর তাজদীদী কাজ সমাপন করেছেন।
তন্মধ্যে একটি মাসআলা বিশেষভাবে প্রনিধানযোগ্য।মাসআলাটি হলো, রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার আব ও আজদাদ তথা পিতৃকুল ও মাতৃকুলের মধ্যে কেহই কুফুরির উপর ছিলেন না বরং সবাই মুমিন ছিলেন।এককথায় হযরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার পিতা-মাতা হযরত আব্দুল্লাহ ও হযরত আমিনা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা পর্যন্ত সবাই মুমিন ছিলেন।কেহই কাফের ছিলেন না।
আমাদের আকাবিরদের মধ্যে যদিও কেউ কেউ এ মাসআলা নিয়ে মতানৈক্য করেছেন,তা হলো তাঁদের ইজতেহাদী গলদ।
ইমাম ফখরুদ্দিন রাজী (আলাইহির রহমত) কোরআন পাকের আয়াতে কারীমা ও এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফের সঠিক ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেই মাসআলার সুষ্ঠু সমাধান দিয়েছেন।

মুজাদ্দিদ-৭

হিজরি সপ্তম ও অষ্টম শতকের সপ্তম মুজাদ্দিদ হচ্ছেন-
(ক) ইমাম তকী উদ্দিন ছুবুকী রাদিয়াল্লাহু আনহু। তাঁর জন্ম ৬৮৩ (ছয়শত তিরাশি) হিজরি এবং ওফাত ৭৫৬ (সাতশত ছাপ্পান্ন) হিজরি।

(খ) ইমাম তকী উদ্দিন ইবনে দাকিকুল ঈদ রাদিয়াল্লাহু আনহু। তাঁর জন্ম ৬২৫ (ছয়শত পঁচিশ) হিজরি এবং ওফাত ৭০২ (সাতশত দুই) হিজরি।
আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী (আলাইহির রহমত) ইমাম তকী উদ্দিন ছুবকী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে খাতিমূল মুজতাহিদীন তথা মুজতাহিদগণের সর্বশেষ ব্যক্তিত্ব বলে অভিহিত করেছেন।সুতরাং তিনি যে মুজতাহিদ ছিলেন এ ব্যাপারে কারো কোন দ্বিমত নেই।যা মুজাদ্দিদ লকবের চেয়েও আরো বহু গুণ উপরে।
ইমাম ছুবুকি রাদিয়াল্লাহু আনহু অনেক মূল্যবান কিতাবাদী রচনা করেছেন।তিনি লিখনীর মাধ্যমে তাজদীদে দ্বীন তথা ধর্মীয় সংস্কারমূলক কাজে বলিষ্ট ভূমিকা রাখেন।তাঁর লিখিত কিতাবাদীর মধ্যে ‘শিফাউস সিকাম’ ‘আস সাইফুল মাছলুল’ ‘হুরবাতুল মুজিয়া’ এবং আত তা’জিম ওয়াল মিন্নাহ’ ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
এগুলোর মধ্যে ‘শিফাউস সিকাম’ কিতাবখানাই সারা বিশ্বে অধিক প্রসিদ্ধি লাভ করেছে।এ কিতাবখানা নব্য খারেজি ফিতনায়ে ইবনে তাইমিয়ার খণ্ডনে একটি দলিলভিত্তিক কিতাব।
ইবনে তাইমিয়ার বাতিল আক্বিদার মধ্যে একটা জঘন্যতম আক্বিদা হলো- আম্বিয়ায়ে কেরাম ও আউলিয়ায়ে এজামের জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা শিরিক। (নাউজুবিল্লাহ)

তারই অনুকরণে সৈয়দ আহমদ বেরলভীর মলফুজাত যা ইসমাঈল দেহলভী লিখেছেন এবং কেরামত আলী জৈনপুরীর সমর্থিত কিতাব ‘সিরাতুল মুস্তাকিম’ এ রয়েছে-
‘দূর দুরান্ত থেকে আউলিয়ায়ে কেরামের মাজার শরীফ জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করলে শিরকের অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে এবং আল্লাহর গজবের ময়দানে পতিত হবে।’ (নাউজুবিল্লাহ)

