Wednesday, October 14, 2015

নামাজে রাসূলেপাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)এর খেয়াল করা আল্লাহর বন্দেগী


দলিল-০১

নামাযে রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেয়াল তা’জিমের সাথে করাই আল্লাহপাকের বন্দেগী এ সম্পর্কে হাদিসে কারীমা লক্ষ্য করুন-

حدثنا ابو اليمان قال اخبرنا شعيب عن الزهرى قال اخبرنى انس بن مالك الانصارى وكان تبع النبى صلى الله عليه وسلم وخدمه وصحبه ان ابا بكر كان يصلى لهم فى وجع النبى صلى الله عليه وسلم الذى توفى فيه حتى اذا كان يوم الاثنين وهم صفوف فى الصلوة فكشف النبى صلى الله عليه وسلم ستر الحجرة ينظر الينا وهو قائم كان وجهه ورقة مصحف ثم تبسم يضحك فهممنا ان تفتتن من الفرح برؤية النبى صلى الله عليه وسلم فنكص ابو بكر على عقبيه ليصل الصف وظن ان النبى صلى الله عليه وسلم خارج الى الصلوة فاشار الينا النبى صلى الله عليه وسلم ان اتموا صلاتكم وارخى الستر فتوفى من يومه صلى الله عليه وسلم. (بخارى شريف ص ۱/۹۳-۹۴)
ভাবার্থ: ‘হযরত আনাস ইবনে মালিক আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু যিনি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর (আক্বিদা ও আমলের) পূর্ণ অনুসারী ছিলেন এবং একাধারে দশ বৎসর আল্লাহর হাবীবের খেদমতে নিয়োজিত ছিলেন আর তিনি তাঁর একজন জলিল কদর সাহাবীও ছিলেন।
তিনি বলেন- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অন্তিম রোগ থাকাকালীন অবস্থায় হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু সাহাবায়ে কেরামগণকে নিয়ে(ইমাম হয়ে)নামায আদায় করতেন।
অবশেষে সোমবার দিনে হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু এর ইমামতিতে সাহাবায়ে কেরামগণ নামাযরত অবস্থায় কাতারবন্দী ছিলেন।তখন নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুজরা শরীফের পর্দা উঠিয়ে দাঁড়ানো অবস্থায় আমাদের দিকে তাকালেন।এ সময়ে তাঁর (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) চেহারা মোবারক মাসহাফ তথা কোরআন কারীমের স্বচ্ছ পৃষ্ঠার ন্যায় ঝলমল করছিলো। অতঃপর তিনি মুচকি হাঁসছিলেন।
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নূরানী চেহারা মোবারক দর্শনে আমরা(সাহাবায়ে কেরামগণ)স্বেচ্ছায় আনন্দে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলাম।
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (হুজরা মোবারক থেকে) নামাযের জামায়াতে আসবেন এ ভেবে হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু (ইমামতির স্থান থেকে) পিছন দিকে সরে নামাযের প্রথম কাতারে প্রত্যাবর্তন করলেন।তখন নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে ইশারায় বললেন اتموا صلاتكم তোমরা অসম্পূর্ণ নামাযকে পূর্ণ করে নাও।অতঃপর আল্লাহর হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্দা মোবারক ফেলে দিলেন।
সে দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওফাত শরীফ হয়েছিলো।(বোখারী শরীফ ১/৯৩ পৃষ্ঠা)

উপরোক্ত হাদিসশরীফের মাধ্যমে শরিয়তের যে কয়েকটি মাসআলা প্রমাণিত হলো তা নিম্নরূপ-

(১) হুজুর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন অন্তিম বিমারশরীফে শয্যাশায়িত ছিলেন তখন হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু সতের,সহিহ রেওয়ায়েতে একুশ ওয়াক্তের নামাযের জমায়াতে আল্লাহর হাবিবের নির্দেশ মোতাবেক ইমামতি করেছেন। এজন্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওফাতশরীফের পর হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহুই হলেন তাঁর সর্বপ্রথম খলিফা। যাকে খলিফাতুর রাসূল বলে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে।(اصح السير ‘আছাহহুছ ছিয়র’)

(২) সাহাবায়ে কেরামগণ যখন আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু এর ইমামতিতে সোমবার দিনে ফজরের ফরয নামাযের জামায়াতে কাতারবন্দী অবস্থায় ছিলেন।ঝুলন্ত পর্দা আবৃত হুজুর পুরনুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ানো অবস্থায় পর্দা উঠিয়ে উক্ত জামায়াতের দিকে নূরানী হাস্যেজ্জ্বল চেহারা মোবারক নিয়ে তাকালেন। এমতাবস্থায় সাহাবায়ে কেরামগণ স্বপ্রণোদিত হয়ে নামাযের কাজকর্ম স্থগিত রেখে আল্লাহর হাবীবের দিকে মনোনিবেশ করলেন এবং আনন্দে আত্মহারা হলেন।আর আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু আল্লাহর হাবীবের দর্শনে ইমামতির স্থান থেকে পিছনের দিকে প্রথম কাতারে প্রত্যাবর্তন করলেন।

এ থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো-
হাবীবে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেয়াল ও তা’জিম সাহাবায়ে কেরামগণ নামাযের ভিতরেই করেছেন কেননা নামাযের ভিতরে তা’জিমের সঙ্গে রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেয়াল করাই আল্লাহর বন্দেগী।

(৩) যখন নূর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুজরা মোবারকে পর্দার ভিতরে ছিলেন,এমতাবস্থায় সাহাবায়ে কেরামগণ মসজিদে নববীতে ফজরের ফরয নামাযের জমায়াত হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু এর ইমামতির মাধ্যমে পড়তে ছিলেন।
যে মুহূর্তে হাবীবে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্দা উঠিয়ে নামাযের জামায়াতের দিকে থাকালেন এবং সাহাবায়ে কেরামগণ আল্লাহর হাবিবকে দেখতে পেলেন, তখন সাহাবায়ে কেরামগণ নামাযের কাজকর্ম স্থগিত করে নবীর তা’জিমে তাঁর দিকে মুখ ফিরে নবীর মহব্বতে স্বেচ্ছায় আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়লেন।
আবার যখন আল্লাহর হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্দা মোবারক ফেলে দিলেন এবং অসম্পূর্ণ নামায আদায়ের নির্দেশ দিলেন,তখনই সাহাবায়ে কেরামগণ বাকী নামায সম্পূর্ণ করলেন। এতে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো- নবীকে দেখতে না পেলে নামায, রাসূলের ইমামতি ব্যতিরেকেই আদায় করবে। এতে কোন ত্র“টি-বিচ্যুতি নেই।আর যখনই রাসূলে মকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখা যাবে, নামায স্থগিত রেখে রাসূলের ইমামতি গ্রহণ করতে হবে এটাই আদব।

এ প্রসঙ্গে কোন কোন বাতিলপন্থীরা প্রশ্ন তোলে যে,যদি আল্লাহর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নেককারের যানাযায় হাজির হয়ে থাকেন,তাহলে হাবীবে খোদার ইমামতি ছাড়া নামায পড়া হয় কেনো?
এর উত্তরে আমরা বলবো- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজির হওয়া স্বত্ত্বেও আমরা তাঁকে দেখি না,তাই নিজেদের ইমামতির মাধ্যমে নামায সম্পন্ন করি।যদি আমরা আল্লাহর হাবীবকে দেখতাম, তাহলে নামাযে যানাযা স্থগিত করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইমামতিতে নামায আদায় করতাম।

যেমনিভাবে আল্লাহর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামায়াতের অতি নিকটবর্তী হুজরা মোবারকে পর্দা আবৃত অবস্থায় হাজির থাকা সত্ত্বেও হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু এর ইমামতিতে সাহাবায়ে কেরামগণ মসজিদে নববীতে নামায পড়তেছিলেন।আর আল্লাহর নবী যখন পর্দা মোবারক সরিয়ে জামায়াতের দিকে থাকালেন এবং সাহাবায়ে কেরামগণ আল্লাহর হাবিবের দর্শনে ধন্য হলেন তখনই সকল সাহাবায়ে কেরাম নামাযের কাজকর্ম স্থগিত করে আল্লাহর হাবিবের নূরানী চেহারা মোবারক দেখে দেখে আত্মহারা হয়ে পড়লেন, অপরদিকে হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু আল্লাহর হাবিবের ইমামতির মাধ্যমে নামায আদায় করবেন ধারণায় ইমামতির স্থান ছেড়ে পেছনের কাতারে প্রত্যাবর্তন করলেন।
আবার যখন হাবিবে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসম্পূর্ণ নামায সম্পন্ন করার জন্য নির্দেশ দিয়ে হুজরা মোবারকের পর্দা ফেলে দিলেন এবং সাহাবায়ে কেরামগণ চাুসভাবে নবীকে দেখতে পেলেন না, এমতাবস্থায় সাহাবায়ে কেরামগণ আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু ইমামতিতে নামায সম্পন্ন করলেন।