এ শতাব্দীর অপর আরেকজন অন্যতম মুজাদ্দিদ হচ্ছেন ইমাম তকী উদ্দিন ইবনে দাকীকুল ঈদ।
তিনি একজন সুদ লেখক ছিলেন। তাঁর লিখিত আল ইলমান ফি আহাদিসীল আহকাম,শরহে উমাদতুল আহকাম,আল ইকতেরা, মুকাদ্দামা তাতারিমী ও আরবায়িন ফি রিওয়ায়েতে আন রাব্বিল আলামীন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
তিনি মালেকী ও শাফেয়ী উভয় মাযহাবের ফকীহ ছিলেন।
এছাড়াও তিনি কোরআন-সুন্নাহর সঠিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে তাঁর সমকালীন বাতিল বিদআতী আক্বিদার খণ্ডন করেন এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকাইদকে প্রতিষ্ঠা করে তাজদীদে দ্বীনের দায়িত্ব আঞ্জাম দেন।এজন্যই ইমাম জালালউদ্দিন সুয়ূতি রাদিয়াল্লাহু আনহু ‘তুহফাতুল মুহতাদিন বি আখবারিল মুজাদ্দিদীন’ নামক কিতাবে ইবনে দাকিকুল ঈদ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে সপ্তম মুজাদ্দিদ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

এছাড়া উলামায়ে কেরামের বিশ্বাস প্রতি সাতশত বৎসরের প্রারম্ভে যে বিজ্ঞ আলেমের আবির্ভাবের অঙ্গীকার রয়েছে,সেই বিজ্ঞ আলেম হচ্ছেন ইমাম তকী উদ্দিন ইবনে দাকিকুল ঈদ।

মুজাদ্দিদ-৮

হিজরি অষ্টম ও নবম শতাব্দীর অষ্টম মুজাদ্দিদ হচ্ছেন,হাফিজুল হাদীস ইবনে হজর আসকালানী রাদিয়াল্লাহু আনহু।তাঁর জন্ম ৭৭৩ (সাতশত তেয়াত্তর) হিজরি, ওফাত ৮৫২ (আটশত বায়ান্ন) হিজরি।
তিনি বহু গ্রন্থ প্রণেতা,দেড়শতেরও অধিক কিতাবাদী রচনা করেছেন। তাঁর লিখিত ‘ফতহুল বারি ফি শারহিল বোখারী’ এ বিশাল কিতাবখানাই বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।তিনি তাঁর লিখনীর মাধ্যমে তাজদীদে দ্বীনের কাজ আঞ্জাম দিয়েছেন।

মুজাদ্দিদ-৯

হিজরি নবম ও দশম শতাব্দীর নবম মুজাদ্দিদ হচ্ছেন,ইমাম জালালউদ্দিন সুয়ুতি রাদিয়াল্লাহু আনহু।তাঁর জন্ম ৮৪৯ (আটশত ঊনপঞ্চাশ) হিজরি, ওফাত ৯১১ (নয়শত এগারো) হিজরি।

মুজাদ্দিদ-১০

হিজরি দশম ও একাদশ শতাব্দীর দশম মুজাদ্দিদ হচ্ছেন-
(ক) আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (আলাইহির রহমত)।তাঁর ওফাত ১০১৪ (একহাজার চৌদ্দ) হিজরি।

(খ) আল্লামা মুজাদ্দিদে আলফেসানী রাদিয়াল্লাহু আনহু।তাঁর জন্ম ৯৭১ (নয়শত একাত্তর) হিজরি, ওফাত ১০৩৪ (একহাজার চৌত্রিশ) হিজরি।

(গ) আল্লামা শেখ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী।তাঁর জন্ম ৯৫৮ (নয়শত আটান্ন) হিজরি, ওফাত ১০৫২ (একহাজার বায়ান্ন) হিজরি।

মুজাদ্দিদ-১১

হিজরি একাদশ ও দ্বাদশ শতাব্দীর একাদশ মুজাদ্দিদ হচ্ছেন,ইমাম মহিউদ্দিন আওরঙ্গজেব শাহেনশাহে হিন্দ।তাঁর জন্ম ১০২৮ (একহাজার আটাইশ) হিজরি, ওফাত ১১১৭ (এগারোশ সতের) হিজরি।

তিনি তাঁর জন্ম শতাব্দীর শেষভাগ থেকে আরম্ভ করে,পর শতাব্দীর সতের বৎসর পর্যন্ত তাজদীদে দ্বীনের দায়িত্বপালন করেন।তাঁর সম্পূর্ণ জীবন ধর্মত্যাগী মুরতাদ খোদাদ্রোহী বাতিল শক্তির মোকাবেলায় অতিবাহিত করেন।
তাঁর ব্যবস্থাপনায় প্রণয়ন করা হয়েছে, হানাফী মাযহাবের অমূল্য ফতওয়াগ্রন্থ ‘ফতওয়ায়ে আলমগীরি’ যে গ্রন্থখানা আরবদেশে ‘ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া’ নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। ইহা বাদশাহ আওরঙ্গজেব আলমগীরের অমরকীর্তি হিসেবে পরিগণিত।