সুতরাং নেককারের যানাযাতে নবীর আগমন সত্য যেহেতু আমরা নবীকে চর্ম চুতে দেখি না, এজন্য আমরা নিজেদের ইমামতিতেই নামায আদায় করে থাকি।যদি নবীকে চাুসভাবে দেখার নসীব আমাদের হয়ে যেত তাহলে সাহাবায়ে কেরামগণের অনুকরণে নবীর ইমামতিতেই আমারা নামায আদায় করে নিতাম।

দলিল- ০২

عن ابى حازم بن دينار عن سهل بن سعد الساعدى ان رسول الله صلى الله عليه وسلم ذهب الى بنى عمرو بن عوف ليصلح بينهم فحانت الصلوة فجاء المؤذن الى ابى بكر فقال اتصلى للناس فاقيم قال نعم فصلى ابو بكر فجاء رسول الله صلى الله عليه وسلم والناس فى الصلوة فتخلص حتى وقف فى الصف فصفق الناس وكان ابوبكر لايلتفت فى صفوته فلما اكثر الناس التصفيق التفت فراى رسول الله صلى الله عليه فاشار اليه رسول الله صلى الله عليه وسلم ان امكث مكانك فرفع ابوبكر يديه فحمد الله على ما امره به رسول الله صلى الله عليه وسلم من ذلك ثم استاخر ابو بكر حتى استوى فى الصف وتقدم رسول الله صلى الله عليه وسلم فصلى فلما انصرف قال يا ابا بكر ما منعك ان تثبت اذا امرتك فقال ابو بكر ما كان لابن ابى قحافة ان يصلى بين يدى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم مالى رأيتكم اكثر ثم التصفيق من نابه شئ فى صلاته فليسبح فانه اذا سبح التفت اليه وانما التصفيق للنساء. (بخارى شريف ۱/۹۴)
ভাবার্থ: ‘হযরত সাহাল ইবনে সা’দ সাঈদী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- নিশ্চয় একদা রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমর ইবনে আউফ গোত্রের একটি বিবাদ মিমাংসার জন্য তাদের বস্তিতে তাশরীফ নিয়েছিলেন, এদিকে নামাযের ওয়াক্ত হয়ে গেলো। তখন মোয়াজ্জিন হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু এর নিকট গিয়ে অবস্থা ব্যক্ত করে বললেন, আপনি জামায়াত পড়াইয়া নিন।এতে আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু সম্মতি জ্ঞাপন করে বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে।তখন আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু ইমাম হয়ে নামায আরম্ভ করলেন।

এমতাবস্থায় রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তথায় তাশরীফ আনলেন,যখন সাহাবায়ে কেরাম নামাযরত অবস্থায় ছিলেন।
আল্লাহর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিছনের কাতারগুলো অতিক্রম করে প্রথম কাতারে এসে দাঁড়ালেন, সে সময় (হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহুকে রাসূলেপাকের আগমন অবগত করানো জন্য) কিছু সংখ্যক মুসল্লী (সাহাবায়ে কেরাম) হাতের উপর হাত মেরে শব্দ করলেন। 
(উল্লেখ্য যে) হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু নামাযরত অবস্থায় কোন দিকে ফিরে থাকাতেন না।কিন্তু অধিকাংশ সাহাবায়ে কেরাম নামাযরত অবস্থায় যখন হাততালি দিতে লাগলেন তখন তিনি (আবু বকর) ফিরে তাকিয়ে আল্লাহর হাবীবকে দেখতে পেলেন।(এবং তৎক্ষণাৎই তিনি পিছনের দিকে সরে যেতে লাগলেন)
(এমতাবস্থায়) রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে (আবু বকরকে) নিজের অবস্থানে স্থির থাকতে ইশারায় নির্দেশ দিলেন। রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইশারার কৃতজ্ঞতা স্বরূপ দুইহাত উত্তোলন করে আল্লাহপাকের প্রশংসা করে পিছনে ফিরে প্রথম কাতারে এসে দাঁড়ালেন।
তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামনে এগিয়ে গিয়ে ইমামতি করে নামায আদায় করলেন। নামায শেষ করে তিনি বললেন হে আবু বকর! আমার নির্দেশ পালনে কিসে তোমাকে বাধা দিয়েছিল? আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু জবাবে বললেন,আবু কুহাফার পুত্রের জন্য আল্লাহর হাবীবের সামনে দাঁড়িয়ে (নিজে ইমাম হয়ে) নামায আদায় করা শোভা পায় না।

অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামগণের উদ্দেশ্যে বললেন- আমি তোমাদেরকে (নামাযের ভিতরে) হাতে তালি দিতে দেখলাম, ব্যাপার কি? শোন! নামাযের মধ্যে যদি কাউকে কোন কিছু থেকে ফিরাতে হয় তাহলে (পুরুষগণ) ‘সুবহানাল্লাহ’ বলবে। সুবহানাল্লাহ বললেই তার দিকে দৃষ্টি দেওয়া হবে। আর হাতে তালি দেওয়া তো মহিলাদের জন্য। (কেননা মহিলাদের কণ্ঠস্বর বেগানা পুরুষদের শুনানো অনুচিত। (বোখারশরীফ ১/৯৪ পৃষ্ঠা)

উপরোক্ত হাদিসশরীফ দ্বারা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো-

(১) নামাযরত অবস্থায় সাহাবায়ে কেরামগণ রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেয়াল তা’জিমের সাথে ইচ্ছা করেই করেছেন।কারণ হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কাতার ভেদ করে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন,তখন সাহাবায়ে কেরাম নামাযরত অবস্থায় কাতার ফাঁক করে দিয়েছিলেন যাতে সামনে অগ্রসর হওয়া সহজ হয়।

(২) নামাযের ভিতরে ইচ্ছা করে তা’জিমের সাথে রাসূলেপাকের খেয়াল করাই সাহাবায়ে কেরামগণের আক্বিদা ও আমল।এজন্যই তো হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু নিজ ইমামতির স্থান ছেড়ে পিছনের কাতারে স্বেচ্ছায় তা’জিম রার জন্য এসে দাঁড়ালেন এবং নামাযের ভিতরেই নিজের ইমামতি স্থগিত করে আল্লাহর হাবীবকে ইমামতি দিয়ে দিলেন, আর আল্লাহর হাবীবও স্বেচ্ছায় ইমামতি করে নামায সমাপন করলেন।

দেখুন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রথমে ছিলেন ইমাম,আল্লাহর হাবিব নামাযের জামায়াতে আসার দরুণ নিজে ইমামতি ছেড়ে আল্লাহর হাবিবকে ইমামতি দিয়ে দিলেন সুবহানাল্লাহ! দেখলেন তো নামাযের ভিতরে সাহাবায়ে কেরাম আল্লাহর হাবীবকে কিভাবে স্বেচ্ছায় তা’জিম করলেন।

এতে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো- নামাযের ভিতরে আল্লাহর হাবিবের তা’জিমই আল্লাহর বন্দেগী।

(৩) সুতরাং যারা বলে নামাযে ইচ্ছা করে তা’জিমের সাথে আল্লাহর রাসূলের খেয়াল করলে মুশরিক হবে এবং অনিচ্ছায় খেয়াল এসে পড়লে যে রাকাআতে খেয়াল আসল এ এক রাকাতের স্থলে চার রাকাআত নফল নামায আদায় করতে হবে।এ রকম বিভ্রান্তিকর ফতওয়া দ্বারা সাহাবায়ে কেরামগণ মুশরিক সাব্যস্থ হয়ে যান। (নাউজুবিল্লাহ) যা ইসলামবিরোধী আক্বিদা।

এরূপ ঘৃণ্য ফতওয়া দিয়েছেন মাওলানা কেরামত আলী জৈনপুরী জখিরায়ে কেরামত ১/২৩১ পৃষ্ঠা, বাংলা জখিরায়ে কেরামত ১ম খণ্ড ২৯-৩০ পৃষ্ঠা।সৈয়দ আহমদ বেরলভীর মলফুজাত এবং মাওলানা ইসমাঈল দেহলভীর লিখিত কিতাব সিরাতে মুস্তাকিম ১৬৭-১৬৮ পৃষ্ঠা।

দলিল- ০৩

আল্লামা ইমাম গাজ্জালী আলাইহির রহমত এহইয়ায়ে উলুমিদ্দিন কিতারেব ১ম জিলদের ৯৯ পৃষ্ঠায় বাতেনি শর্তের বয়ানে লিখেছেন-

واحضر فى قلبك النبى صلى الله عليه وسلم وشخصه الكريم وقل السلام عليك ايها النبى ورحمة الله وبركاته-
অর্থ: তোমরা ক্বলব বা অন্তরে রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এবং তাঁর পবিত্র দেহাকৃতিকে উপস্থিত জানবে এবং বলবে ‘আস সালামু আলাইকা আইয়ুহান্নাবীউ ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।’

দলিল- ০৪

পাক-ভারত উপমহাদেশের সর্বজন স্বীকৃত আলেমকুল শিরোমণি শেখ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী আলাইহির রহমত লিখিত ‘মাদারিজুন নবুয়ত’ কিতাবের ১ম জিলদের ১৬৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে-

ازجملہ خصائص ایں رانیز ذکر کردہ اندکہ مصلے خطاب میکند آنحضرت راصلی اللہ علیھ وسلم بقول خود السلام علیک ایھا النبی وخطاب نمیکند غیر اورا۔
অর্থাৎ ‘রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ফাযায়েলের বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়েছে যে,মুসল্লিগণ নামাযের মধ্যে আসসালামু আলাইকা আইয়হান্নাবীউ’ পাঠকালে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্বোধন করবে অন্য কারো প্রতি নয়।’

উপরোন্তু ‘আশিয়াতুল লুমআত’ শরহে মেশকাত এর ১ম জিলদের ৪০১ পৃষ্ঠায় শেখ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী আলাইহির রহমত আরো উল্লেখ করেছেন-

وبعض ازعارفاء گفتہ اند کہ ایں خطاب بجھت سریان حقیقت محمدیہ است درذرائر موجودات وافراد ممکنات پس انحضرت درذات مصلیاں موجود وحاضراست-
অর্থাৎ কোন কোন আরিফ ব্যক্তিগণ বলেছেন,নামাযে ‘আসসালামু আলাইকা আইয়ুহান্নাবীউ’ বলে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্বোধন রীতির প্রচলন এ জন্যই করা হয়েছে যে,হাকিকতে মোহাম্মদীয়া বা হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মূল সত্ত্বা সৃষ্টিকুলের অণুপরমাণুতে এমনকি সম্ভবপর প্রত্যেক কিছুতেই ব্যাপৃত।

সুতরাং হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজীগণের সত্ত্বার মধ্যে বিদ্যমান ও হাজির আছেন।

দলিল- ০৫

দুররে মুখতার’ হাশিয়ায়ে শামীর প্রথম খণ্ডের ৪৭৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

ويقصد بالفاظ التشهد الانشاء كانه يحى على الله ويسلم على نبيه نفسه لا الاخبار-
অর্থাৎ ‘নামাযে ‘তাশাহহুদ’ পাঠকালে মুসল্লিগণ উদ্দেশ্য নিবে ‘ইনশা’ এর ‘এখবারের’ নয় অর্থাৎ কথাগুলি যেন তিনি নিজেই বলেছেন,তিনি নিজেই যেন আপন প্রতিপালকের প্রতি শ্রদ্ধ নিবেদন করছেন এবং স্বয়ং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উদ্দেশ্য করে সালাম আরজ করছেন।
উক্ত এবারতের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করে ‘ফাতাওয়ায়ে শামীতে বলা হয়েছে-

اى لا يقصد الاخبار والحكاية عما وقع فى المعراج منه صلى الله عليه وسلم ومن ربه سبحانه ومن الملائكة عليهم السلام- 
অর্থাৎ ‘তাশাহহুদ’ পাঠের সময় নামাযির যেন এ নিয়ত না হয় যে, তিনি শুধুমাত্র মে’রাজের অলৌকিক ঘটনাটি স্মরণ করে সে সময়কার মহা প্রভু আল্লাহ, হুজুরপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ফেরেশতাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত কথোপকথনের বাক্যগুলো প্রকাশ করে যাচ্ছেন।বরং তার নিয়ত হবে কথাগুলো যেন তিনি নিজেই বলছেন।

স্বনামধন্য ফকিহগণের উপরিলিখিত ভাষ্য থেকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হলো যে,নামাযের তাশাহহুদে এ সালাম পেশ করাকালীন তা’জিমের সাথে একমাত্র হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি খেয়াল করতে হবে।অন্য কারো প্রতি নয়।

No comments:

Post a Comment