মুজাদ্দিদ-১২

হিজরি দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ শতাব্দীর দ্বাদশ মোজাদ্দিদ হচ্ছেন,শাহ আব্দুল আজিজ মুহাদ্দিসে দেহলভী (আলাইহির রহমত)।তাঁর জন্ম ১১৫৯ (এগারোশ ঊনষাট) হিজরি, ওফাত ১২৩৯ (বারোশ ঊনচল্লিশ) হিজরি।
তিনি স্বীয় পিতা বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস শাহ ওলী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী (আলাইহির রহমত)-এর যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে কোরআন-সুন্নাহর তালিমের মিশন অব্যাহত রেখে বাতিল ফেরকার বদ আক্বিদা ও বিদআতী আমলকে বাঁধাগ্রস্থ করে সুন্নী আক্বিদা ও আমলকে অক্ষুন্ন রেখেছেন।

এতদভিন্ন তাঁর সমকালীন বিভিন্ন বাতিল ফেরকার মোকাবেলা ও তাদের ভ্রান্ত মতবাদের খণ্ডনে ‘তোহফায়ে ইসনা আশারিয়া’ নামক বিখ্যাত কিতাব প্রণয়ন করে এ শতাব্দীর তাজদীদে দ্বীনের কাজের আঞ্জাম দিয়েছেন।

এছাড়া ‘বুস্তানুল মুহাদ্দিসীন’ তাফসিরে আজিজি ও ফতওয়ায়ে আজিজিয়া’ সহ অনেক কিতাব প্রণয়ন করে সুন্নিয়তের পতাকা উড্ডিয়ন করেছেন।

মুজাদ্দিদ-১৩

হিজরি ত্রয়োদশ ও চতুর্দশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ হচ্ছেন,আলা হযরত ইমামে আহলে সুন্নাত,আজিমূল বারাকাত, তাজুশ শরিয়ত ইমাম আহমদ রেজা খাঁন বেরেলী (আলাইহির রহমত)।
তাঁর জন্ম ১০ই শাওয়াল ১২৭২ (বারোশ বায়াত্তর) হিজরি, ওফাত ২৫ শে সফর ১৩৪০ (তেরোশ চল্লিশ) হিজরি।

এ হিসেবে তিনি ত্রয়োদশ শতাব্দীর ২৮ বৎসর ২ মাস ২০ দিন পেয়েছেন এবং চতুর্দশ শতাব্দীর ৩৯ বৎসর ১ মাস ২৫ দিন পেয়েছেন।
তাঁর ব্যক্তিত্বে বাস্তবিকই তাজদীদে দ্বীনের মহান গুণাবলী, শর্তাবলীসমূহ তাঁর মধ্যে পরিপূর্ণ রয়েছে।
তিনি সমকালীন বিভিন্ন ভ্রান্ত ফেরকা যথা ওহাবী,রাফেজী,খারেজী, দেওবন্দী,শিয়া,কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রাম করেছেন।বিভিন্ন ভ্রান্ত মতবাদের খণ্ডনে প্রায় দেড় সহস্রাধিক কিতাবাদী প্রণয়ন করেন। বিশ্ববাসীর সামনে ইসলামের প্রকৃত রূপরেখা তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বিদা বিশ্বাসকে উপস্থাপন করেন,এজন্য তাঁকে এ শতাব্দীর সফল মুজাদ্দিদ হিসেবে আরব আজমের প্রখ্যাত উলামায়ে কেরাম ও মণিষীবৃন্দ আখ্যায়িত করেছেন।

এজন্য যে,তাজদীদে দ্বীনের অর্থ হচ্ছে কোরআন-সুন্নাহর বিধানের যথার্থ বাস্তবায়ন করা,মুর্দা বা বিলুপ্ত সুন্নাতকে জিন্দা বা চালু করার মহৎগুণাবলী ও শর্তাবলী আ’লা হযরতের জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
আলা হযরতের নিকট এ সমস্ত গুণাবলী থাকার কারণে আরব আজমের হক্বানী উলামায়ে কেরাম ও মুফতিয়ানে এজাম,মুহাদ্দিসীনে কেরাম তাঁকে সফল মুজাদ্দিদ হওয়ার ব্যাপারে স্বীকৃতি প্রদান করেছেন।

No comments:

Post a Comment